সাংবাদিকতা ও ঝুঁকি

ঝুঁকি শব্দটি সকল ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এটি একটি বিপরীত শব্দ হিসেবে পরিচিত। ঝুঁকি শব্দটি বেঁচে আছে শুধু সাংবাদিকতার জন্য। সাংবাদিক অথবা প্রকাশক ও সম্পাদক এই তিনের সমন্বয়েই ঝুঁকির প্রাণ। কথা প্রসঙ্গে এক যুগ্নসচিব- বর্তমানে পূর্ণ সচিব মহোদয় বলেছিলেন যে, সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়েছেন ভাল তবে নিশ্চিত করে জেনে নিন যে, কারাগারের সঙ্গে আপনার এখন স্থায়ী সম্পর্ক হয়ে গেল; এক পা কারাগারে আর এক পা এখন বাহিরে। হয়েছেও তাই জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতাও হলো ঐ সম্পদক এবং প্রকাশক হওয়ার কারণেই। তবে ঐ প্রথম অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক শিখেছি এবং জেনেছি যে, সম্পাদক এবং প্রকাশক এর ভুমিকা এবং করনীয় ও দায়িত্ব সম্পর্কে। যদিও ঐ সম্পাদক এবং প্রকাশক খ্যাতি শুধু নিজের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যায় করা ছাড়া আর কিছুই নয় বরং দলীয় প্রচারের ফলে স্বীয় শান্তি অনুভব করাও একটি কারণ বটে।
আমার লিখা-লিখি করার অভিজ্ঞতা ছিল এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় আমার লিখা ছাপিয়েছে আর ব্যাক্তিগতভাবে দৈনিক মুক্তকন্ঠ, সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ, সাপ্তাহিক অপরাধ পত্র, ফ্রাইডে উইকলি রিভিউ পত্রিকায় উপদেষ্টা এবং উপ-সম্পাদক হিসেবে লিখা ছাপিয়েছি নিয়মিত। তবে ঐ সময়ের নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইতিবাচকতার পক্ষে নিদেন বিনামূল্যে লিখা ছাপা এবং সরকারের উন্নয়ন প্রচারের প্রসারকল্পে এমনকি দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের নিমিত্ত্বে ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে সাপ্তাহিক প্রশান্তির যাত্রা শুরু করেছিলাম। যার সমস্ত অর্থই ব্যায় হয় আমার চাকুরীর কষ্টার্জিত ঘামঝারানো বুদ্ধিবিক্রি ও গ্যাঁ খাটার বিনিময়ে অর্জিত অর্থে। কখনো কখনো আবার লোন করে ঐ পত্রিকাটির প্রাণ টিকিয়ে রেখেছি। ব্যাক্তিগতভাবে বা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কারো কাছ থেকে কোন বিজ্ঞাপন বা অর্থনৈতিক সহায়তা এখন পর্যন্ত নেয়নি এমনকি নেয়ার কোন সুযোগও আসেনি। তবে অনেক পাঠক স্ব ইচ্ছায় টাকা দিতে চেয়েছে কিন্তু সম্মান ও শ্রদ্ধা করে ওদের কাছ থেকেও কোন অনুদান বা মাসিক বিল নেয়া হয়নি। তারপরও এই পত্রিকাটিকে অনেক ভালবেসে আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান রেখেছি। কিন্তু দু:ভার্গ্য হলো ঐ ভালবাসার ধন এই পত্রিকার মাধ্যমেই আমাকে একমাস পনের দিন কারাবাস করে জামিন নিয়ে বেড় হয়ে আসতে হয়েছিল। যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ এবং স্মরনীয় অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। আর তাও আবার অন্যের করা নিউজ এর সুত্র ধরে।
প্রসঙ্গক্রমে একটু আলোকপাতে যাই। বিষয়টি ছিল বেসিস নির্বাচন কেন্দ্রীক। আমি বেসিস মেম্বার এবং তৎসময়ের ষ্ট্যান্ডিং কমিটির একজন শক্তিশালী সদস্য ছিলাম। তবে বেসিস সূত্রধরে আমি সকলের সঙ্গেই পরিচিত ছিলাম। এমনি করে একজন হলো দেলোয়ার হুসেন ফারুক। আর তিনি প্রায়াই আমাকে ফোন বা ম্যাসেঞ্জারে এমনকি ওনার কয়েকটি নামে বেনামে ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বিভিন্ন নিউজ পত্রিকায় প্রকাশ করত। একদিন ফাহিম ভাইয়ের সঙ্গে এক ঘটনায় জনাব মস্তুফা জব্বার (আর প্রিয় বন্ধু বা সহকর্মী) ভাই এর ইনবক্সে কিছু লিখতে বললো এবং আমার পত্রিকায় একটি নিউজ দিতে বললো। আমি বিনয়ের সঙ্গে তাকে বললাম আমি এখন ব্যস্ত এবং আমার অপারেটর ছুটিতে তাই আমি আপনাকে পাসওয়ার্ডটি দিয়ে দেই আপনি এই নিউজটি আপলোড করে দিয়েন। আর করলামও তাই। কিন্তু এর পরে আর আমি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করিনি। আর আমার পত্রিকার ওয়েব পেইজটি এত পরিচিতি নয় যে, মানুষ দেখবে। আমি শুধু সম্পাদকিয় লিখি আর সরকারের উন্নয়ন প্রচার করি এর বাইরে আর কিছুই নয়। তবে বেসিস নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দুইটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। সেই সময়ে আমি আমার অপারেটরকে বললাম তুমি বেসিস কেন্দ্রীক কোন সংবাদ আসলে ছাপিয়ে দিয়ো। কারন সবাই আমার পরিচিত তাই কাউকেই বাদ দেয়া যাবে না। এই সুযোগে দেলোয়ার হোসেন ফারুক সাহেব বিভিন্ন সুযোগ নিয়েছেন অন্যের নাম ব্যবহার করে। যা আমি জানতাম না। তবে নির্বাচনের দিন রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে একটি নিউজ দিতে আর তথন আমি অপারগতা প্রকাশ করি এবং বলি পত্রিকাটি নিয়মানুযায়ী আগামী শনিবারে বের হবে তাই আপনি পাঠান আমি শনিবারে দিয়ে দিব। তিনি বলেন আজকেই দিয়ে দিন আমি বলালাম এইটি আজকে কোনভাবেই যায়না। বরং নিয়মানুযায় আগামী কাল (শনিবার) সকালে আমি প্রকাশ করব। তিনি আমাকে হোয়াটস্এ্যাপে ডকুমেন্ট পাঠান এবং তাজুল ইসলাম নয়ন নামের আইডিতে কিছু লিখা পাঠান। যা আমি আমার মোবাই ও কম্পিউটারে সংরক্ষাণ করি পরের দিন ছাপানোর জন্য। তিনি এও বলেন যে, জব্বার ভাই বলেছে আজকে রাতেই এই নিউজটি ছাপাতে। কিন্তু তাতেও আমি অপারগতা প্রকাশ করি, যা আমার ঐ দিনের ফোন কল লিষ্টে আছে এবং রেকর্ড দেখলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। শেষান্তে তিনি ঐ নিউজটি আমার পত্রিকায় ভুল তারিখ দিয়ে প্রকাশ করেন যা আমার অজান্তেই ঘটে। কিন্তু পরে নির্বাচনের দিন আমি আমার এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরে ক্ষমা চেয়ে নিই এবং দু:খ প্রকাশ করে পত্রিকায় একটি নিউজ ছাপাই। ঐ নিউজটিতে নির্বাচনে জেতার জন্য কৌশলে অনেক মিথ্যাও বলেছে। কিন্তু এই মিথ্যা বলাটা তাদের ঠিক হয়নি।
পরে ঐ দেলোয়ার হোসেন ফারুক দ্বারা প্রচারিত এবং প্রকাশিত সংবাদের কারণেই আমাকে কারাবাস করতে হয়েছিল। আর আমার এবং আমার স্ত্রীকে জরিয়ে মামলা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনে যা খুবই দু:খজনক। তবে আমার স্ত্রী এই ব্যাপারে সদ্য ভুমিষ্ট হওয়া শিশু মাত্র যার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই পত্রিকার সঙ্গে কিন্তু বর্তমানে তিনি আসামী। আমি সম্পাদক এবং প্রকাশক তাই আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে এবং আমি দু:খ প্রকাশ করেছি এবং ক্ষমাও চেয়েছি। ফারুকের ফোন কললিষ্ট এবং পাঠানো হোয়াটস্এ্যাপ প্রমানস্বরূপ আমার কাছে রয়েছে। আর বকি প্রমানগুলি সে অমার অবর্তমানে নষ্ট করে দিয়েছে। এখন বক্তব্য হলো যারা মামলা করে এবং যারা মামলা যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে তারাই উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু ফারুক গংরা কি ক্ষতিগ্রস্থ ! না বরং তারা বহাল তবিয়তে তাদের ক্ষতিকারক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই বলতে হচ্ছে সম্পাদক এবং প্রকাশক ও সাংবাদিক এই তিনেই ঝুঁকি কিন্তু মিথ্যা প্রবঞ্চক এবং স্বার্থবাদী মানুষগুলোর কোনপ্রকার সাজা বা শিক্ষার ব্যবস্থা নেই আমাদের বর্তমান সমাজে এবং আইনে। মজার বিষয় হলো যে, এখন আর ঐ নেতিবাচক মনের অধিকারীরা কিছু লিখে না এমনকি ঐ ভদ্র মহিলা যিনাকে আমি আপা সম্বোধন করি এবং ওনার সঙ্গে এখনও আমার খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে; মজার ব্যাপার হলো ওনি আমার খুব কাছের আত্মিয়। তারপরও ঐ মামলাটি হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। তবে আপা জানত না যে ঐ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আমি। আমি নিজেও আপার সমর্থক ও একজন ভোটার। কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাস আমার ভাগ্যেই ঘটলো; আর ঘটলো আমারই প্রীয় আপার অজানা মামলায়। যাক সবই এখন আপার হাতে। তবে এযাবতৎকাল দেখলাম যে, সম্পাদক ও প্রকাশক হিসেবে আরো অনেকেই মামলা এবং হামলার মুখোমুখি হচ্ছে এবং ক্ষমা চেয়ে পার পাচ্ছে কিন্তু আমার ক্ষেত্রেই শুধু ভিন্নতা ঘটল।
আমি এই সম্পদকীয়র মাধ্যমে আবারো বলতে চাই আমি দু:খিত এবং ঘৃণা করি ঐ সংবাদটিকে। তারপরেও আপাকে বলব ক্ষমা করে দিয়ে আগামীতে আমরা একসঙ্গে ঐ দুষ্টচক্রকে কিভাবে আইনের আওতায় আনা যায় এমনকি বেসিসকে কিভাবে ঐ চক্রের হাত থেকে রক্ষা করা যায় তা নিয়ে কাজ করি এবং তৃধা বিভক্ত বেসিসকে একত্রিত করে ব্যবসায়ীদের কল্যাণে নিয়োজিত করি। আমি আপনারা সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। দল আমাদের, সরকার আমাদের আর আপনিও আমাদের তাই আমার আর বলার কিছু নেই তবে দাবি আছে আপনাদের সকলের প্রতি। তাই আমাদের ঐক্য এবং আগামীর সমৃদ্ধিকল্পে একযোগে কাজ করতে এবং বেসিসকে দুবৃত্যায়নের হাত থেকে রেহাই করতে আপনার ভুমিকা এবং প্রয়োজনীয়তা উপলব্দি করছি। অনেক চেষ্টা করেও আপনাকে কথাগুলো বলার সুযোগ পাচ্ছি না। তবে কথা হয় এবং হবে সামনে এই বিশ^াস আছে এমনকি সবকিছু শুনে আপনি আমাকে বিশ^াস করবেন ও আগের ন্যায় ভালও বাসবেন। এই ছোটভাইটিকে একটি সুযোগ দিন আপনার সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য। দুইটি উপহার রয়েছে আপনার জন্য যা আমি কারাগার থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছি। সেগুলি দেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সুযোগের অভাবে আমার কাছেই রয়েগেছে। আজও আমি ঐ সাংবাদিকতা এবং ঝুঁকিতেই রয়েছি। তবে আল্লাহ এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত করবে এই বিশ^াস আমার রয়েছে। কারন তাঁর কাছে কোনকিছুই অসম্ভব নয় এবং তিনিই একমাত্র সকল অসম্ভবকে সম্ববে পরিণত করেছেন। আল্লাহ আমাদেরকে সবাইকে তাঁর কল্যাণের তরে ব্যবহার করুক…আমীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.