১০ বছর ধরে নন-এমপিও শিক্ষকদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন এমপিওভুক্তরা

প্রশান্তি ডেক্স ॥   ১০ বছর ধরে নন-এমপিও অনার্স শিক্ষকদের আয়ের টাকা মাসিক হারে নিচ্ছেন সদ্য সরকারিকৃত শহীদ মশিয়ূর রহমান এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা।

সম্প্রতি অবৈধভাবে ওই টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে টাকা উত্তোলন অব্যাহত রাখতে নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে কলেজের এমপিওভুক্ত সিনিয়র শিক্ষকরা। এ জটিলতায় প্রায় দু’মাস বেতন বন্ধ রয়েছে নন-এমপিও ১৪ জন শিক্ষকের।

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিপ্লব কুমার সেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই অবৈধ সুবিধা ভাগিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অনার্সের ক্লাসের অতিরিক্ত বিল দিতে এ ধরনের কোন নীতিমালা নেই। তবে, ২০১১ সাল থেকে গভর্নিং বডির রেজুলেশনের মাধ্যমে ৮ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষককে অনার্সের ক্লাস নেয়ার জন্য কলেজ ফান্ড থেকে অতিরিক্ত বেতন দেয়া হচ্ছে। এটা তাদের প্রাপ্য। সে কারণে তাদের জন্য বেতন বিল সাবমিট করা হয়েছে। কারনোর জন্য ক্লাস হচ্ছে না সেই জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের অতিরিক্ত বিল দিতে চাচ্ছেন না। এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিতে পারছি না।

জানা গেছে, ২০১০ সালে ঝিকরগাছার শহীদ মশিয়ূর রহমান কলেজে অনার্স বিভাগ চালু হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলা, হিসাব বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। এ চারটি বিভাগে ১৪ জন প্রভাষক কর্মরত। যার সবাই স্ব স্ব ডিপার্টমেন্টের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এক একজন শিক্ষক যে পরিমাণ বেতন পান তা বর্তমান সময়ে চাহিদা অনুযায়ী খুবই নগন্য। অথচ নন-এমপিও এ শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিতো দূরের কথা। ঠিকমত বেতন না দিয়ে সিনিয়র শিক্ষকরা অনার্স ডিপার্টমেন্টের আয়ের টাকা ভাগাভাগি করে যাচ্ছে দীর্ঘ ১০ বছর। যা নিয়ে কলেজে শিক্ষকদের মধ্যে রীতিমত ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বর্তমানে কলেজের অনার্স ডিপার্টমেন্টে আনুমানিক ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকার ফান্ড রয়েছে। যা থেকে রীতিমত অনার্স বিভাগের শিক্ষকদের চাহিদামত বেতন প্রদান করা সম্ভব। অথচ না করে সিনিয়রদের অবৈধভাবে অনার্স এর টাকা উত্তোলনে দীর্ঘদিন সহযোগীতা করে আসছে কলেজ প্রশাসন।

এ ব্যাপারে কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক দাবি করেছেন, তারা মাঝে মধ্যে অনার্স-এর ক্লাস নেন, এ কারণে তারা মাসিক হারে টাকা তুলছেন। প্রতি মাসে তারা প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলন করছে, কোন কারণ ছাড়াই। যা নিয়ে অনেকটা বিব্রত নন-এমপিও শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় দু’সিনিয়র শিক্ষক বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকদের টাকা গত ১০ বছর ধরে নিয়ে আসছে কলেজের কতিপয় শিক্ষক। অথচ তারা নিয়মিত এমপিওর বেতন উত্তোলন করছেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে মন্তব্য তাদের। তারা বলেন, অনার্স শিক্ষকরা সরকারি কোন বেতন পান না, ফান্ড থেকে যে টাকা তারা পান তাই দিয়েই চলে। কিন্তু তাদের কিছু অসাধু শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে টাকা হজম করে আসছে। তারা সিনিয়র শিক্ষকদের টাকা উত্তোলন বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের কর্মচারীরা টানা কর্মবিরতিতে আছেন। সে কারণে কলেজটি বেতন বিল সাবমিট করতে পারছে না। অনার্সের অতিরিক্ত ক্লাস দেখিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অতিরিক্ত বিল সাবমিট করেছেন। করোনার মধ্যে ক্লাস বন্ধ রয়েছে তাই অতিরিক্ত ক্লাসের বিল দেয়া হবে না। তাছাড়া কোন নীতিমালাও নেই যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অনার্সের ক্লাস নিলে তাদের অতিরিক্ত বেতন দিতে হবে। তবে, অনার্সের নন-এমপিও শিক্ষকদের পূর্বের মতই বেতন দেয়া হবে। আগামী দুই একদিনের মধ্যেই নন-এমপিওভুক্ত সব শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করে দেয়া হবে। কিন্তু অধ্যক্ষ এটা মেনে নিতে চাচ্ছেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published.