প্রশান্তি ডেক্স ॥ সরব কংগ্রেস, গণতন্ত্রের ওপর হামলা : রাহুল-প্রিয়াঙ্কা বিজেপিকে ভোট দেওয়ার খেসারত : চিদাম্বরম নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামের গৌয়াহাটিতে বিক্ষোভ ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় গত সোমবার পাস হওয়া নাগরিকত্ব বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে বিক্ষোভে অশান্ত হয়ে উঠেছে আসাম-ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বিলের বিরোধিতা করে গত মঙ্গলবার অঞ্চলটিতে ১১ ঘণ্টার বন্ধ বা ধর্মঘট পালন করেছে ‘নর্থ-ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন’, ‘অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’সহ একাধিক ছাত্র সংগঠন। যাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে সরব ছিল হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। সংবাদসূত্র : এনডিটিভি, এবিপি নিউজ, আউটলুক ইনডিয়া গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই আসামের জাড়হাটের রাজপথে নামতে শুরু করে বিক্ষুব্ধ জনতা। জোরহাট, বঙ্গাইগাঁওয়ে বিক্ষোভ থেকে এই বিলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে আন্দোলনকারীরা। অস্থিরতার আশঙ্কায় এদিন আসামের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা বাতিল করা হয়। রাজ্যের দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। তবুও দমানো যায়নি বিক্ষোভকারীদের। পুলিশের ব্যাপক তৎপরতা উপেক্ষা করেই এদিন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আসাম ও ত্রিপুরার সংগঠনগুলোর ডাকা বন্ধ কঠোরভাবে পালিত হয়। দুই রাজ্যের বহু জায়গায় দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। কোথাও কোথাও রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে নিজেদের ক্ষোভের জানান দেয় আন্দোলনকারীরা। ত্রিপুরায় সড়ক, রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। সড়কপথ, রেলপথ বন্ধ; সব মিলিয়ে স্তব্ধ ছিল ত্রিপুরা। মণিপুর, অরুণাচলের রাজপথেও নামে বহু মানুষ। আন্দোলনকারীরা জানায়, গত (বুধবার) রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়ে গেলে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুরা পাঁচ বছর থাকলেই ভারতের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। মূলত এ কারণেই প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। এদিকে লোকসভায় বিলের র্তীব বিরোধিতা করলেও তা আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, মুসলিম লিগ বা সিপিএমসহ নানা বিরোধী দলের এমপিরা। কিন্তু রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই সরকারের। ফলে বিরোধীদের আশা, সেখানে আটকে দেওয়া সম্ভব হবে সিএবি। পার্লামেন্ট সূত্রে খবর, রাজ্যসভায় বিলটি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে বিরোধিতা সত্ত্বেও লোকসভার পর রাজ্যসভায় এই বিল পাস হয়ে গেলে তা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আইনি লড়াই হবে বলে জানিয়েছেন আসামের কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ। সরব কংগ্রেস, গণতন্ত্রের ওপর হামলা বললেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে এবার পার্লামেন্টের বাইরেও সুর চড়িয়েছে কংগ্রেস। দলের এমপি রাহুল গান্ধী গত মঙ্গলবার টুইটারে বলেন, ‘এটা গণতন্ত্রের ওপর হামলা।’ এছাড়া দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর টুইট, ‘পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য সরকারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করব।’ লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও যে এই বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ করবে, দলের তরফে তার ইঙ্গিত আগেই মিলেছে। এদিন রাহুল আরও বলেন, ‘এই বিল ভারতীয় গণতন্ত্রের ওপর হামলা। যারাই বিলকে সমর্থন করছে, দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে তারা।’ রাজ্যসভায় বিলটি পেশের আগে রাহুলের এই টুইটবিরোধী দলগুলোর প্রতি বার্তা বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। অন্যদিকে, শিবসেনা এই বিল সমর্থন করায় তাদের প্রতিও বার্তা দিতে চেয়েছেন বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও বলেছেন, ‘লোকসভায় বিলটি পাসের সঙ্গে সঙ্গেই দেশের বিরোধী মতের কণ্ঠরোধ ও সংকীর্ণ মানসিকতার জয় হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছেন। সেই স্বাধীনতায় সমানাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার অর্জিত হয়েছিল। আমাদের সংবিধান, নাগরিকত্ব, ঐক্যবদ্ধ ভারতের স্বপ্ন আমাদের সবার। পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র এবং যে ভিত্তির ওপর দেশ তৈরি হয়েছিল, তা ধ্বংস করার যে চক্রান্ত করছে সরকার, আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করব।’ বিজেপিকে ভোট দেওয়ার খেসারত নাগরিকত্ব বিল : চিদাম্বরম লোকসভা নির্বাচনে অবিবেচকের মতো বিজেপিকে ভোট দেওয়ার খেসারত দিতে হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে এভাবেই আক্রমণ শানিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। এই বিলকে ‘স্পষ্টতই অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন চিদাম্বরম। গত মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘একটি দলকে এমন অবিবেচকের মতো নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিলে তার খেসারত এভাবেই দিতে হয়, যা দিয়ে রাষ্ট্র এবং জনগণের ইচ্ছাকে পদদলিত করার জন্য ব্যবহার করে ওই দল।’ বিরোধীদের অভিযোগ, লোকসভার পর রাজ্যসভায় এই বিল পাস হলে তা হবে এ দেশের প্রথম বিল, যা ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ করবে। এই বিল সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থি বলেই মত বিরোধীসহ দেশের নাগরিক সমাজের একাংশের। ওই ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্র কখনই নাগরিককে সমানাধিকার বা আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করবে না। এবং কোনো নাগরিকের ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কখনই তার সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবহার করবে না। তবে এই সংশোধনী বিলে বলা হয়েছে, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের জেরে বিতারিত হয়ে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী শরণার্থীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নতুন বিলে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে এবং সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা বাদ দেওয়া হয়েছে।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post