প্রশান্তি ডেক্স॥ দেশের শীর্ষ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের এক গৃহবধূকে নির্মম নির্যাতনের ছবি, ভিডিও ও নানান ডকুমেন্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। ওই নারী তাঁর নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে এসব ডকুমেন্ট গত বুধবার সন্ধ্যায় প্রকাশ করার পর বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে এই নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।‘আমার মৃত্যুর জন্য পুরো আকিজ গ্রুপ দায়ী থাকবে’ শিরোনামে পোস্ট করা দীর্ঘ স্ট্যাটাস পড়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এই অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদ করেছেন। ফেসবুকে প্রকাশ করা তাঁর স্ট্যাটাসটি এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো-আমার মৃত্যুর জন্য পুরো আকিজ গ্রুপ দায়ী থাকবে আমি নাজিয়া আহম্মেদ। আমার স্বামী শেখ নাফিজ উদ্দিন ফাহিম। ফাহিম আকিজ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক শেখ আকিজ উদ্দিনের মেজো ছেলে শেখ মমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরার ছেলে। দীর্ঘদিন আমি তাদের নির্যাতনের শিকার। পুরো পরিবার তাদের কাজের লোকদের দিয়ে পর্যন্ত আমাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। নির্যাতনের নানান ছবি, ভিডিও, হত্যার হুমকির অডিও, হাসপাতালের সার্টিফিকেট, জিডি ও মামলার কপি সবই আমার কাছে আছে। কিছু প্রমাণ এখানে দিলাম। গত ৭ মাস হলো আমি তাদের পরিবারে নেই। আমার স্বামীর পরিবার থেকে আলাদা করে রেখেছিল। তারা প্রথম দিকে কিছু খরচ দিত। এখন পুরোপুরি বন্ধ। বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে। বাচ্চার খাবার খাওয়াতে পারছি না। এর মধ্যেই হঠাৎ শুনতে পেলাম আমার স্বামী নাকি আমাকে ডিভোর্সও দিয়েছে। এখন তারা আমাকে আর আমার ছেলে মুহাম্মাদকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছে। কয়েকবার বাসায় এসে চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেছেন। জানি, আমি এসবের কোনো বিচার পাবো না। আমাকেও একদিন নুসরাত বা আবরারের মত হত্যা করা হবে। তবে তার আগে আমি কিছু সত্য বলে যেতে চাই আপনাদের কাছে। আমি বিচার চেয়ে পাইনি। টাকার কাছে হেরে গেছি। আপনারা পারলে আমার বিচার করে দেবেন। এভাবে লোমহর্ষক নির্যাতন করার পরেও তারা বেঁচে যাবে? আজ আমার সন্তানকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বাচ্চার খাবার দুধ, ডাক্তার থেকে বঞ্চিত করছে। আমি বুটিক দিয়ে সংগ্রাম করে চুপচাপ চলছি। আমাকে মারা হতো ডিভোর্স করার জন্য। বাজে কথা রটান হত। আমাকে মারার ভিডিও রেকর্ড আছে, হুমকি দেয়ার অডিও রেকর্ড আছে, নানানভাবে নির্যাতন করার ছবি আছে। আজ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আকুল আবেদন। আমার কেসটা যেন খতিয়ে দেখা হয়। আমার ছেলে ও আমি যে কোন সময় তাদের মাধ্যমে খুন হতে পারি। কারা আমাকে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে। মিথ্যা জিডি করে। মুহাম্মদকে তুলে নিতে চেয়েছে বহুবার। আমার হাজবেন্ড আমাকে মারধর করে সেই ভিডিও আছে। সব আমি সহ্য করছি। আমার আর আমার সন্তানের মৃত্যুর জন্য পুরো আকিজ গ্রুপ দায়ী থাকবে। তাদের সাথে আমার আমার চাচা শ্বশুড় (আদ দ্বীন হাসপাতালের মালিক) মহিউদ্দিন, কাজের বুয়া জুলেখা, পিতল রেজা, পিয়ন হায়দারও আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে। আমাকে আর কত মারবি? দলে দলে এসে আমাকে মেরে ফেলে লাশ করে দিয়ে যা। আমার মৃত্যুর পরে হয়ত কাঁদবে সবাই। বলবে সবাই- ইস কেমন করে করল এরা? লাশ হয়ে বিচার পেতে হয় আমার সোনার দেশে।শেখ মুজিবর রহমান আজ এত বছর পর তার মৃত্যুর রায় পেয়েছেন। সিড়ির উপরে ছিল তার লাশ। রাসেল ছিল অবুঝ শিশু। কি ছিল তার দোষ? কোথায় তার জীবন নিল হিংস্র কিছু মানুষ। আমিও হয়ত পড়ে থাকব এমন কোন জমিনে। আর আমার ছেলে মুহাম্মদও রাসেলের মত অকালে প্রাণটা হারাবে। কোথায় পাব বিচার? কোথায় গেল আবরার? কোথায় গেল নুসরাত? কোথায় যাবে নির্যাতন সহ্যকরা মানুষগুলো? বিচার চাই, বিচার চাই কিন্তু কোথায় পাবো বিচার? কে করবে বিচার? ১১ গ নারী শিশুর ৮ নম্বর কক্ষ থেকে চিৎকার করে বলছি শুনছেন কি এই মায়ের বুকের ভেতরের চিৎকার? আল্লাহর বিচার থেকে পার কি পাবেন? ৭ মাস আমার সন্তান মাছ-মাংস খায় না। জানেন কি আপনি? তার বাবা দাদা বাসা ভাড়া দেয় না ৭ মাস। মাথার ছাদ পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়। বাবা হয়ে বাচ্চার দুধ বন্ধ করে দিয়ে বিদেশ পারি দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমি মা। আমি ফেলব কোথায় আমার সোনার টুকরাকে?১১ গ ৩০ নারী শিশু কি বিচার করলেন? রবিবার রায় হবে বলে আজ দিলেন; তাও লুকিয়ে? কোটি টাকার বিনিময় ৭ জনকে দিলেন খালাস। এত তদন্ত, এত সাক্ষী এত প্রমাণ তাহলে কেন? মেরে ফেলার জন্য কি বাঁচিয়ে রেখেছেন আমাদের?
আদ-দ্বীন হাসপাতালের মালিক মহিউদ্দিন তার হাসপাতালে রোগীদের আটকে রাখার ভিডিও সবাই দেখেছেন। কিন্তু কেউ কি তার বিচার পেয়েছেন? এরা নাকি এই সমাজের মানুষ। আজ আমি বিচার চাই জনগণের কাছে, সমাজের সকল মানুষের কাছে, আমাদের মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে; যিনি সত্যিকারের বিচার করেন। অন্যয়কে প্রশ্রয় দেননি কখনও। তার কাছে এক মেয়ে, এক মা, এক অসহায় নারী হয়ে বিচার চাই। নাটক সাজিয়ে ধানমন্ডি পুলিশ দিয়ে এডিসি কাফিকে দিয়ে তৌকির এসআইকে দিয়ে আমাকে অনেক অত্যাচার করা হয়েছে। আমি তার বিচার চাই।
আরও আছে রহস্য। সবই আমার কাছে আছে। এরা কেমন কি করে, কতটা মহিউদ্দিন, মমিন উদ্দিন, আরজুমান আরা সিদ্দিকি করে। কাল আমাকে তাদের জিএম ইসলামকে দিয়ে হুমকি দিয়েছে। এবার আমাকে মেরে ফেলার প্লান করছে। এরপর আমার ছেলে লিস্টে। আমি ফেসবুকে লিখলে তারা আমার ফেসবুক বন্ধ করবে। আমার ভাই-বোনরা যারা যারা পারো সবাই আমাকে নির্যাতন করার ছবি ও লেখা সব গ্রুপে শেয়ার দিয়ে দাও। টাকা বড়া না, জনগণের শক্তি বড়? এদের বোঝা উচিত। যে যত পার শেয়ার কর। যাতে তারা এসব ডকুমেন্ট মুছতে না পারে। পরকীয়া করার জন্য আমার স্বামী ফাহিমের চরম শাস্তি দাবি করছি। ৫ বছর আমার লাইফ নষ্ট করেছে। বাচ্চাকে মারার জন্য ফাহিম লোক পাঠিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে সেটার সত্যতা পেয়েছে। বাসার ম্যানেজার টাকা খেয়ে এসব লোকদের আমার ফ্ল্যাটে যেতে আটকাত না। তার ফোন নম্বর এন্ট্রি খাতায় লিখে নাই। খাতায় সবারটা আছে, আমাকে যে মারতে এসেছিল তারটা নাই। তাও পুলিশ বের করছে। গুলশান পুলিশকে আমার সালাম। ওরা আমাকে সাহায্য করেছে। এখন আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমাকে বাঁচান প্লীজ।