আফসানা হক অরীন॥ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, না জেনে গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করে পরে সরকার বা অর্থমন্ত্রীকে দোষ দেয়া চলবে না। রোববার (০৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভবনের উদ্বোন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ২০১৩ সালের ২৪ নভেম্বর এই ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ভবনটি দৃষ্টিনন্দন মন্তব্য করে তিনি আশা করছেন এই ভবনে কর্মীরা সুন্দর পরিবেশে কাজ করতে পারবেন।
বর্তমান সরকারের আমলে পুঁজিবাজার ধস অন্যতম একটি বড় ঘটনা। ২০১০ সালের শেষ দিকে এই ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২০ লাখেরও বেশি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী। সব টাকা-পয়সা হারিয়ে একাধিক বিনিয়োগকারী আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। গত ছয় বছরেও পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়নি। যদিও এই ধসের পর সরকার পুঁজিবাজারে সংস্কারমূলক বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার উন্নত অর্থনীতি গড়ে তোলার অন্যতম শর্ত। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে পুঁজিবাজারের অবদান ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করতে শিল্প অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের অন্যতম উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারের শক্তিশালী অবস্থান একান্ত কাম্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজার যেন আরও বিকশিত হতে পারে সে জন্য সব সময় আমরা সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে রেখেছি। একটি স্থিতিশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক পুঁজিবাজার গড়ে তুলতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’
শেখ হাসিনা জানান, তালিকাভুক্ত কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আছে শেয়ারবাজারে লেনদেনে কারচুপি ও অনিয়ম শনাক্ত করতে যথাযথ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদান করা, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকায় একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, পুঁজিবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সহায়তার জন্য ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইপিওতে ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ, আর্থিক প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য ফিনানশিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট প্রণয়ন প্রভৃতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইপিও প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য আইন করা হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক লেনদেন চালু হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা সহজে লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য পাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। সরকারের এসব পদক্ষেপে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পেরেছে। তিনি বলেন, ‘জনগণের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং সঞ্চিত অর্থের সঠিক বিনিয়োগ করতে পারার সক্ষমতা অর্জনে বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগ কীভাবে করবেন, কোথায় করবেন, এটা জানা একান্তভাবে দরকার।’
বিনিয়োগকারীদেরকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির চরিত্র হচ্ছে হুজুগে মাতা। আমরা হুজুগে মেতে এমন করে ফেলি, এরপর সব কিছু হারিয়ে হায় হায় করি। সেটা যাতে না হয় তার জন্য বিনিয়োগ শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী করার আগে সেই কোম্পানির সার্বিক তথ্য জানার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘কোনো তথ্য নেবেন না, যেখানে সেখানে বিনিয়োগ করে তারপর সব হারিয়ে সব দোষ সরকারের, সব দোষ অর্থমন্ত্রীর-এটা যেন না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি গুজব এবং একটা সাধারণ ধারণার ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগ করেন এবং তার জন্য কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন, সেখানে কার দোষ? যিনি করবেন তার। এ জন্য আমি বারবার বলবো, যারাই বিনিয়োগ করবেন তারা অবশ্যই কোন কোম্পানিতে করছেন, তাদের আর্থিক অবস্থাটা কী, তাদের কী কী সক্ষমতা আছে সেই তথ্য নিয়েই তারা করবেন। কারণ ঝুঁকি তাদেরই নিতে হবে। এটা মাথায় রাখতে হবে।’