বা আ ॥ বর্তমান সরকারের অধীনে তৈরি হওয়া বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নকে নিজ ক্যারিয়ারের জন্য কাজে লাগানোর লক্ষ্য নিয়ে চলতি বছরের শুরুতে যাত্রা শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিশেষ আয়োজন ‘কর্মজীবনের কর্মশালা’। গত ৯ জানুয়ারী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বিষয়টি নিয়ে দারুণ আগ্রহ তৈরি হয়েছে দেশের তরুণ সমাজে। আগামী ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত আগ্রহীরা পধৎববৎ.ধষনফ.ড়ৎম এই ওয়েবসাইটে লগ ইন করে আবেদন করতে পারবেন কর্মশালার জন্য। কর্মশালার মূল কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। এ প্রসঙ্গে এ গবেষণা সংস্থাটির সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বলেছেন, ‘সিআরআই সবসময় তারুণ্যকে প্রধান দিয়ে কাজ করে। এ জন্যই এই প্রোগ্রামটিতে আমাদের ওতপ্রোতভাবে যুক্ত হওয়া। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করছি’। তরুণদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তরুণরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। খুব ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। আমাদের এখন পর্যন্ত ছয় হাজার রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।
এখান থেকে যাচাই বাছাই শেষে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য আমরা প্রথম ব্যাচকে প্রস্তুত করবো। যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক পর্যায়ের তরুণ, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য তাদেরকে মূল কর্মশক্তির সঙ্গে যুক্ত করা, যেন সমন্বিত উন্নয়ন হয়। গুরুকুল অনলাইন লার্নিং নেটওয়ার্ক প্রধান ও এই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর বলছিলেন, আমরা ক্যারিয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞ মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে এই প্রশিক্ষণটি পরিকল্পনা করেছি। বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাতের সফল ব্যক্তিবর্গ ইতোমধ্যে আমাদের এই প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন ভাবে দিকনির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করছেন।
পাশাপাশি তারা আমাদের ‘ক্যারিয়ার ক্যাটালগে’ সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে যুক্ত করছেন তাদের খাতের এন্ট্রি লেভেলের পেশা পরিচিতি। তারা প্রশিক্ষণেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকবেন। আমরা দল মত নির্বিশেষে দেশের সফল ব্যক্তিবর্গকে এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা তরুণদের বলতে চাই-পরিকল্পনা থাকলে নানা কারণে সেটি ব্যর্থ হবার সামান্য সম্ভাবনা থাকে, তবে পরিকল্পনা না থাকলে ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা শতভাগ। তাই প্রতিজন তরুণের তার সম্ভাবনার সর্বোচ্চ বিকশিত নিশ্চিত করতে অবশ্যই ক্যারিয়ার পরিকল্পনা থাকা দরকার। আমাদের ক্যারিয়ার ক্যাটালগ, ও প্রশিক্ষণের কিছু ভিডিও পাবলিক রিসোর্স হিসেবে থাকছে, যা সরাসরি অংশগ্রহণ করীরা ছাড়াও বাকিদের সাহায্য করবে।
উদ্যোগ গ্রহণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটির সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম অনেক কিছুই করছে। কিন্তু তারা কোন পথে এগিয়ে যাবে, নিজেদের ভবিষ্যতের কী করবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সেই সংশয় কাটাতে ও তাদের সঠিক পথ দেখাতে আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কর্মজীবনের কর্মশালার মাধ্যমে আমরা তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য একটি গাইড লাইন দিবো। কেউ হয়ত ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু গড়ে তুলে হয়ে উঠবে সফল উদ্যোক্তা। আমাদের কাজ হবে তাদের নিজ নিজ ক্যারিয়ার গড়ার সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া। কর্মজীবনের কর্মশালা’র মাধ্যমে কতটা সফলতা আশা করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খুবই আশাবাদী। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি করবো, যারা নিজেরা নিজেদের অন্ন যোগাবে। সেই সঙ্গে তাদের মাধ্যমে তাদের পরিবার, দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। আমরা পথ দেখিয়ে দেব। সেই পথে হেঁটে সাফল্য ছিনিয়ে আনবে তারা।
কর্মজীবন সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে নির্দিষ্ট গন্তব্য খুঁজে পায় না তরুণদের অনেকেই। ফলে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বাধাগ্রস্ত হয় তারুণ্যের বিকাশ। আর সে কারণেই কর্মজীবনের দিকনির্দেশনা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ‘কর্মজীবনের কর্মশালা: তরুণদের কর্মদক্ষতা ও কর্ম-পরিকল্পনা উন্নয়ন বিষয়ক কর্মসূচি’ শীর্ষক এই উদ্যোগের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক উপ-কমিটি। এতে সার্বিক সহযোগিতায় রয়েছে সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। আয়োজকদের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিপুল অবকাঠামো-পরিকাঠামো তৈরি করেছেন, সেগুলোর মাধ্যমে দেশের যেকোনো তরুণ-তরুণী তার নিজের সম্ভাবনার সর্বোচ্চটাকে কাজে লাগাতে পারবেন। কিন্তু তারুণ্যের নিজেদের সম্ভাবনার সর্বোচ্চটাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন একটা সঠিক গাইড লাইন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশের তরুণ প্রজন্ম নিজেদের একাডেমিক লেখাপড়া করলেও আধুনিক কর্মজীবন সম্পর্কে তাদের জানাশোনা কম। এমনকি আর্থিক কর্মজীবন সম্পর্কে সচেতন হতে কখনো কখনো একটি প্রজন্মের জীবনের মূল সময়টাই শেষ হয়ে যায়।
আয়োজনকরা আরো বলছেন, মানুষ যখন বাস্তবতা বুঝে ফেলে, ততদিনে তার অনেক বয়স হয়ে যায়, তখন সবকিছু বুঝলেও আর কর্মের স্পৃহা থাকে না। এছাড়াও আমাদের তরুণ-তরুণীরা কর্মমুখী লেখাপড়ার ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই পিছিয়ে আছে। লেখাপড়ার শুরুতে বা ছাত্রজীবন থেকে তারা কর্মজীবনমুখী লেখাপড়া করতে পারে না। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মজগৎ সম্পর্কে ধারনা দিতে এবং সেই কর্মজগতে একজনের সম্ভাব্য পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আগাম ধারণা দেয়া এবং সেই অনুসারে তরুণ-তরুণীদের নিজেকে তৈরি করতে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।