নয়ন॥ যুদ্ধ যখন চরম পর্যায়ে তখন ডঃ সিরাজুল হক খান পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতের বেলা ফ্লাটের নীচের তলায় থাকতেন। সকালে আবার দোতলায় নিজের ফ্লাটে চলে যেতেন। ১৪ই ডিসেম্বর খুব ভোরে তিনি ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়লেন। একবার ওপরে নিজের ফ্লাটে গেলেন তারপর আবার নীচে নেমে এলেন। সে সময় তার নজরে পড়লো, একটু দূরে আল-বদর বাহিনীর কিছু লোক রুমাল দিয়ে এক ভদ্রলোকের চোখ বাঁধছে। সাথে সাথে তিনি ওপরে উঠে গেলেন। সবাইকে বললেন, ‘ওরা আমাদের এলাকায় ঢুকেছে। তোমরা সাবধানে থাকো।’ তাঁর স্ত্রী তখন তাঁর জন্য নিজের হাতে ঔষধ তৈরী করছেন। তিনি ডঃ খানকে ঔষধ খেতে ডাকলেন। জবাবে ডঃ খান ‘এসে খাবো’ বলে নীচের তলায় বোটানীর অধ্যাপক জনাব ইসমাইলের ড্রইংরুমে যেয়ে বসলেন। গল্প-গুজব করতে লাগলেন। এদিকে আল-বদর বাহিনী ওপর তলায় তাঁর ফ্লাটে এসে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, ‘এটা ডঃ সিরাজুল হকের বাসা?’
‘হ্যাঁ।’ ‘তিনি কোথায়?’ ‘নীচে গেছেন।’ ‘কোন বিভাগের অধ্যাপক তিনি?’ ‘শিক্ষা-গবেষণা কেন্দ্র।’ ‘হ্যাঁ, আমরা তাঁকেই খুঁজছি।’ এই বলে তারা ডঃ খানের ভাইকে নিয়ে ইসমাইল সাহেবের ড্রইংরুমে উপস্থিত হলো। ডঃ খানকে তাঁর নাম জিজ্ঞেস করলো। তারপর তাঁকে ঘর থেকে বাইরে এনে তাঁরই পকেটের রুমাল দিয়ে তাঁর চোখ বেঁধে অচেনা গন্তব্যের দিকে নিয়ে চললো। পরিবারের সবাই তাকিয়ে রইলো বিমূঢ় হয়ে।
ডঃ খান স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, নীচে থেকে এসে ঔষধ খাবেন। স্ত্রীর সাথে ঐ ছিলো তাঁর শেষ কথা। কিন্তু ঔষধ খেতে তিনি আর ফিরে আসেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র ৮ম খন্ড ৫০৩ নং পৃষ্ঠা থেকে বলছি, শিরোনামঃ হানাদার বাহিনীর সহযোগী আল-বদরদের হত্যার শিকার কয়েকজন, সূত্রঃ ১৯৭৩ সালের জাতীয় দিবসে সাপ্তাহিক বিচিত্রার বিশেষ সংখ্যা, সংগ্রহীত ছবিঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী ডঃ সিরাজুল হক খান। কম্পাইলারঃ জহির রায়হান।