শুরু হয়েছে নির্বাচনী হাওয়ার প্রতাপে কাপুনি। সিটি নির্বাচনের হাওয়া এখন সবত্র। তবে এই যেন পোষ্টারে এবং মাইকিং ও স্লোগানে মুখরিত। দেখতে শুনতে ভালই লাগে তবে জনমনে এর তেমন উষ্ণতা অনুভত হয়নি। সাধারণ জনগণ যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় জনগণ এখন নির্বাচন বিমুখতার দিকে দৌঁড়ে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ নির্বাচন চায় না বরং চায় গতিশীল কাজ, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু আকঁড়ে ধরে সামনে এগিয়ে যেতে। এই মনোভাবের কারণ অনুসন্ধান না করলেও বোঝা যাচ্ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লাদিয়ে টিকে থাকার সংগ্রামে এখন বিপন্ন মানুষ শেষ ভরসা নিয়ে সকল প্রতিকুলতা ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ব্যস্ত। নির্বাচন, সরকার, প্রশাসন এমনকি কে ক্ষমতায় আর কে ক্ষমতার বাইরে তা ভাবার সময় মানুষের নেই। যেখানে মানুষ কাজ-কর্ম এবং নেতিবাচকতার সঙ্গে সংগ্রামে লিপ্ত সেখানে আনন্দঘন নির্বাচনী আমেজে কোন উত্তাপ বা অংশগ্রহন বা ফিরে তাকানোর ফুরসত বা সময় নেই। তবে এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষ স্বল্প সময়ের কাজে লিপ্ত হয়েছে, যাতে তারা আগামীর সংসার চালানোর যোগান আহরণ করতে পারে ও করে যাচ্ছে। আর তাই মাঠ দাপিয়ে জানান দিচ্ছে নির্বাচন এবং মার্কা ও দলের পক্ষে; যা সাধারণে বিচ্ছিন্ন। তবে কেউ কেউ আবার পুজি বিনিয়োগও করে যাচ্ছে আগামীর জন্য যাতে আগামীতে আরো বেশী আয়ের বা ক্ষমতা ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারে। সবই কিন্তু চলছে অর্থ এবং বিত্তের ও ক্ষমতার লোভে।
আগে যা হয়ত বিনে পয়সায় এবং মানুষের মনের খোরাক থেকে আর আজ তা হচ্ছে অর্থ ও বিত্তের ব্যবহারে এমনকি আগামীর সুযোগ ও ক্ষমতার লোভে। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস এই সময়ে দেখতেও কষ্ট লাগে। তবে অনেকেই আমার লিখার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবেন কিন্তু আসল বাস্তবতাই হলো এই। তারপরও বলব দল মত নির্বিশেষে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এবং এগিয়ে যাবে। আর এতে শরীক হতে নির্লোভভাবে কাজ করতে সকলের প্রতি আহবান রইল। দলের পক্ষে, দেশের পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে কাজ করুন এগিয়ে যান আগামীর তরে শেখ হাসিনার উন্নয়ন তরে এবং বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে। ঐক্যের কোন বিকল্প নেই আর ঐক্যে যেন কোন কারণে ফাটল না ধরে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা অতিব জরুরী। কারণ ঐক্য যত দূর্বল হবে দল ও সরকার ততই দুর্বল হবে এবং অবশেষে জাতির ভাগ্যাকাশে কালোমেঘ নেমে আসবে। সেই কালো মেঘ দেখার পূর্বেই ব্যবস্থা নিতে দলীয় কর্তাব্যক্তিদের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছিা।
এত অর্জন যেন ম্লান হয়ে না যায় সেইদিকে দৃষ্টিনিবন্ধ করার জন্য করজোরে মিনতি করছি। আর অতিরিক্ত কথাবলা থেকে সকলকে বিরত থাকারও বিনিত অনুরোধ জানাচ্ছি। অতিরিক্ত আশা জাগানোর কোন প্রয়োজন নেই। কারণ জনগণ যা বোঝার এবং যা ভাবার তা ঠিকই ভেবে নিয়েছেন এমনকি অতিত কর্মকান্ড থেকে সবই পাকাপোক্তভাবে মাপকাঠি দিয়ে মেপে রেখেছেন। আজ আর নতুন করে কথার ফুলঝুড়ি বা আশার বানি এমনকি উন্নয়নের গল্প শোনানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করানো সম্ভব নয়। তাই গঠনমূলক এমনকি সুচিন্তনীয় মতামত এমনকি শান্তি ও স্থিতিশীলতা, জবাবদিহিতা আর সেবক ও সেবার মনোভাবের সমন্বয়কে গুরুত্বারূপ দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যুগের দাবি। আর একে অপরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা উচিত। কারণ জনগণ এখন আর ঐ পুরোনো কাদা ছোড়াছুড়ি পছন্দ করেন না বরং এতে হিতে বিপরীতই হবে। সকল নেতিবাচকতা পরিহার করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করুন। দল ভিন্ন হলেও দেশ এবং উন্নয়ন এক এই ভাবনা নিয়ে স্ব স্ব অবস্থান থেকে দলীয়, ব্যক্তিগত এবং সামষ্টিক বক্তব্য দিয়ে এগিয়ে যান। মানুষ মানুষের জন্য, দল এবং সরকারও মানুষের জন্য তাই দিনের শেষে ঐ ঐক্যের একটি জায়গায় সকলের অবস্থান সুনিশ্চিত করুন এবং আগামীর দৃষ্টান্তকে আরো ইতিবাচক স্বচ্ছতার আবরণের বৃদ্ধিকল্পে মানুষপটে প্রস্ফুটিত করুন।
ধর্মের প্রতি মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস এবং অনুভুতি জাগ্রত রয়েছে এবং থাকবে। কিন্তু আজকাল ধর্মকে নিয়ে যে ব্যবসা শুরু হয়েছে তার একটি শেষ পরিণতি আশু কাম্য। লাল সালুর গল্পের ব্যপ্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু এর লাগাম টানার এখন আর কেউ নেই; এটাই একটি অশনি শংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু এই শান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করে যাচ্ছে বাংলার স্ব ও সুশিক্ষীত শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ। সমাজকে ও ধর্মকে বিভক্তির এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে যা আর সহ্য এবং বরদাস্ত করার উপায় বা কাতারে নেই। দলা-দলী, হানা-হানি, মারা-মারি এখন ইসলাম ধর্মের মধ্যে স্থান দখল করে আছে। শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ যেখানে সবাইকে শান্তির পতাকাতলে একত্রিত করবেন সেখানে তারা অশান্তির আগুনে ঝালিয়ে পুড়িয়ে ছাড় খার করে দিয়ে যাচ্ছেন। এক আলেম আরেক আলেমকে গালাগালি দিচ্ছেন এমনকি ইসলাম থেকে বিতারিত করছেন অথবা দল বারি করার লিপ্সায় সাধারণ জনগণকে পুজি করে এগিয়ে যাচ্ছেন। এই অসম খেলা বন্ধ করা জরুরী। আলেম সমাজকে এক হয়ে দিনের পথে মানুষকে হেদায়তের লক্ষ্যে ওয়াজ নসিহত করতে আসার সুব্যবস্থা করুন। নতুবা এইভাবে ফেতনা সৃষ্টির ব্যবস্থা বন্ধ করুন। লোকালয়ে প্রকাশ্যে একজন আরেকজনকে উক্তক্ত করছেন; তা বন্ধ কল্পে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ব্যবহার আশু প্রয়োজন। যে আলেন সমাজ এখন ওয়াজ ও মাহফিলের মাধ্যমে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন সেই আয়ের উপর ট্যাক্স এবং এই আয়কে ইসলামে বৈধ বলার কোন সুযোগ আছে কিনা তা ভাবার জন্য সাধারণ জনগণ এমনকি সরকারকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) যে ধর্ম প্রচার করেছেন এবং তৎপরবর্তীতে তাঁর সাহাবারা যে ধর্ম প্রচার করেছেন এমনকি যেভাবে প্রচার করেছেন এখন কি ঠিক সেভাবেই প্রচারিত হচ্ছে নাকি নতুনত্ব এনে ব্যবসার সম্প্রসারণ করেছে তারও একটি বিহিত ব্যবস্থা রাষ্ট্রের করা উচিত। হেলিকপ্টার, প্রাডো গাড়ি এবং মোটা অংকের টাকা অল্প কয়েক ঘন্টায় হাতিয়ে নেয়া কি ইসলামে জায়েজ নাকি দিনের বানি বিনামূল্যের দান সেটাও বিবেচনায় নেয়া এখন সময়ের দাবি। নতুবা সামনে রণক্ষেত্রের রণতরী আইয়্যামে জাহেলিয়াত জুগের থেকেও ভয়ঙ্কর হবে বলে বিশ্বাস।
ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল ওয়াজি মাওলানারা এখন আর বয়স এবং জ্ঞানের ও আধ্যাতিক সাধনার এমনকি সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আত্মিক সর্ম্পকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। বরং তারা নিজেরা বিভিন্নভাবে নিজেদেরকে সাজিয়ে তুলেছেন যেন অর্থ ও যশ এবং খ্যাতির বিরম্বনায় ভাসমান থাকেন এবং অর্থের পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থান করতে পারেন। এই মনোভাব এবং এই কাজের জন্য আইন এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো দরকার। আর যদি নবী করিম (সঃ) এর যুগের বা তৎপরবর্তীতে যেভাবে ধর্ম প্রচার হয়ে আসছে সেইভাবে নিজ খরচে এবং বিনামূল্যে ধর্ম প্রচার হয় এবং ধর্মকে বাণিজ্যিক ব্যবহার থেকে রক্ষা করা যায় তাহলে ধর্ম এবং মানুষ ও সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পৃথিবীতে স্থায়ী রূপ লাভ করবে। সকল নেতিবাচকতা এবং শয়তানের শয়তানি বন্ধ হবে। আর এই কাজে আমার আপনার সকলেরই অংশগ্রহন এমনকি সরকারের যোগপোযোগী ব্যবস্থা আশু কাম্য। সময় এখনি এই সকল ফ্যাতনা / ফ্যাসাদ বন্ধের ; শান্তির ধর্ম ইসলামকে রক্ষার এবং দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার নিশ্চিত নিশ্চয়তা বিধানের।
সময়ের হালচালে সামনে যুক্ত হবে আরো নুতন নুতন সংযোজন যা দৃশ্যমান এবং আগামীর জন্য ক্ষতিকর। আমরা আগামীতে আরো নুতন বিষয়ের আলোকে এই হালচালকে সুসজ্জ্বিত করে জনগণের দৃষ্টিসীমায় উপস্থিত করতে চাই। আসুন আমরা সচেতন হয়ে অন্যকে সচেতন হতে সহায়তা করি। কোন হিংসা নয়, কোন বিবাদ এবং ঘৃণা নয় বরং ভালবাসায় পূর্ন হয়ে ক্ষমায় ক্ষমাশীল হয়ে আগামীর জন্য কাজ করি।