প্রশান্তি ডেক্স॥ নেপালি নাগরিকের দেহে করোনা ভইরাস সংক্রামিত হওয়ায় ভারতের পাশাপাশি উদ্বিগ্নতা ও দুশ্চিন্তা বাড়ছে দেশে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে এবার বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করলো সরকার। দেশের বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ করতে হলে দেখাতে হবে বিশেষ প্রমাণপত্র।
ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাস রোধে নৌ, স্থল ও বিমানবন্দরে স্ক্যানার বসানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর ফলে করোনা আক্রান্তকে দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাস ঘটিত শ্বাসকষ্টের রোগে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। ২ হাজারের বেশি আক্রান্ত। চিন থেকে বিভিন্ন দেশে দ্রুত ছড়াচ্ছে এই রোগ ।
প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ থেকে চীনে আসা-যাওয়া করছে। এছাড়া অন যেসব দেশে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়েছে, সেই দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।
ফলে এখনও কেউ আক্রান্ত না হলেও বাংলাদেশ এ ভাইরাস থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে জরুরি সহায়তার জন্য চারটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে- ০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫।
অধিদফতরের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) সেমিনার কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।
সংবাদ সম্মেলনে সিডিসির পরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, যেহেতু চীনের সঙ্গে আমাদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে এবং বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভ্রমণ করতে যায়, তাই এ ক্ষেত্রে কিছুটা ঝুঁকি রয়েছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এ ভাইরাসের ঝুঁকি খুবই সামান্য। এছাড়া এর সংক্রমণকে জরুরি অবস্থা
হিসেবে ঘোষণা করা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসেছে সংস্থাটি। ইতিমধ্যে রোগটি চীনসহ থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং ও আমেরিকায় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে অধ্যাপক সানিয়া বলেন, প্রথমে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি, নিউমোনিয়া এবং সর্বশেষে কিডনি ফেইলিওরের মাধ্যমে মৃত্যুবরণ করে।
আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা আগে থেকেই অবহিত ছিলাম। তাই ইতিমধ্যে সব ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়েছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য ডেস্কে সতর্কতা জোরদার করা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের সাতটি প্রবেশপথে করোনা ভাইরাস স্ক্রিনিং কার্যক্রম চালু হয়েছে। নতুন এ ভাইরাস সম্পর্কে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রতিরোধের জন্য রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত প্রচার কার্যক্রম নেয়া হয়েছে।
এ ভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য রেফারেল হাসপাতাল হিসেবে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডও করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত রোগপ্রতিরোধী পোশাক মজুদ রাখা হয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড প্রস্তুত রয়েছে। বিমানবন্দরের ভেতরে আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য ক্রুদের মাধ্যমে চীন ও আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের মধ্যে হেলথ ডিক্লারেশন ফর্ম ও প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরম দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, যে কোনও বন্দর দিয়ে যাত্রী আসলে স্ক্যানারের মাধ্যমে তাকে আমরা শনাক্ত করতে পারব। তার শরীরের তাপমাত্রার মাধ্যমে।
যারা বিমানে করে আসবেন তাদের একটা ফরম দেওয়া হবে, যে ফরম পূরণ করতে হবে। একটি কার্ডও সঙ্গে নিয়ে যাবে। পরবর্তীকালে যদি সে অসুস্থ হয়ে পড়ে, যাতে তাকে আমরা শনাক্ত করতে পারি।