প্রশান্তি ডেক্স॥ গ্রীন লাইনের বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা কিস্তিতে ৫ লাখ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। তবে গত ২৫ জুন হাইকোর্টের দেওয়া এ আদেশের পরও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা রাসেল সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পা হারানো রাসেল সরকার হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাগো নিউজের কাছে এ তথ্য জানান।
এদিকে আইনজীবীর সঙ্গে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ রক্ষা না করায় তাদের পক্ষের আইনজীবী হিসেবে আর কাজ করতে চান না বলে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মো. ওজি উল্লাহ। আদালতে তিনি গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াতে অব্যাহতির আবেদন দিয়েছেন।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকার মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতেই হবে। তবে একসঙ্গে না দিয়ে ৯ কিস্তিতে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে পরিশোধ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।
গত ২৫ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ থেকে ক্ষতিপূরণের ৪৫ লাখ টাকা সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশ দেওয়ার পর গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ রাসেলের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি বলে প্রশান্তি নিউজকে নিশ্চিত করেন রাসেল। গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে রাসেল সরকার বলেন, ‘তারা (গ্রীন লাইন মালিক) প্রথম থেকেই এমন অবস্থা করছে। গত ২৫ জুলাই হাইকোর্ট আদেশ দেওয়ার পরও তারা আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার মনে হয় উচ্চ আদালতে থেকে আদেশ দেওয়ার পর কোনো মন্ত্রী-মিনিস্টারও এভাবে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করতে পারেন না। এ বিষয়ে কোর্ট ব্যবস্থা নিতে পারেন। জানি না কী হবে।’
আদালত আগামী রোববার (২১ জুলাই) এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন বলেও জানান পা হারানো রাসেল সরকার।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) এ বিষয়ে শুনানির নির্ধারিত দিনে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ওজি উল্লাহ নিজেকে গ্রীন লাইনের আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। এরপর গ্রীন লাইন ও রাসেলের বিষয়ে আদেশ ও পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ জুলাই (রোববার) দিন ঠিক করেন আদালত।
গ্রীন লাইন পরিবহনের বাস চাপায় পা হারানো রাসেল সরকারের ক্ষতিপূরণের রিটের ওপর শুনানিতে গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে গ্রীন লাইনের মালিকের পক্ষে আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন (পরে তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন)। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম এবং বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। অন্যদিকে ক্রাচে ভর করে আদালতে উপস্থিত হন পা হারানো রাসেল সরকার।
গত ২২ মে হাইকোর্ট নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির ওপর আদেশের জন্য গত (২৫ জুন) দিন ধার্য ছিল। সে দিন কোনো টাকা না দেওয়ায় ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা ৫ লাখ করে ৯ কিস্তিতে দিতে বলেন আদালত।
২৫ জুন আইনজীবী ওজি উল্লাহর কাছে আদালত জানতে চান, আপনারা কত টাকা দিয়েছেন? সেদিন আইনজীবী ওজি উল্লাহ বলেন, চিকিৎসা বাবদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছি। এ ছাড়াও ৫ লাখ টাকার চেকে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২২ মে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য ২৫ জুন দিন পর্যন্ত সময় দেন আদালত। কিন্তু গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করে সে দিন ক্ষতিপূরণের টাকা কমানোর জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন।
গত ২৫ জুলাই গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিকের পক্ষ আদালতে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ কামানো এবং কিস্তিতে পরিশোধের একটি আবেদন করে। আদালত টাকা কমানোর আর্জি নাকচ করে ৫ লাখ টাকা করে ৯ কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করতে বলেন। সেদিন শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের অর্থ হ্রাস করার কোনো সুযোগ নেই। কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করতে হবে।’
একই সঙ্গে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) শুনানির জন্য দিন নির্ধারিত করেন। নির্ধারিত দিনে আদালত আবার তা পিছিয়ে ২১ জুলাই দিন ঠিক করলেন।
গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় থাকেন। ওই ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।