প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ ভারতজুড়ে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনীর বিরুদ্ধে যত আন্দোলনই গড়ে উঠুক সরকার এ বিষয়ে পিছু হটবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি প্রধান অমিত শাহ। গত মঙ্গলবার রাজধানী নয়াদিল্লির দ্বারকায় এক জনসভায় এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
অমিত শাহ বলেন, প্রতিবেশী দেশের নিপীড়িত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য যা প্রয়োজন তার সবই করবে কেন্দ্রীয় সরকার, যা কিছু হোক না কেন, মোদি সরকার এই শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়া ও ভারতীয় হিসেবে গর্বিত হয়ে বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনে ২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে যাওয়া অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এ আইনের বিরোধিতা করেছে বিরোধী দলসহ মানবাধিকার কর্মীরা। কয়েক দিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে দিল্লি, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে।
আইনটির যারা বিরোধিতা করছেন তাদের দাবি, ভারতে এ আইন ধর্মীয়ভাবে বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের পরিপন্থী। নির্দিষ্ট একটি ধর্মকে বাদ দিয়ে এমন আইন প্রয়োগ করা হলে তা হবে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিক্ষোভকারীরা বলছে, তাদের রাজ্য অনুপ্রবেশকারীতে পূর্ণ করে তুলবে এই আইন।
সম্প্রতি অমিত শাহ বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে প্রথম প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ডাকে পশ্চিমবঙ্গও আন্দোলন শুরু করে। এছাড়া জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর গোটা ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস আইনটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এমন অভিযোগ করে অমিত শাহ বলে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী ও মুসলিম ভাইবোনদের বলতে চাই, আপনাদের ভয়ের কিছু নেই। কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না। ওয়েবসাইটে গিয়ে আইনটি সবাই পড়বেন। আমরা কারও সঙ্গে অন্যায় করছি না।’
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে যে অমুসলিম সংখ্যালঘুরা ‘ধর্মীয় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়াই এই আইনের উদ্দেশ্য। যদিও নেহরু-লিয়াকত চুক্তি মেনে এই মানুষগুলোকে পাকিস্তানের সুরক্ষা দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। তাহলে কোথায় যাবে এই শরণার্থীরা?’
এদিকে পশ্চিবঙ্গের সঙ্গে সীমানা লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খন্ডে এক নির্বাচনী প্রচারণায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘আমি কংগ্রেস ও তাদের জোটসঙ্গীদের উন্মক্ত চ্যালেঞ্জ দিতে চাই। যদি তাদের সাহস থাকে, তাহলে তাদের প্রকাশ্যে ঘোষণা করা উচিত, প্রত্যেক পাকিস্তানিকেই ভারতীয় নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত তারা।
ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে নতুন আইন তৈরি করা নিয়ে বিক্ষোভে আসামে অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছে। আইন অনুযায়ী, ২০১৫ সালের আগে প্রতিবেশী দেশ থেকে ‘ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার’ হয়ে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।