প্রশাস্তি ডেক্স ॥ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটনশিল্প ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বিদেশভ্রমণে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি থাকায় ভ্রমণপিপাসুরা এখন দেশের ভেতরেই এখানে-ওখানে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। তবে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দাবি, লোকসান পিছু ছাড়েনি তাঁদের। আর ট্যুর অপারেটররা বলছেন, ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। করোনার কারণে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়, যা চলে মে মাস পর্যন্ত। তবে পর্যটনসংক্রান্ত ব্যবসা-বাণিজ্য জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ছিল। আগস্টে হোটেল-রিসোর্টগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলতে শুরু করে। গ্রাহক টানতে দেওয়া হয় মূল্যছাড়। আবার বিদেশ যাতায়াত সীমিত থাকায় দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার, সিলেট ও বান্দরবানের পাঁচ তারকাসহ উন্নত মানের হোটেল-রিসোর্টগুলো এখন পর্যটকদের পদচারণে সরগরম। করোনার মধ্যেও গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্টে আগের বছরের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি ব্যবসা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এম নাসের রহমান। তিনি বলেন, প্রতিবছর দেশ থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যেতেন। এ বছর করোনার কারণে কেউ দেশের বাইরে যেতে পারেননি। তাই অভ্যন্তরীণ বিলাসবহুল পর্যটনকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। দেশের আরেক বড় রিসোর্ট শ্রীমঙ্গলভিত্তিক গ্র্যান্ড সুলতান খোলা হয় ডিসেম্বরে। এরপরও রিসোর্টটি ভালো ব্যবসা পাচ্ছে বলে জানান সেটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আরমান খান। তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা অন্য সময়ের সঙ্গে তুলনা করতে পারছি না, তবু বলব গ্রাহক বাড়ছে।’
একইভাবে কক্সবাজারের সিগাল হোটেলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেখ ইমরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ‘কক্সবাজারে নানা মানের ও দামের হোটেল আছে। এর মধ্যে আমাদের অবস্থা ভালো। করপোরেট গ্রাহক কম পাচ্ছি, কিন্তু ব্যক্তি ও পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক অনেক। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই যাচ্ছে।’ হবিগঞ্জের বাহুবলের বিলাসবহুল রিসোর্ট প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, করপোরেট গ্রাহক একদম নেই। তবে সাধারণ অতিথি এত বেশি যে করপোরেটের অভাব অনুভূত হয়নি।
হোটেল-রিসোর্টগুলোর ব্যবসা যে বাড়ছে, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের দেওয়া মূল্যছাড়ের ঘোষণা দেখলে বোঝা যায়। এসব ছাড়ের সুবিধা নিচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তবে বড় হোটেল-রিসোর্টগুলোর ব্যবসা যখন রমরমা, তখন মাঝারি ও ছোট হোটেল-রিসোর্টগুলো এখনো করোনার প্রভাবে ধুঁকছে। বান্দরবানের হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি অমলকান্তি দাশ জানান, ভালো যাচ্ছে না তাঁদের ব্যবসা। তিনি বলেন, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে সময়টায় ব্যবসা কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু তা জানুয়ারি থেকে আবার পড়তে শুরু করেছে।
সিলেটের অবস্থাও একই। জানতে চাইলে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, ‘আমাদের এলাকার পর্যটকদের একটা বড় অংশ প্রবাসী বাংলাদেশি। যেহেতু দেশে মানুষ আসতে পারছে না, তাই অনেক চেষ্টা করেও আমরা ৬০ শতাংশের বেশি ব্যবসা করতে পারছি না।’বড়-ছোট-মাঝারিনির্বিশেষে যাদের লক্ষ্য বিদেশ থেকে আসা গ্রাহক পাওয়া, এমন সব পর্যটন ব্যবসাই লোকসান গুনছে। কক্সবাজারের মারমেইড বিচ রিসোর্টের এমডি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত গ্রাহকেরা বিদেশি, তারা এখন আসছে না। আমরাও সেই ক্ষতি মেনে নিয়েছি। ’