আন্দোলন, অভিযান ও জনগণ

চলমান কতিপয় আন্দোলন এবং সরকারের নেয়া বিভিন্ন অভিযান এখন দৃশ্যমান। এই দুইয়ের মাঝখানে রয়েছে আমাদের জনগণ। এই দুই অভিযানকেই মানুষ সাধুবাদ জানাচ্ছে, জানিয়েছে, এবং এই অভিযান ও আন্দোলনের সুফল ঘরে তুলতে বা দেখতে অপেক্ষার প্রহর গুণছে। অভিযান পরিচালিত হচ্ছে অন্যায় এবং মিথ্যা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু এই অভিযান থেকেও কেউ কেউ রেহাই পেয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন অদৃশ্য কারণে। যা জনগণের মুখরোচক আলোচনায় প্রতিয়মান হচ্ছে। তবে আলোচনা যা-ই উঠে আসুক না কেন; সবই পিছনে ফেলে মানুষ এখন ঐ অভিযানের সফলতার মুখ দেখতে আগ্রহভরে অপেক্ষা করছে। তবে সরকার বা প্রশাসন নয় বরং মানুষ বিশ্বাস করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর। আর সেই বিশ্বাসেই মানুষ আস্থা রেখে শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে আসীণ করেছে। শেখ হাসিনার নেয়া যে কোন পদক্ষেপকেই মানুষ সাদরে গ্রহন করছে এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের এই অঘাধ বিশ্বাস ও নির্ভরতায় যেন ছেদ না পড়ে সেইদিকে লক্ষ্য রাখা আবশ্যক। মানুষের বিশ্বাসকে আরো বাড়িয়ে তুলার কাজে গতিশীলতা আনয়নও সময়ের দাবি। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে পথে হাটছেন তা সরকারে থেকে দলীয় প্রধানের আসনে থেকে এগিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। তবে বাস্তবতার নিরীখে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসকে পুজি করে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিনের মধ্যেও সহজে পরিণত হবে যদি সবকিছু ঠিক রেখে তিনি তাঁর পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যেতে পারেন।
বিভিন্ন সময় অভিযান সর্ম্পকে সরকারের বা দলের অতি কথকদের কথনের কারণে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় এবং জনমনে সন্দেহের বীজ বপিত হয় এমনকি সেই সন্দেহের সুযোগ নিয়ে একদল সুযোগ সন্ধানী জন অসন্তোষ সৃষ্টিতে সক্রিয়া ভুমিকা রাখে। যার তেজস্ক্রিয়তা থেকে মুক্ত করে স্বস্থির নি:শ্বাস নিতে আবার সেই নেত্রী ও আশা এবং ভরসারস্থল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই কাজ করতে হয় এবং জনগণকে আস্ব্যস্থ্য করতে হয়েছে বারংবার। তাই আমাদের অতি কথন এবং গতিপথ হারানো বিচ্যুত ব্যবহার ও শব্দচয়ন থেকে বিরত থাকা সময়ের দাবি। যিনি দায়িত্ব নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছেন এবং দৃশ্যমান রেখেছেন তাকেই বলতে দেয়া উচিত এবং তাঁর কাজটুকু পরিকল্পনানুযায়ী করার সুযোগ দেয়া সকলের দায়িত্ব। আভিযান পরিচালনায় বিভিন্ন মোড় এবং বিভিন্ন গতিপথ পাল্টানোর যে দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাই হচ্ছে নেতার নের্তৃত্বের ক্যারেশমেটিক গুণ এবং এই গুণের দ্বারা গুণান্বিত হয়েই আজ তিনি পৃথীবির বিখ্যাতদের বিখ্যাত হয়েছেন। তাই জনগণ, নেতা, নেত্রী, রাজনীতিবীদ, সরকারের এবং দলের লোকজন এমনকি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতরা আন্দাজ নির্ভর কথাবার্তা ও লিখা এমনকি সংবাদ পঠন থেকে এই সময়ে বিরত থাকা যুগের, সময়ের এবং বাস্তবতার উর্বর দাবি। তাই এই দাবিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যার যার দায়িত্ব পালন করা অতি জরুরী। সময় কখনো ক্ষমা করে না বরং সময় প্রতিশোধ নেয়। তাই সময়কে ব্যবহারে হিসেবী হউন এবং সময়ের প্রতিশোধ পরায়নতা থেকে নিজেকে, পরিবারকে, সমাজকে ও সর্বোপরি দেশকে রক্ষা করতে স্ব স্ব ভুমিকা পালন করুন।
আমরা দেখছি বুয়েট আন্দোল, আরো দেখেছি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌক্তিক ও অযৌক্তিক আন্দোলন। সবই হচ্ছে পদত্যাগ অথবা অপছন্দের কারণে বলির পাঠা বানানোর আন্দোলন। ক্রিকেট নিয়েও আন্দোলন দেখেছি এবং এখনও সরব রয়েছে কিছু ক্রিয়েটিয় দুবৃত্ত্বায়নের আন্দোলন। তবে সবই কিন্তু আন্দোলন। এরই মধ্যে আবার ছাত্র রাজনীতি বন্দেরও ত্রিভুজাকৃতির আন্দোলন দেখেছি এমনকি কিছু আন্দোলনের ফল হিসেবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধও হয়েছে। তবে প্রশ্ন হলো ঐ আন্দোলনকারীরা কি থেমেছে; না থামেনি বরং তাদের আন্দোলন চালিয়েই যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন: কিসের ভিত্তিতে বা কিসের উপর ভর করে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে? যদি ছাত্র রাজনীতি বন্ধই হয়ে থাকে তাহলে তারা কিভাবে আন্দোলনে রয়েছে। রাজনীতি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেতো আন্দোলনও বন্ধ হওয়ার কথা ছিল। যা দেখে মনে হচ্ছে একমুখে দুই কথা বলে শুধু ফায়দা লুটার চেষ্টায় কতিপয় স্বার্থান্বেষি মহল নিভানো আগুণে ঘি এবং পানি ঢেলে যাচ্ছে। যেখানো ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হচ্ছে এবং সকল দাবি-দাওয়া পুরণ হচ্ছে সেখানে কিসের আন্দোলন এবং কার প্রয়োজনে ঐ আন্দোলন এখন চলমান এটাঁ জাতির বিবেকের প্রশ্ন। তবে আন্দোলন কিন্তু রাজনীতির একটি অংশ এবং রাজনীতি বিহীন কোন আন্দোলন হয় না এবং হবেও না। তবে যারা রাজনীতি বন্দের আন্দোলন করেছেন তারা কি ভেবে দেখেছেন তারা কিসের উপর দারিয়ে এখনোও আন্দোলনে রয়েছেন? হ্যা ছাত্র রাজনীতি থাকবে এবং তা থেকেই বাংলার ভাগ্যকাশে উদিত হবে আরেক নতুন সূয্য। তবে দলীয় রাজনীতির ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। ভিন্ন মত ও পথের মানুষগুলো একত্রিত হয়ে শিক্ষা এবং এর পরিবেশ ও যোগানের তবে ছাত্র রাজনীতির চর্চা অব্যাহত রাখতে পারে। কোনক্রমে জাতীয় রাজনীতির বিজ বপন করা যাবে না বা বিভিন্ন দলের ব্যানারে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেয়া যাবে না। এমন চিন্তা করা যেতে পারে তবে কোন ক্রমেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না।
শিক্ষক আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করবে এঁটা জাতির জন্য দু:ভাগ্যজনক। আজকের ছাত্রটিই আগামীর শিক্ষক। তাই শিক্ষকের প্রতি শ্রদ্ধাশিল হয়ে প্রাপ্য সম্মান দেয়া ও নেয়া উভয়েরই কর্তব্য। যেখানে ছাত্র এবং শিক্ষকের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বা পিতা-সন্তানের সম্পর্ক সেখানে কিসের আন্দোলন। এই সম্পর্কগুলো পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি। তবে জাগতিকতার মোখে অন্ধ হলে এইসকল আন্দোলন কামনা করা প্রত্যাশিত। যুগের চাহিদার দাবির সাথে ঐসকল আন্দোলন এখন বেমানান। তবে শিক্ষক এবং ছাত্রের মধ্যে যে দুরুত্ব তৈরী হয়েছে তা ঘুছাতে উভয়কেই কাজ করতে হবে। তৃতীয় কেহ এসে হারানো সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে দেয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট নেই। তবে শিক্ষা ব্যবস্থার অধপতন বা অবক্ষয় আমাদের আগামীর আশা-আখাঙ্খাকে ধুলিসাৎ করার যে লক্ষন দৃশ্যমান তা আর সামনে এগুতে দেয়া ঠিক হবে বলে বিবেকবান এবং সচেতন মানুষদের মনে হয় না। এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আন্দোলনের ফলে লোভাতুর নেতিবাচক মানুষগুলো উৎসাহিত হয়ে আগামী দিনে সরকার পতনেরও ডাক দিতে পারে। যা কারোরই কাম্য নয়। তাই সময় থাকতে সময়কে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করুন। ঐসকল আন্দোলনে বরফ ঢেলে নিয়ন্ত্রন করুণ। ঐখানে ঘি এবং পানি দিতে যাওয়া লোকদের চিহ্নিত করে চিরতরে বিতারিত করুন।
শুধুই যে ছাত্ররা আন্দোলন করে তা কিন্তু নয় বরং এখানে শিক্ষকরাও বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে রাষ্ট্রের বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নামক অস্ত্রটি ব্যবহার করে থাকেন। কখনো কখনো ঐ আন্দোলন আবার অনশনে পরিণত হয়ে দৃষ্টিকটু মা মানবিক বিপর্যয়ের আকার ধারণ করেন। তাই প্রতিটি আন্দোলনের পুর্বে এবং পরে এর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করে আগামীর করণীয় ঠিক করা এখন সময়ের দাবি। একই বিষয় নিয়ে পুরোনো কায়দায় আন্দোলন এবং বিক্ষোভ ও অনশন কার্যক্রম বন্ধ করা জরুরী। আরেক দিকে চাকুরী স্থায়ী করণের আন্দোলনও দেখেছি। তবে তার কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কারণ সরকার যথেষ্ট সচেতন এবং আন্তরিক জনগণের কল্যাণের তরে। তাই চাকুরী হারানোর কোন সুযোগ নেই, অধিকার খর্ব হওয়ারও কোন সুযোগ নেই কারন ন্যায় বিচারের ভারসাম্য এখনও প্রজ্জ্বলিত রয়েছেন। তাই আমাদের আন্দোলনমুখী না হয়ে সৃজনশীল এবং কর্মমূখী হয়ে সরকারের কাজে গতিশীলতা আনয়নই একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত। ক্রিকেটারদের আন্দোলন এবং তৎপরবর্তী ঘটনা প্রবাহে অযৌক্তিক দাবি সম্বলিত আন্দোলন এমনকি মিডিয়াজুরে মুখরোচক/ রসাত্মক এবং ব্যঙাত্মক প্রচারনা। সবই কিন্তু নেতিবাচক এবং অজ্ঞতার ছাপস্বরূপ গতিপ্রবাহ মাত্র। তাই এই সব নেতিবাচক এবং জুজুর জোয়ারে গ্যাঁ না ভাসিয়ে বাস্তবতার নিরীখে এগিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অবশ্যই অবিশম্বাবী এবং উজ্জ্বল নক্ষত্রখচিত দৃষ্টান্ত। তবে এই দৃষ্টানে আবেগ নয় বিবেক এবং বাস্তবতা দিয়েই মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহারোপযোগী করে এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা সাধারণ জনগণ এখন আন্দোলন অভিযান এবং গুজব নির্ভর অগ্রযাত্রায় গ্যাঁ না ভাসিয়ে বাস্তবতার নীরিখে আগামীর কল্যাণের তরে এগিয়ে যেতে চাই। তবে প্রধানমন্ত্রী যে রাস্তায় আমাদেরকে নিয়ে যেতে চান আমরা সেই রাস্তায় উনার সঙ্গে যেতে চায়। এতে আমাদের যত কষ্টই হউকনা কেন আমরা তা অন্তত বঙ্গবন্ধুর কন্যার সঙ্গে দেশের প্রয়োজনে করতে রাজি। জয় হউক আমাদের সকলের।

Leave a Reply

Your email address will not be published.