আখের॥ হুট করে একটা বাস পিছন থেকে এসে উড়িয়ে নিয়ে গেলেন আমার এক মামাকে। তিনি ছিলেন নেভির কমান্ডার। লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিলানিকে ক্যান্টনমেন্টের কেউ চিনেন না এরকম মানুষ খুব কম আছে। এখন পর্যন্ত তিনি বেডে। গত ২৩ বছর থেকে তিনি বেডে। মামি তার বয়সের প্রায় অর্ধেকটা সময় জুড়েই আগলে রেখেছে সিম্পলী একটুও নড়তে-চড়তে বা একটা কথাও বলতে না পারা দেহটাকে। একটা মুহূর্তের জন্যও তার পাশ থেকে নড়েনি। যখন এক্সিডেন্টটা হয় তখন মামার একমাত্র মেয়ের বয়স ছিল ৭। কয়েকদিন আগে ধুমধাম করে বিয়ে হলো তার। মামাকে ধরে হুইল চেয়ারে বসিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে আনা হলো। মেয়ে আর তার জামাই সালাম করলেন। তিনি হাতটা পর্যন্ত তাদের মাথায় রেখে দোয়া করার মত অবস্থায় নেই।
উনার চোখটা ছাড়া কিছুই চলে না। ২৩ বছর ধরে একটা প্রাণ, তার চোখের ভিতরে আটকে আছে। এই ২৩ বছর থেকে ফ্যামিলিতে উনার প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা বলাবলি করি, “এই সব দুর্ঘটনার দায়ে দায়ী একটা চালকের ফাঁসি টাইপ একটা কঠিন শাস্তি হোক… দেখবেন সব চালক লাইনে এসে গেছে”। বলি মানে, নিজেকে বিশ্বাস দেই… মামার চোখকে সান্তনা দেই। হয়েছেও এরকম একটা রায় গত সপ্তাহে…। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীর নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। আর এর ফলে… এই রায়ের প্রতিবাদে, আজ থেকে পুরো দেশজুড়ে পরিবহণ ধর্মঘট ডেকে বসে আছে পরিবহণ সমিতি।
… বাহ… কোন দেশে আছি? একটা খুনিকে বাঁচানোর জন্য ধর্মঘট!! আজ খুব একটা বাজে অভিশাপ দিতে ইচ্ছে করছে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশানের মাথাগুলোকে। দোয়া করি আপনাদের জন্য, “আপনাদের ফ্যামিলির কেউ যেনও …”। সবসময়য় মুখে বলেই অভিশাপ দেয় না। মাঝে মাঝে মনের কথাও লেগে যায়। হ্যা বদদোয়া দিচ্ছি। একটা মনের বদদোয়া; একটা চোখের বদদোয়া; একটা ছুটাছুটি করা বয়সের বাচ্চার, সারাজীবন তার বাপকে শুয়ে থাকতে দেখার বদদোয়া।