সরকারি জমি দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি নির্মাণ

প্রশান্তি ডেক্স ॥ লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে বাহার উদ্দিন ওরফে সিএনজি বাহার নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা বাড়ি (পাকাভবন) নির্মাণ করেছে। ওই জমিতে থাকা খাল অবৈধভাবে ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা।

এদিকে পৌরসভায় পাকাভবন নির্মাণ করতে হলে অনুমতির নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতা বাহার তা নেয়নি। ভাঙন থেকে রক্ষা করতে সড়কের পাশের ডোবায় প্যালাসাইটিং বরাদ্দ থাকলেও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি সুবিধামতো স্থানে তা নির্মাণ করান।

বাহার রায়পুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা থেকে টোল আদায় করেন। তিনি রায়পুর পৌর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ও লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদরের একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের প্রতিনিধি কাজী জামশেদ কবির বাক্কি বিল্লাহর ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, বাক্কি বিল্লাহ’র দাপট দেখিয়েই বাহার সড়কে চাঁদাবাজিসহ অবৈধভাবে সরকারি ও মালিকানাধীন জমি জোরপূর্বক দখল করে আসছে।

ভূমি কার্যালয় সূত্র জানায়, পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরোয়া মৌজায় (পুরাতন দাগ নম্বর-৪২৭০, নতুন নম্বর-২৭১৮) সরকারি প্রায় ১৫ শতাংশ খাস জমি রয়েছে। সেখানে সড়কের পাশেই খালের নালা ছিল। কিন্তু বাহার ভবন নির্মাণের জন্য ওই খালটি অবৈধভাবে ভরাট করে। খবর পেয়ে ভূমি কর্মকর্তা প্রহলাদ মজুমদার ঘটনাস্থল সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণ করতে নিষেধ করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতা বাক্কি বিল্লাহসহ সমন্বয় করা হয়েছে সেখানে ভবন নির্মাণ করা হবে না। কিন্তু করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে সরকারি জমিতেই বাহার একতলা ভবন নির্মাণ করেছে।

অন্যদিকে পৌরসভা থেকে ভবন নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে পৌরসভার বরাদ্দের সড়কের পাশের প্যালাসাইটিং খমতার দাপট দেখিয়ে নিজ সুবিধায় ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে এসব ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা বাহার কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তথ্য সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থল গেলে সাংবাদিকদের দেখে পালিয়ে যান তিনি।

তবে বাহারের ভাই মনির হোসেন জানান, পুরো ভবনটি সরকারি জমিতে পড়েনি। শুধু বারান্দাটি পড়েছে। প্যালাসাইটিংটি পৌরসভা থেকেই বরাদ্দ দিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ভূমি কর্মকর্তা প্রহলাদ মজুমদার জানান, তিনি বাহারকে ভবন নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিলেন। ওই সময় ভবনের কাজ করা হবে না বলে এমপির প্রতিনিধি বাক্কি বিল্লাহসহ সমন্বয় করা হয়েছিল। লকডাউনের কারণে এনিয়ে আর খোঁজ রাখা সম্ভব হয়নি। সুযোগ পেয়ে বাহার ওই জমিতে ভবন নির্মাণ করেছে বলে শুনেছি।

ভবন নির্মাণের অনুমতি ও প্যালাসাইটিংয়ের ব্যাপারে রায়পুর পৌরসভার মেয়র ইসমাইল খোকন জানান, বাহার স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি বাক্কি বিল্লাহর অনুসারী। তবে ভবন নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা তিনি জানেন না। প্যালাসাইটিংটি পৌরসভার বরাদ্দের কি না তাও তিনি নিশ্চিত নয়। এ ব্যাপারে পৌরসভার প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আখতার জাহান সাথী বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। এ ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলবো। কাগজপত্র নিরীক্ষণ ও সরেজমিনে গিয়ে যদি সরকারি জমিতে ভবন নির্মাণের সত্যতা মিলে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.