ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় হিন্দু পরিবারের এক কিশোরী অপহরন মামলা ও একটি সাধারন ডায়েরীতে স্বাক্ষী হওয়ায় শাহীন শিকদার নামে এক মুসলিম অটোচালককে বেদড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে অপহরনকারীরা। তারা ওই হিন্দু পরিবারটিকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। পক্ষান্তরে পুড়িয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে এসকল দুবৃত্তরা। এ ব্যাপারে কসবা থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ ঘটনায় প্রায় ৪০টি সংখ্যালঘু পরিবারের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের প্রদীপ দেবনাথের মেয়ে স্কুল পড়–য়া কন্যাকে অপহরন করে নিয়ে যায় একই গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে মেহেদি হাসান মামুন। এ ঘটনা নিয়ে মামলা ও সাধারন ডায়েরী হলে শাহীন সিকদার (২৫) হিন্দু পরিবারটির পক্ষে স্বাক্ষী প্রদান করে। ওই মামলায় পুলিশ ওই সকল দুর্বৃত্তদের অভিযুক্ত করে কোর্টে চার্জসিট প্রদান করে। এতে অপহরনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে একই গ্রামের অটোচালক শাহীন সিকদারকে গত ৯ নভেম্বর রাত ৮টার দিকে জামাল মিয়ার দোকানের সামনে হুমায়ুন, বাছির, জয়নাল, স্বপন, জামাল, সোহেল ও মামুন নামক দুর্বৃত্তরা বেদড়ক পিটিয়ে হাড় ভাংগা রক্তাক্ত জখম করে। শাহীনের আর্তচিৎকারে তার স্ত্রী শান্তা আক্তার এসে তাদের হাতে পায়ে ধরলেও তাকে ছাড় দেয়নি । অপহরনকারীদের পিটুনিতে এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে আক্রমনকারীরা ফেলে চলে যায়। পরে অপহরনকারী দুর্বৃত্তরা প্রদীপ দেবনাথের বাড়িতে হামলা করতে যায়। বাড়িতে গিয়ে প্রদীপ দেবনাথ ও তার স্ত্রীকে খোঁজাখুজি করে। এসময় প্রদীপ ও তার স্ত্রী কসবায় ছিলো। দৃর্বৃত্তদের সুর-চিৎকারে প্রদীপের ছেলে পরিবারের লোকজন অন্যত্র পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা শাহীনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থা আশংকাজনক হলে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত শাহীন জানায়, মালোয়ানের পক্ষে কেন স্বাক্ষী কেন দিলি একথা বলেই আমার উপর হামলা চালায় অপহরনকারীরা। ওরা আমার স্ত্রীর গায়েও হাত তুলেছে। শাহীনের স্ত্রী শান্তা জানায়, আক্রমনকারীরা বলেছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। না গেলে হিন্দুদের সাথে আমাদেরও পুড়িয়ে মেরে ফেলবে। এবিষয়ে প্রদীপ দেবনাথ ও তার স্ত্রী রত্মা দেবনাথ জানায়; বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আমার মেয়ে শ্রাবন্তী (১৭) কে এনে টাঙ্গাইলে ভারতেস্বরী হোমসে ভর্তি করা হয়। করোনার কারনে কুমিল্লায় আত্মিয়ের বাড়ীতে রাখা হয়েছিলো মেয়েকে। সেখান থেকে জয়নাল আবেদীন ও তার পুত্র মামুন গংরা পুনরায় শ্রাবন্তীকে নিয়ে যায়। এরপর এরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। প্রদীপ দেবনাথের দোকানে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ভৈরব র্যাব সদস্যদের মাধ্যমে আটক করেছিলো। র্যাব ভৈরব বিষয়টি সাজানো বলে প্রমান পাওয়ায় প্রদীপকে ছেড়ে দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়; আসামীরা মাদক ব্যবসায়ী।এরা একটি উগ্র দলের কর্মী। ২০১৪ সালে তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই রেল লাইন উপরানো ও গাছ কাটা সহ অগ্নিসংযোগের নাশকতা মামলা রয়েছে। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ লোকমান হোসেন জানান, এ ব্যাপারে থানায় একটি অভিযোগ হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। একই গ্রামের শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা উত্তম চক্রবর্তী জানান,পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা উভয় পক্ষের সাথেই কথা বলছি। উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট মো.রাশেদুল কাওসার ভ’ইয়া জীবন বলেন; সন্ত্রাসী যেই হোক ছাড় তাদের ছাড় দেয়া হবেনা। ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনগত ব্যবস্থা নিতে। এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; ওই এলাকার সংখ্যালঘু পরিবারের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুসলিম পরিবারের সদস্যরা জানান এই চক্রটি এলাকায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে আইনমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে।