বা আ ॥ মহামারি করোনার মধ্যেই আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড হয়েছে। এবার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। বিজয়ের ৪৯ বছর পূর্তির এক দিন আগে গত মঙ্গলবার এই সুখবর দিল রিজার্ভ। এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ১১ মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। মূলত রেমিট্যান্সের ওপর ভর করেই রিজার্ভ এই অবস্থানে পৌঁছেছে। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন বংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ছয় সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভে ১০০ কোটি ডলার যোগ হয়ে নতুন এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর রিজার্ভ প্রথমবার ৪১ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছিল। আর ওই মাসের ৭ অক্টোবর তা ৪০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর গত মার্চ শেষে রিজার্ভ ছিল ৩২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে সাড়ে আট মাসের ব্যবধানে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার বেড়ে এই পর্যায়ে এসেছে রিজার্ভ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের ব্যবধানে রিজার্ভে ৯ বার রেকর্ড হয়েছে। গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরো বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। এর তিন সপ্তাহ পর ১৭ আগস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ১ সেপ্টেম্বর তা ৩৯ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে। এর পাঁচ সপ্তাহ পর ৭ অক্টোবর তা ৪০ বিলিয়ন ডলার এবং এর তিন সপ্তাহ পর গতকাল তা ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
গত বছরের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এই প্রণোদনা দেওয়ার পর থেকে অনেকটা ঝোড়োগতিতে বাড়ছে রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসেও বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স পাছিয়েছেন প্রবাসীরা। এর পমািণ ছিল প্রায় ২০৮ কোটি ডলার। সব মিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮৮২ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ৪৩.২৪ শতাংশ বেশি। এর আগে চার মাসে কখনো এত রেমিট্যান্স আসেনি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স আসে ২১৩ কোটি ডলার। এ ছাড়া আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার এবং জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। আর চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে সাড়ে ৮১ কোটি ডলারের মতো রেমিট্যান্স এসেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বর মাসেও রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলারের ঘর অতিক্রম করবে। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে এক হাজার ৫৭৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে .৯৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে .৭৬ শতাংশ।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ