আমেরিকা ছেড়ে ২৩ বছর ধরে ফিলিস্তিনে বসবাস করা নারীর গল্প

আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ আন্না মোরালেস। ৫০ বছর বয়সী এক নারী। দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ভয়ে হরহামেশা আচ্ছন্ন হয়ে থাকেন তিনি। গত ২৩ বছর ধরে ফিলিস্তিনে বসবাস করে আসছেন এই নারী। ছয় সন্তানের এই মা এখন পর্যন্ত সেখানে স্থায়ী বসবাসের পরিচয়পত্র পাননি। মার্কিন নাগরিক আন্না তার প্রয়াত স্বামী মোহাম্মদ আল-শাসানিকে বিয়ে করেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই তাদের বিয়ে হয়েছিল। পরে তারা ফিলিস্তিনে চলে আসেন এবং ১৯৯৭ সালে এ দম্পতি সেখানে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ফিলিস্তিনে ঢুকতে তখন আন্নাকে ইসরায়েলি অনুমোদন নিতে হয়েছিল।
২০০৫ সালে তার স্বামী ও সন্তানদের ফিলিস্তিনি পরিচয়পত্র দেওয়া হলেও তিনি পাননি। তার আবেদন ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দেয়। তবে তিনি ফিলিস্তিন ছেড়ে কোথাও যাননি। অধিকৃত পশ্চিমতীরের রামাল্লার কাছে সুরদা গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আন্না। ২০১৫ সালে তার স্বামী মারা যান। এতে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি হতাশাগস্ত হয়ে পড়েন। কোনো বড় কারণ না-থাকলে তিনি এই গ্রাম ছেড়ে কোথাও যান না। রামাল্লার আবাসিক এলাকা থেকে তার বাইরে বের হওয়ার দৃষ্টান্ত খুব বেশি না। তার মনের ভেতরে সব সময় ইসরায়েলি তল্লাশি চৌকির ভয় থাকে।
কারণ ইসরায়েলি পরিচয়পত্র ছাড়া ওই তল্লাশি চৌকি পার হওয়া যায় না। অধিকৃত ভূখন্ডের বাইরে গেলে তাকে আর ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আন্না বলেন, আমি অনবরত আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাকে ওরা এখান থেকে বের করে দিতে পারে বলে ভয় কাজ করছে। আমার সন্তানদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার ভয়। এখানে তাদের একা রেখে যেতে হতে পারে, সেই ভয়। কেবল রামাল্লা থেকে তিনি বের হতে পারছেন না; তা-ই না, ফিলিস্তিনে ঢোকার পর তিনি বিদেশ ভ্রমণেও যাচ্ছেন না। আন্না আরও বলেন, আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। তাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে যেতে পারিনি। ভাই বিয়ে করেছে, তাদের সন্তান হয়েছে। কিন্তু এতগুলো বছর ধরে তাদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ নেই।
তবে এটা সত্যি যে সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে আন্না আমেরিকা পাড়ি জমাতে পারেন সহজেই। কিন্তু এই ফিলিস্তিন ছেড়ে তিনি কোথাও যাবেন না। এই মার্কিন নারী বলেন, আমরা ফিলিস্তিনকে ভালোবাসি। আমরা ফিলিস্তিনের প্রতি অনুগত। ফিরে আসার অনুমতি পাওয়া ছাড়া আমরা ফিলিস্তিন ছেড়ে যেতে পারি না। যে কারণে আমরা এখানে, একটি ইসরাইলি আইডির অভাবে দুর্ভোগে রয়েছি। তাকে দেশ থেকে বের করে দিতে গত বছর ইসরায়েলি আদালতের একটি রুলিং পেয়েছেন। কিন্তু তার আইনজীবী অস্থায়ীভাবে সেই রুলিং স্থগিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
গত ২৩ বছর দরে তিনি ফিলিস্তিনে বসবাস করে আসছেন, ইসরায়েলের ভাষায়-যেটা অবৈধ। এই মার্কিন নারী বলেন, সব ফিলিস্তিনিই ইসরায়েলি নির্মিত কারাগারে আছেন। আমরা নিজেদের পরিচয়পত্র বহন করতে পারি না, এতে মনের ভেতরে দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আতঙ্ক কাজ করে সবসময়। যা দ্বিগুণ কারাদন্ডের মতো। এভাবে আরও কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি পরিচয়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। বছরের পর বছর ধরে তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.