কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এর স্বীকৃতি না পেয়ে দ্বিতীয় বারে ষ্ট্রোক করে জীবনবসান হলো উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সুতারমুড়া গ্রামের জামশেদ মিয়া নামক এক সূর্য সন্তানের। জামুকার তালিকা থেকে বাদ যাওয়ায় তাকে রাষ্ট্রিয় মর্যাদা দেয়া যায়নি বলে জানালেন তাঁর সহযোদ্ধা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম। সহযোদ্ধা ও গ্রামবাসীর চোখের জলে বিদায় দিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। গত সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) বাদ আছর জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। জানা যায়; ২০১৮ সালে কসবা উপজেলায় যাচাই-বাছাইয়ে ৪ শত আবেদন পত্রের মধ্যে ৪২ জনের নাম সিলেকশন করে জামুকায় চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো হয়েছিলো। পরে সেখানে পুনরায় সাক্ষাতকারের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। জামশেদ মিয়ার সংগে আরো ৫ জন সহযোদ্ধা গিয়েছিলেন স্বাক্ষী দিতে। জামশেদ মিয়ার সাক্ষাতকার নেয়ার পর সংগে যাওয়া কোনো স্বাক্ষীরই বক্তব্য নেয়া হয়নি বলে জানালেন জামশেদ মিয়ার সহযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন। সহযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন জানান; “১৯৭১ সালে আমরা তখন চন্ডিদ্বার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীতে পড়ি। একই উপজেলার গুড়িয়ারুপ গ্রামের জিতু, ধ্বজনগরের আবদুর রহমান, কসবার মোতাহার হোসেন, মীরতলার এলন খাঁ সহ আমরা একসাথে ত্রিপুড়া রাজ্যের আগরতলায় কংগ্রেস ভবনে যাই। সেখান থেকে হাফানিয়া ও পরে গোকল নগর ক্যাম্পে যাই। গোকল নগর ক্যাম্প থেকে আমাদের ট্রেনিং করাতে আসামের লায়লাপুর ক্যান্টনমেন্টে পাঠানো হয়। একমাস ট্রেনিং করার পর আমাদের মেলাঘরে নিয়ে আসে। কিছুদিন সাব-সেক্টর কমান্ডার আইন উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে আমাদের রাখা হয়। পরে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য দেশের অভ্যন্তরে কমান্ডার মতিনের নেতৃত্বে শিমরাইল সহ কসবা ভাটি অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। ওই সময় আমাদের ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন আবদুল হক মাষ্টার ও শিকারপুর গ্রামের আবুল হাসেম খান। বর্তমানে আবুল হাসেম খান আমেরিকায় আছেন।” কসবা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মো.সহিদুল্লাহ বলেন; জামশেদ মিয়া বেশ কয়েক বছর যাবত ভাতাও পেতেন। আমরা যখন মুসলিম লীগের টি.আলী বাড়ি দখল করে ক্যাম্প করি তখন জামশেদ ভাইও আমাদের সংগে ছিলেন। জামুকায় তার নাম বাদ পড়ার খবর শুনেই তিনি ষ্ট্রোক করেছিলেন। দীর্ঘদিন বিছানায় থাকার পর পুনরায় ষ্ট্রোক করে গতকাল সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন; বিষয়টি তাঁর জানা নেই। আপিল করা হলে আমরা তাঁর বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। বিশাল জানাযা অনুষ্ঠানে এই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রিয় মর্যাদা না পাওয়ায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জামুকা কর্তৃপক্ষ পুনরায় বিবেচনা করে এই মুক্তিযোদ্ধার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবী জানান তার সহযোদ্ধারা এবং গ্রামের শত শত মানুষ। তারা স্থানীয় সাংসদ ও আইনমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। সুতারমুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাযায় এই মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধকালীন ও পরবর্তিতে পুলিশ বাহিনীতে কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন; লেশিয়ারা মাদরাসা সুপার মাওলানা আবুল ফয়েজ, সহযোদ্ধা জয়নাল আবেদিন, সহযোদ্ধা ইউনিয়ন কমান্ডার ফজলুল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদির ও হাজী আলী আজগর প্রমূখ।
Share on Facebook
Follow on Facebook
Add to Google+
Connect on Linked in
Subscribe by Email
Print This Post