কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে ভজন শংকর আচার্য্য ॥ পূর্ব শত্রুতা নয়, বলৎকার ও স্ত্রীকে নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতেই কবিরাজ ফরিদকে মামা হুজুরের (জংগী নেতার) নির্দেশে কসাই জহির গলা কেটে হত্যা করেছে। মামা হুজুর কোরানের আয়াত পড়ে এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন কবিরাজকে হত্যা করলে বেহেশতে যেতে পারবে। তাকে হত্যা করা জহিরের জন্য জায়েজ।
জানা যায়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত কবিরাজ ফরিদ মিয়া হত্যাকান্ডের ঘটনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গ্রেফতারকৃত কসাই জহিরের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে উদ্ঘাটিত হয়েছে। কসাই জহির উপজেলার শাহপুরে অবস্থানকারী মামা হুজুরের নির্দেশ মতো ফরিদকে জবাই করেছে। মোবাইল ট্র্যাকিং এর মাধ্যমে নিহত কবিরাজ ফরিদের হত্যা রহস্য উন্মোচিত করেছেন পুলিশের উর্ধ্বতন একটি শক্তিশালী অনুসন্ধান দল। তবে এ বিষয়ে কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন তদন্তের স্বার্থে এ মুহুর্তে সবকিছু বলা যাবে না।
পুলিশের অন্য একটি সূত্রে জানা যায়; কথিত মামা হুজুর(জংগী নেতা) এ হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা। মামা হুজুর দাবী করেছেন জহিরের কোনো দোষ নেই। তিনিই তাকে হত্যাকান্ডে প্রলুব্দ করেছেন। জানা যায় মামা হুজুর শতাধিক মামলার আসামী এবং জংগী নেতা। গত ৭/৮ বছর যাবত মামা হুজুর উপজেলার শাহপুর গ্রামে অবস্থান করছেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট অঞ্চলে । মামা হুজুর একজন কামেল মানুষ হিসেবে আশ্রয় দিয়েছেন আবদুল কাইয়ুম, আবুল হাসেম নামক ব্যক্তিগন। প্রতিদিনই তাদের বাড়িতে নানা ধরনের পুরুষ মহিলা চিকিৎসার জন্য আসা-যাওয়া করতো বলে গ্রামের একাধিক ব্যক্তি থেকে জানা যায়। অপর একটি সুত্রে জানা যায়; কসবা- আখাউড়া ও ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় তার শত শত শিষ্য রয়েছে যারা মামা হুজুরের নির্দেশমতো চলাফেরা করে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের একটি শক্তিশালী টিম জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মামা হুজুর (জংগী নেতা) জহির ও আবদুল কাইয়ুমকে গ্রেফতার করে। মামা হুজুরের হিটলিস্টে আরো কারা কারা ছিলো, আইনমন্ত্রীর এলাকাকে কেন মামা হুজুর বেছে নিলো পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের টিম তদন্তে নেমেছেন বলে জানা যায়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় আতংক সৃষ্টি হয়েছে।
জহির তার জবানবন্দিতে জানায়, কুটি থেকে ওইদিন একটি ছুরি, চানাচুর,বিস্কুট,সরিষার তেল ইত্যাদি নিয়ে মামা হুজুরসহ ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর-মাধবপুর দিয়ে চান্দলা হয়ে বুড়ি নদী অতিক্রম করে কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে কবিরাজের বাড়িতে পৌছে। কবিরাজ বাড়িতে না থাকায় কসাই জহির তাকে ফোন করে বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই রাতে কবিরাজের স্ত্রী ও সন্তানরা বাড়িতে ছিলো না। সেখানে জহিরের সংগে কবিরাজ বলৎকার করে দুর্বল হয়ে শুয়ে পড়ে এবং জহিরকে মাথা টিপে দিতে বলে। জহির মাথা টিপতে থাকায় কবিরাজ ঘুমিয়ে পড়ে। ওদিকে কবিরাজের বাড়ির পাশে স্কুলের আঙ্গিনায় দাড়িয়ে মামা হুজুর দোয়া পড়ে অপরদিকে কসাই জহির ছুরি দিয়ে কবিরাজ ফরিদকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে কসাই জহির মামা হুজুরের কাছে যায়। মামা হুজুর তাকে আদর করে এবং ওই স্থান ত্যাগ করে।