প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয়, বিশেষ করে সেবা খাতের দফতর, অধিদফতর ও পরিদফতরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর নতুন নয়। যেখানে যত বেশি সেবা পাওয়ার কথা, সেখানে তত বেশি হয়রানি আর ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
আর এর মূলে অনৈতিক লেনদেন। সবার মুখে একটিই কথা সরকারি অফিস মানেই ঘুষ? অথচ এসব দুর্নীতিবাজদের লাগাম টানার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত আছেন, তারা কেবল ছোট পদধারী কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েই দায় সারছেন। প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা বরাবরই থাকছেন অধরা।
ভূমি অফিস, রাজউক, সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন প্রকৌশল দফতরসহ সরকারি একাধিক অফিস ঘুরে দেখা যায়, বাইরে শত শত মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছেন আর ভেতরে টেবিলে টেবিলে ফাইলের স্তূপ। একটি ভূমি অফিসে অপেক্ষমান বেশ কয়েকজন জানান, ভূমির কর পরিশোধ করতে হলেও এখানে ঘুষ দিতে হয়।
অবশ্য দুর্নীতি ও অনিয়ম মোকাবিলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) বিভিন্ন সময় সন্দেভাজনদের সম্পদের হিসাব তলব, জিজ্ঞাসাবাদ এমনকী অনেক ক্ষেত্রে মামলাও করতে দেখা যায়। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ব্যক্তিরা বলছেন, ভূমি অফিস, রাজউক কিংবা সিটি করপেরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় ব্যাপক দুর্নীতি থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় কদাচিৎ।
দুদক সূত্র জানায়, বিভিন্ন অধিদফতর, সংস্থা এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে উৎকোচ দিয়ে পছন্দের ব্যক্তিকে পোস্টিং, একই অফিসে বছরের পর বছর থাকা, ৫ বছরেই কোটিপতি হওয়া, সরকারি নিয়ম-নীতি অমান্য করাসহ অসংখ্য অভিযোগের প্রমাণ মিলেছে গোপন অনুসন্ধানে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কোনো প্রকার জানান না দিয়ে দুই বছর গোপন অনুসন্ধান চালায় দুদক। এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সরকারি অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানের কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম এবং অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি। এমন ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে শত কোটি টাকার মালিকও হয়েছেন কেউ কেউ। অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম এসেছে- স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভ‚মি অধিদফতর, রাজউক, পিডব্লিউডি, এলজিইডি, বিআরটিএ, বিআরটিসি, তিতাস গ্যাস ও ওয়াসা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে শতকরা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। সরকারের তরফ থেকে এসময় যুক্তি দেখানো হয়েছিল, বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করলে সরকারি অফিসে দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এর তেমন প্রতিফলন দেখা যায়নি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতির দায়ে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের অনেকেই নিম্নপদস্থ কর্মচারী। কোনো মন্ত্রণালয়ে বা সরকারি সংস্থায় দুর্নীতির জন্য সেখানকার সচিব কিংবা শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার নজির একেবারেই নেই। অনেকে ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।