ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর কর্তৃক ৫০ একর জমিতে সমলয়ে হাইব্রিড ধান চাষের ব্লক প্রদর্শনীতে বীজতলা তৈরিতে সরকারী নির্দেশনা না মেনে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নি¤œমানের ও কম ট্রেতে বীজতলা তৈরি করার কারনে পরিমান মতো চারা তৈরী না হওয়ায় প্রায় ৬০ বিঘা জমিতে কৃষককে নিজে চারা কিনে রোপনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এতে কৃষকের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।জানা যায়, সরকারের
নির্দেশনা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রনালয় কর্তৃক দেশের ৬৪টি জেলায় ৫০ একর করে জমিতে অধিক ফলনশীল সুবর্ণ-৩ হাইব্রিড বোরে ধানের চাষ করতে সমলয়ে ব্লক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রতি জেলায় ব্লক প্রদর্শনীর ব্যায় ধরা হয় প্রায় ১৪ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ব্লক প্রদর্শনীর এলাকা নির্ধারন করে কসবা উপজেলার সৈয়দাবাদ এলাকায়। এতে ৫০ একর জমির জন্য বীজতলা তৈরি করতে সাড়ে চার হাজার ট্রেতে চারা করার জন্য সরকারীভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়। সঠিক এবং ভাল চারা পেতে ১০০ টাকা মূল্যমানের ট্রেতে বীজ রোপনের কথা বলা হয়।এতে করে সাড়ে চার হাজার ট্রে’র মূল্য হয় সাড়ে চার লাখ টাকা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে নিম্ম মানের ২৫শ ট্রেতে বীজতলা তৈরি করে অতিরিক্ত ট্রে’র খরচ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে।এই বীজের উৎপাদিত চারা দিয়ে ১৬৬ বিঘা জমির মধ্যে প্রায় ৬০ বিঘা জমি কৃষি অফিসের তত্ববধানে রোপন সম্ভব হয়নি। বাকী ৬০ বিঘা জমি নিজে চারা কিনে রোপন করতে কৃষকদের নির্দেশ দেন কৃষি কর্মকর্তা। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষক চারা কিনে রোপন বাবদ খরচ পাচ্ছেন মাত্র ৯১০ টাকা। অথচ কৃষকের খরচ হয়েছে প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ১৭শ টাকা। সবকিছু দেয়ার কথা থাকলেও জমিতে চাষ ও পানি দেয়ার খরচও চাপিয়ে দেয়া হয়েছে কৃষকের উপর। কৃষি অফিস শুধু বীজতলা তৈরি করে চারা রোপন, সার ও কেটে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে
এদিকে স্থানীয় কৃষক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রহমান ও মোস্তফা মিয়া সহ একাধিক কৃষক জানায় সব খরচ কৃষি অফিস বহন করার কথা বলে জমি নেয় কিন্তু জমির চাষ ও পানির খরচ কৃষককেই বহন করতে হচ্ছে। আবার ৬০ বিঘা জমির রোপন খরচও কৃষককে বহন করতে হচ্ছে। কৃষি অফিস মেশিনে লাগালে ৯শ টাকা খরচের মধ্যে লাগানো সম্ভব। কিন্তু শ্রমিক দিয়ে লাগালে খরচ হয় প্রায় ১৭ টাকা। কৃষক বলছে বেশীরভাগ খরচই যদি তাদের বহন করতে হয় তাহলে সরকারের দেয়া ১৪ লাখ টাকা কোথায় খরচ করা হবে । এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজেরা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.রবিউল হক মজুমদার স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কম ট্রেতে বীজ রোপনসহ সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন অনিয়মের বিষয়ে সরকারকে জবাব দেয়া ও বোঝানোর ক্ষমতা তার আছে।উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম বলেন; প্রকল্পে সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক যে ব্যয় ধরা হয়েছে সেভাবেই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে কাজ করতে হবে। এখানে নিয়মের কোন ব্যত্যয় হলে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখার বিষয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.রবিউল হক মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন; সমলয় হাইব্রিড চাষ প্রকল্পে নিয়ম বহিভর্’ত কোন নির্দেশনা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে দেয়া হয়নি। যদি প্রকল্পে নির্দেশনার বাহিরে কিছু হয়ে থাকে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো.রুহুল আমিন তালুকদার প্রকল্পে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন; বড় ধরনের প্রকল্পে কিছুটা ভূলভ্রান্তি থাকতে পারে তবে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। সরকার সকল প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স।