সন্তান নিঃসঙ্গতা-বিষন্নতায় রয়েছে কি-না খেয়াল রাখুন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রশান্তি ডেক্স ॥ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলনের সমাপনী দিনে বক্তৃতা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ছেলেমেয়েরা কে কী করছে সেদিকে প্রত্যেক অভিভাবককে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘নিঃসঙ্গতা, একাকিত্ব ও বিষণ্নতা আমাদের সন্তানদের বিপথে যাওয়ার প্রধান কারণ বলে আমি মনে করি। জঙ্গিবাদের পথে যেন পা না বাড়ায় সেজন্য আমাদের ছেলেমেয়েদের একাকিত্ব-বিষণ্নতা থেকে বের করে বিভিন্ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যুবসমাজ অত্যন্ত মেধাবী। যাদের নিয়ে আমরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখি, গর্ব করি। যাদের নিয়ে আমরা চিন্তা করি ২০৪০-২০৫০ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত দেশ। সেই সন্তানরা যেন নষ্ট না হয়ে যায়, বিলীন হয়ে না যায়, সে জন্য আমাদের করার অনেক কিছু আছে। সেদিকে প্রত্যেক অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।’ গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’-এর সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস-জঙ্গি নির্মূলে বর্তমান বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এর মূল কারণটা কী? আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটনে সব ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এর ফলে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোটামুটি নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে চলে এসেছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছিলেন। জনগণকে সাথে নিয়ে আমাদের পুলিশর্-যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদকে শক্ত হাতে দমন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে কাজটি সুন্দরভাবে করছে বলে আমরা নিরাপদ জায়গাটাতে এসেছি।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাংলাদেশের মতো একটি শান্তিপ্রিয় দেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ আসবে এটা বিশ্বাস করতে পারি না। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাস দেখুন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের জায়গা আমাদের দেশে ছিল না। হ্যাঁ যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়েছে নানা সময়, নানা জাতি আমাদের দেশে এসেছে। কিন্তু এ উপত্যকায়, এই শান্তির দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদের কাহিনি ছিল না। আমরা হঠাৎ করে দেখলাম, ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা, জাপানি নাগরিক যিনি কিনা বাংলাদেশের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন তাকে হত্যা করা হলো। আমরা দেখলাম শিয়া মসজিদে ইমামকে হত্যা করার দৃশ্য। দেখলাম খ্রিস্টান দুই ধর্মযাজককে হত্যাপ্রচেষ্টা। দেখলাম বান্দরবানে বৌদ্ধভিক্ষু, পঞ্চগড়ে ইসকন মন্দিরে হত্যার দৃশ্যও। এগুলো যদি সব এক করেন, আমরা অ্যানালাইসিস করে দেখেছি, প্রত্যেকটি ঘটনায় জড়িত ছিল দেশীয় সন্ত্রাসী। একটা উদ্দেশ্য নিয়ে, বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য সবগুলোই সন্ত্রাসীদের একত্রিত কর্মকান্ড।’ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হলি আর্টিসানে ২২ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে হত্যা করা হলো। এই হত্যার দৃশ্য দেখার পরই একটি ওয়েবসাইট থেকে বলা হলো, জড়িতরা একটি বিশেষ জায়গার সন্ত্রাসী। অথচ এই সন্ত্রাসীদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বর্ডারে কোনো সম্পর্ক নেই, তাহলে আসে কোত্থেকে? এমন সময়ই প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ডাক দিলেন যে যেখানে আছেন ঘুরে দাঁড়াতে। মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, পেশাজীবী কৃষক-শ্রমিক, শিক্ষিত যুবক-বৃদ্ধ সবাই ডাকে সাড়া দিয়ে জানালেন কেউ সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ চান না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমি মনে করি শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কার্যক্রম দিয়ে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে আমরা সবাই মিলে কাজ করলেই এই জঙ্গিবাদকে আমরা মোকাবিলা করতে পারব। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মনিরুল ইসলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.