আ.লীগ নেতার শোরুম ; যাত্রী ছাউনিটি

প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় গণপরিবহনে চলাচলকারীদের জন্য নির্মিত একটি যাত্রী ছাউনিতে ব্লেজারের শোরুম দিয়ে বসেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) তাকে এটি লিজ দিয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। লিজ গ্রহণকারী আবদুল কাইয়ুম মহানগরীর বোয়ালিয়া (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তাকে যাত্রী ছাউনি লিজ দেয়ার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি রাসিকের কর্মকর্তারা। তারা এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। বলছেন, এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।


নগরীর ব্যস্ততম এলাকা লক্ষ্মীপুর মোড়। হাসপাতাল, ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ছড়াছড়ি এখানে। তাই মানুষের ভিড় লেগে থাকে দিনরাত। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানুষ আগে এই যাত্রী ছাউনিতে বসতেন। আগে এই যাত্রী ছাউনির সামনের সড়ক দিয়ে বাসও চলত। তখন যাত্রীরা অপেক্ষা করতেন। বাস চলাচল বন্ধ হলেও মানুষ যাত্রী ছাউনিটি ঠিকই ব্যবহার করতেন। যাত্রী ছাউনির এক কোণে খবরের কাগজ নিয়ে বসতেন বিক্রেতা। অনেকে সেখান থেকে খবরের কাগজ নিয়ে যাত্রী ছাউনিতে বসেই পড়তেন। কিন্তু সেসব আর নেই। যাত্রী ছাউনির পুরোটাই এখন ব্লেজারের দোকান। এই দোকানের জন্য লাগানো হয়েছে সাটার। ভেতরে করা হয়েছে সাজসজ্জা। জ্বলছে হরেক রঙের আলো।
মাসদুয়েক আগে অনেকটা গোপনেই আওয়ামী লীগের নেতাকে ছাত্রী ছাউনিটি লিজ দেয় রাসিক কর্তৃপক্ষ। নগর সংস্থার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পালও বিষয়টি জানতেন না। গেল ১৪ জানুয়ারি সমর কুমার পাল লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। যাত্রী ছাউনি দখল করা হয়েছে ভেবে তিনি ব্লেজারের দোকানটি তখন সিলগালা করে দেন।
এর পরদিনই কাগজপত্র নিয়ে সিটি করপোরেশনে যান লিজ গ্রহণকারী। তারপর রাসিকই তার দোকানের তালা খুলে দেয়। এখন যাত্রী ছাউনিতে এই দোকান দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখানে এসে বসতাম। পত্রিকা পড়তাম। সাধারণ মানুষও দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এসে এখানে বসতেন। বিশ্রাম নিতেন। সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। এখানে এক হকার পত্রিকা বিক্রি করতেন। তাকে তুলে দিয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তিকে ব্লেজার শপ করতে দেয়া হয়েছে। আসলে ক্ষমতা যার, সবই তার!’ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাইয়ুমকে ফোন করা হয়। তিনি বলেন, ‘তারাই (রাসিক) সিলগালা করেছে, তারাই খুলে দিয়েছে। কেন খুলে দিয়েছে তাদের কাছেই জানুন।’
অভিযান পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, ‘সিলগালা করা হয়েছিল সঠিক। কিন্তু যাত্রী ছাউনিটি সিটি করপোরেশন থেকে লিজ দেয়া হয়েছে বলে পরে জেনেছি।’ জানতে চাইলে রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর-ঈ-সাইদ বলেন, ‘এটা আসলে প্রশাসনিক বিভাগ থেকে লিজ দেয়া হয়েছে। আমি কিছু বলতে পারব না।’
রাসিকের সচিব আবু হায়াত মো. রহমতুল্লাহ বলেন, ‘সোজা কথা হলো- সিটি করপোরেশনের বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে আসলে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না। আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। স্যরি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.