ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করলেও সালিশ সভায় দেড়লাখ টাকা দিয়ে এক অনার্স পড়–য়া ছাত্রীকে বিদায় দিতে চায় সালিশসভার মাতাব্বরগণ। চেয়ারম্যান অফিসে সালিশ সভা প্রত্যাখান করে ওই ছাত্রী থানায় চলে আসে। গতকাল সন্ধ্যায় এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় সারা কসবায়। কসবা থানা পুলিশ রাতেই গ্রেফতারের চেষ্টা চালায় প্রতারক সাইফুলের বাড়িতে। ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, কসবা উপজেলার গোপীনাথপুরে স্কুল জীবন থেকে একই সাথে পড়তো ওই ছাত্রী এবং তার সহপাঠী সাইফুল। তাদের বন্ধুত্ব এক পর্যায়ে প্রেমের দিকে গড়ায়। স্কুল, কলেজের গন্ডি পেড়িয়ে যখন সাইফুল ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে ওই ছাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছাত্রীর বাবা মা দরিদ্র হওয়ার সুবাদে সাইফুল ওই পরিবারে অবাধে যাতায়াত করতো। ওই ছাত্রীর সাথে কৌশলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। সাইফুল বিভিন্ন সময় ওই ছাত্রী ও তার মার কাছ থেকে টাকা পায়সা নিয়েছে। সাইফুল যখন ওই ছাত্রীকে নিয়ে আবাসিক হোটেলে যাওয়ার প্রস্তাব কেরে তখনই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। সাইফুলকে বিয়ে জন্য চাপ দেয়। তখন সাইফুল গা ঢাকা দেয়। এ নিয়ে ওই ছাত্রী এবং তার মা এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বারস্ত হন। সবাই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে গত ২ জুলাই ওই ছাত্রী কসবা থানায় সাইফুলকে আসামী করে অভিযোগ দায়ের করেন। এ অভিযোগ পেয়ে কসবা থানা ওসি (তদন্ত) আসাদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান এবং ঘটনাবলীর সনত্যতা খুঁজে পান। দ্রুত মামলা না করার সুবাদে স্থানীয় চেয়ারম্যান মান্নান জাহাঙ্গীর ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, বিল্লাহ মিয়াসহ ২৬ জন সালিশকার মেয়েটিকে নানাভাবে মানসিক নিপীড়নমূলক কথাবার্তা বলে। সালিশসভায় কোনো মহিলা সদস্য উপস্থিত না থাকলেও পুরুষ সালিশকারগণ নানাভাবে তাকে অপমানমূলক কথা বলে। ২৬ জন সালিশকারী জুরি বসে রায় দেন সাইফুল ওই নির্যাতিত ছাত্রীকে দেড়লাখ টাকা জরিমানা দেবে। তাৎক্ষণিক ওই ছাত্রী এই বিচার প্রত্যাখান করে এবং চিৎকার করতে করতে সালিশসভা ত্যাগ করে থানায় চলে আসে। পথে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয়া জীবন, কসবা প্রেসক্লাব সভাপতির সংগে এই প্রহসনমূলক বিচারের কথা বলেন। সকলেই তাকে থানায় যেতে পরামর্শ দেন। নির্যাতিতা ছাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে গত ৪/৫মাস যাবত ধন্যা দিয়ে প্রত্যাখাত হয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েছিলানম। কিন্তু আমাকে এবং আমার পরিবারকে চাপ দিয়ে সালিশে বসানো হয়। সাইফুল আমার সাথে যা করেছে এর বিচার সমাধান বিয়ে নয়তোবা তার শাস্তি। ধর্ষণের শ্বিকার ওই ছাত্রী আরো বলেন, বিল্লাল মেম্বার আমাকে আত্মহত্যা করার জন্য প্রলোভন দেখিয়েছে। এবং গরিবের বিচার নেই বলে তাচ্ছিল্য করেগেছে আমাদের বাড়িতে এসে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম জানান, গতকাল রাতেই আমরা সাইফুলের বাড়িতে হানা দিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। মেয়েটিকে তার নিরাপত্তার কথা ভেবে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। কারণ সে বলছিলো, সাইফুল বিয়ে না করলে সে আত্মহত্যা করবে। কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার ভুইয় জীবন বলেন, এটা আইনমন্ত্রীর এলাকা। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এলাকায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কোনো প্রহসনমূলক সালিশ করে নারী অধিকারকে খর্ব করতে দেয়া হবে না। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, ওই ছাত্রীকে গতকাল (১৬ জুলাই) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা করার জন্য নেয়া হয়েছে।