লকডাউন বনাম চাহিদা

লকডাউন শব্দটি এখন পৃথিবীর বহুল ব্যবহৃত এবং পরিচিত একটি শব্দ। যাকে শব্দের হিরোও বলা চলে। এই শব্দটি অদৃশ্য করোনা নামক শক্তিশালী ও কার্যকরী হিরোকেও হার মানিয়েছে। তবে গ্রামে-গঞ্জের শিক্ষিত ও অশিক্ষীত মানুষজনও এখন লকডাউন এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছে এবং লকডাউনকে সঙ্গি হিসেবে বেছে নিয়েছে এমনকি বসবাসও করে যাচ্ছে। তাই লকডাউন এর যেমন চাহিদা রয়েছে ঠিক তেমনি করে মানুষেরও চাহিদা রয়েছে। এই দুই চাহিদা সমন্বয় কখনো হবে না কারণ দুটির -ই চাহিদা ভিন্ন এব বিপরিতমূখী।
লকডাউন উদ্ভাবনকারীগণ এবং ব্যবহারকারীগন বলে যাচ্ছেন, ঘরে থাকুন, একা থাকুন এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন…ইত্যাদি ইত্যাদি। এই নিয়মের বেড়াজালেই লকডাউক আবদ্ধ। আর এই নিয়মকে বাস্তবায়িত করতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন সরকার বাহিনীগুলো। কিন্তু বিপরিত দিকে দেখা যাচ্ছে চাহিদা বলছে ঘর থেকে বের হয়ে আসুন, মানুষের কাছে যান, মানুষের জন্য এবং নিজের জন্য কিছু একটা করুন। খাবার, ঔষধ এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় যোগানের চাহিদাগুলি পুরণ করুন। পাশাপাশি চোখের এবং মনের চাহিদাগুলিও পুরন করুন। আবার কেউ কেউ অকারণে লকডাউন এবং চাহিদার যোগান উপভোগ করতে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে নিরব ঘাতক ডায়াবেটিকস্ এর রোগীরাও ছোটছোটি করতে দেখা যাচ্ছে। তাই সকলের চাহিদার যোগান যোগাতে এখন দিশেহারা আমাদের প্রিয় সেবাদানকারী সংস্থার সদস্যগুলো; যেমন পুলিশ, আর্মি, র‌্যাব ও ডাক্তারদ্বয়। তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট না করে বরং উৎসাহ এবং সাহস ও সহযোগীতা দিয়ে মনোবল জাগ্রত রেখে জাতির সেবায় নিয়োজিত থাকতে আল্লহর দরবারে মোনাজাত করি। সকল বালা মুছিবত থেকে রক্ষা করে তাদের সেবায় পুজিত হউক মহাসংকটের দিশাহারা জাতি।
এরই মাঝে আবার ত্রাণ চুরির হিরিকেও ব্যস্ত একদল বিবেকহীন এবং মৃত্যু ডর-ভয়হীন মানুষগুলো। যারা মানুষের তালিকা থেকে বহু আগেই বিচ্যুত হয়ে নরখাদকে পরিণত হয়েছে। তবে আকৃতি এবং প্রকৃতিতে এমনকি দৈহিক গঠনেও মানুষের সঙ্গে মিল রয়েছে বটে কিন্তু স্বভাব এবং আচরণ ও কার্যক্রমেই ঘটেছে বিভ্রাট। তাই এই করোনা যুগেও তাদের মনোভাবের কোন পরিবর্তন ঘটেনি এমনকি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দৃষ্টান্তেও নেই। তবে করোনার সঙ্গে হাত মিলিয়েই যেন তারা চলছে। করোনা যেমন মানুষের ক্ষতির চেষ্টায় লিপ্ত ঠিক তেমনি করে ঐসকল মানুষগুলিও একই চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তবে করোনা এবং ঐ নরখাদক মানুষগুলি আজ জাতির বিশেষ করে আশরাফুল মাখলুকাতের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে। তাই সৃষ্টিকর্তার নিকট আবেদন ও নিবেদন এই যে, তিনি যেন করোনাকে পৃথিবী থেকে বিতারিত করেন এবং ঐ মানুষগুলিকে ক্ষমা করে মানুষের কাতারে সামিল করান।
আরেক দিক হলো কোয়ারেন্টাইন নামক স্বেচ্ছায় কারাবাস। তবে এখানেও ঘটেছে বিভ্রাট। কেউ মানছেন না এই নিময়কে। লুকায়ে লুকায়ে করোনাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমনাগমন করার ক্ষেত্রে। করোনাকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। মানুষের এই মতি বিভ্রাট কেন ঘটেছে তা জানার ও বুঝার সময় এখনো আসেনি। তবে যখন আসবে তখন জানার এবং বোঝার কেউ থাকবে বলে মনে হয় না। তাই ঐ উম্মাদ লোকদের দেখা মাত্র আটক করে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টান কেন্দ্রে পাঠানো হউক। এটিও লকডাউন এর চাহিদার একটি।
করোনার চাহিদা এবং মানুষের চাহিদার যে মিল রয়েছে তা দুরীভুত করতে লকডাউন কার্যকরী ভুমিকা রাখুক। কিন্তু লকডাউনকে কার্যকর হতে সহযোগীতা করার মানুষিকতায় পরিপূর্ণ করুক আমাদের মানব মনের উবর জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেচনা, বিবেক এবং মস্তিষ্ককে। আমাদের চেতনায় ফিরে আসুক সুবচন এব্ং সুস্থ্য পরিবেশের আবহ। আমরা লকডাউনকে পুরোপুরি কার্যকর করতে একযোগে কাজ করি এবং করোনাকে বাংলাদেশ থেকে বিতারিত করি। চাহিদার যোগানের ক্ষেত্রে লকডাউনের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করি। সবাই ভাল থাকুন এবং সরকারের নির্দেশনা ১০০শতভাগ মেনে সামনে অগ্রসর হতে প্রতিক্ষায় থাকুন। জয় হবেই এবং গতিশীলতা নিয়ে এগিয়ে যাবেনই। আল্লাহ আপনার এবং আমার সকলের সঙ্গেই রয়েছেন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.