প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইকবাল সর্দার মো. নাজমুল কবির নিজের নাম সংক্ষিপ্ত করে নিজেকে পরিচয় দেন ইসমোনাক বলে। তিনি তাঁর নিজের মতো করে এক ব্যতিক্রমী সাহিত্যচর্চায় লিপ্ত রয়েছেন। তাঁর সেই চর্চার সমস্তটাই বাংলা ভাষার প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ ‘ক’ নিয়ে। ২০ বছর ধরে চলমান ব্যতিক্রমী সাহিত্যচর্চায় বিভিন্ন গ্রন্থ ও জার্নাল তন্ন তন্ন করে ক বর্ণ দিয়ে শুরু প্রায় আড়াই লাখ শব্দ সংগ্রহ করেছেন তিনি। ‘মৃত্যু’র কোনো সমার্থক শব্দ ক বর্ণ দিয়ে আছে কি না, তা জানতে অনুসন্ধান জারি রেখেছেন আট মাস। এ পর্যন্ত তাঁর বই বেরিয়েছে তিনটি, সবই ক দিয়ে রচিত। কেষ্ট কবির কষ্টগুলো, কেষ্ট কবির কনফারেন্স ও কেষ্ট কবি। তিনটি বইয়ে ক বর্ণ দিয়ে লিখেছেন প্রায় ২৭ হাজার শব্দ।
কেষ্ট কবির কনফারেন্স বইটির একটি বাক্য এমন, ‘কেষ্টর কাকিমা কুসুমকলি, কঠিন কণ্ঠে কাঁদতে কাঁদতে কনফারেন্সের কবিদের কইলেন, কবিগণ কর্ণপাত করুন, কর্ণপাত করুন কবিগণ, কেষ্ট কথা কইবে না, কুপোকাত করেছে কেষ্ট, কেষ্ট কুপোকাত করেছে, কেষ্ট করুণাময়ীর কাছে কাল কাটাচ্ছে, করুণাময়ীর কাছে কাল কাটালে কেউ কখনো কথা কয় না।’ তাঁর আসল নাম সর্দার মো. নাজমুল কবির ইকবাল। কিন্তু ইসমোনাক নামটি নেবেন বলে শেষের ইকবাল নামটি নামের শুরুতে এনে বসিয়েছেন। ইসমোনাকের জন্ম ১৯৬৭ সালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের সরদারবাড়িতে। তাঁর বাবা হেফজু মিয়া। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। ইসমোনাক সরাইলের কালিকচ্ছ পাঠশালা থেকে মাধ্যমিক এবং সরাইল মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিএ পাস করেন।
ঢাকার মিরপুরের মোস্তফা আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেনে দুই বছর এবং গাজীপুরের অ্যানিতা মডেল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে তিনি বছর চারেক শিক্ষকতা করেছেন। থাকতেন ঢাকার মিরপুরের শেওড়াপাড়ায়। করোনাভাইরাসের অতিমারি শুরু হলে গত বছরের ২০ মে গ্রামের বাড়ি সরাইলের নোয়াগাঁওয়ে চলে আসেন। ২০০৫ সালের ২৩ জুন মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে বিয়ে করেন ইসমোনাক। সংসারজীবনের আয়ু ছিল ১৫ বছর। বিয়ের পর প্রথম কন্যাসন্তান মারা যায় জন্মের ছয় দিন পর। বর্তমানে তাঁর ১১ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। তবে দুই বছর আগে স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে তাঁর কাছ থেকে চলে যান। ইসমোনাকের ২০১০ সালে প্রকাশিত বই কেষ্ট কবির কষ্টগুলোতে ক বর্ণ দিয়ে শুরু শব্দের সংখ্যা ৭ হাজার, ২০১৩ সালে প্রকাশিত কেষ্ট কবির কনফারেন্স-এ ১০ হাজার শব্দ এবং ২০১৬ সালে প্রকাশিত কেষ্ট কবিতে ১০ হাজার। প্রথম আলোকে ইসমোনাক জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার, কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, শিল্পকলা একাডেমি লাইব্রেরি, বাংলা একাডেমি লাইব্রেরি, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স একাডেমি লাইব্রেরি, ঢাকা ক্লাব প্রাইভেট লিমিটেড লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন জার্নাল থেকে তিনি ক বর্ণ দিয়ে শুরু শব্দগুলো সংগ্রহ করেছেন। ২০ বছর ধরে এই সংগ্রহের কাজ চলছে। তিনি ক বর্ণের প্রায় আড়াই লাখ শব্দ এ পযর্ন্ত সংগ্রহ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষায় ক বর্ণ দিয়ে শব্দের পরিমাণ যথেষ্ট। তবু “মত্যু” শব্দটির সমার্থক শব্দ খুঁজেছি আট মাস ধরে। পাইনি। কাছাকাছি শব্দ কতল আর কুপোকাত পেয়েছি।’ এ ব্যতিক্রমী শব্দসংগ্রাহক বলেন, ‘এসব করতে গিয়ে আমি সবকিছু হারিয়েছি। স্ত্রী-সনাতান আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এখন সঙ্গে শুধু মা আছেন। চর্চার ফসল ক বর্ণ দিয়ে লেখা আমার তিনটি বই।’