প্রশান্তি ডেক্স॥।সারা বিশ্ব এখন করোনা ভয়ে স্বব্ধ। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তদের সংখ্যা। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। হাসপাতালগুলোতে যুদ্ধ ময়দানের অবস্থা বিরাজ করছে। স্রোতের মতো আসছে কোভিড-১৯ রোগী। কোথাও তিলধারণের ঠাঁই নেই। ফ্লোরে বা মেঝেতেও আর জায়গা হচ্ছে না। বারান্দাতেও উপচেপয়া ভিড়। সেখানেই দেয়া হচ্ছে চিকিৎসা। একসঙ্গে এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার-চিকিৎসক-নাসরা। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক বাবা শুনলেন তার পাশের বেডের রোগীর মৃত্যু চিৎকার, কান্না। মৃত্যুর সময় পরিবারের কেউ পাশে ছিল না ওই রোগীর। দুই ঘণ্টার বেশি চিৎকার, কান্নার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন গুরুতর অসুস্থ ওই রোগী। ক্রেইগ ফারলে-জোনস (৪৩) কোভিড -১৯ এ আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে কাটিয়েছে। এসময় অধিকাংশ সময়ে তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি তার বাগদত্তা লরা উইলসনকে (৪১), টেক্সট লিখেছিলেন যে, মারা যাওয়ার আগে লোকটি চিৎকার করে বলছিলেন কেন তিনি একটা উইল লিখেননি। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের টেমসাইড জেনারেল হাসপাতালে ৬০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তির মারা যাওয়ার আগে ক্রেইগ তার বিছানায় শুয়ে শুয়ে ওই লোকটির কথা শুনছিলেন। এখন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ক্রেইগ। বাইরে এসে হৃদয় বিদারক সেই দৃশ্যের বর্ণনা করে ক্রেইগ জনসাধারণকে প্রিয়জনকে ঘরে ধরে রাখার জন্য অনুরোধ করছেন। যাতে এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা আর না হয়। সফটওয়্যার ও বিপণন সংস্থার পরিচালক ক্রেইগকে রোববার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে যখন করোনা সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তখন তিনি সুস্থ এবং ভাল ছিলেন, কোনও প্রাক-উপসর্গও ছিল না। গ্রেটার ম্যানচেস্টার হাইডে ক্রেইগ তার নিজ বাড়িতে ফিরে আসার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ওয়াডের প্রত্যেককেই মৃত্যুর মতো মনে হয়েছিল, তবে আমার বিছানায় থাকা লোকটি যার বয়স প্রায় ৬৫ বা ৭০ বছর, লোকটি খুব বেশি কথা বলতেন এবং অধিকাংশ সময় অক্সিজেন ছাড়াই থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন। পরে সেদিন আমি দেখতে পেলাম যে তিনি শ্বাস নিতে লড়াই করছেন এবং আতঙ্কিত হতে শুরু করেছেন। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম যে সে কষ্ট পাচ্ছে। আমি নার্সদের ডেকে বলেছি কিন্তু তারা তাকে শান্ত করতে পারেননি। হঠাৎ লোকটির অবস্থা বদলে গিয়েছিল। তার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছিল। তাকে বাঁচানোর সব আশাই শেষ হয়ে গিয়েছিল। নাসরা লোকটিকে শান্ত করার জন্য কিছু একটা দিয়েছিল এবং তার বাচ্চাদের ডাকল, কারণ এটি সম্ভবত তার শেষ রাত ছিল। তার বাচ্চারা মাস্ক এবং গাউন পরে এসে বাবাকে বিদায় জানাতে পেরেছিল। তবে তারপরেও তিনি আরও কয়েক ঘণ্টা বেঁচে ছিলেন এবং মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। আমি যতদিন বেঁচে থাকি লোকটির শেষ ওই দুই ঘণ্টার কথা ভুলবো না। তিনি চিৎকার করছিলেন, শ্বাস নিতে লড়াই করার সময় তার পরিবারের সদস্যদের নাম ধরে ডাকছিলেন আর কাঁদছিলেন। ক্রেইগ বলছিলেন, লোকটির এমন কষ্ট দেখে আমি নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমি নার্সদের বারবার ডাকছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে বলেছিল যে তার জন্য আর কিছুই করার নেই। আমি তার শ্বাসকষ্ট শুনতে পেয়েছি, মৃত্যুর ধড়ফড়ানি শুনেছি। তিনি চিৎকার করে পরিবারের সদস্যদের ডাকতে থাকলে এবং কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে সব কিছু শেষ হয়ে গেল। হাসপাতালের ডাক্তার ও নাসরা সম্ভাব্য সকল চেষ্টাই করেছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চেষ্টা করলেও কোন ফলাফল আসে না। আমি এমনভাবে কোনও কুকুরের মৃত্যুও জীবনে দেখতে চাই না, বলছিলেন ক্রেইগ।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post