ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ফায়েজ হত্যার পর কাবিলা গোষ্ঠীর সমর্থকদের বাড়িঘর লুটপাট ও ভাংচুর করেছে পান্ডু গোষ্ঠির সমর্থকরা। পুরুষশুন্য গ্রামে হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে পান্ডু গোষ্ঠির মোস্তফা ও রতনের নেতৃত্বে তাদের লোকজন কাবিলা গোষ্ঠীর নেতা জামশেদের সমর্থকদের বাড়িঘরের মালামাল, গরু-বাছুর লুটে নেয়। জামশেদের পক্ষ দাবী করছেন এরা টহলরত পুলিশের সামনেই এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করে লুটপাট করেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার নিমবাড়ী গ্রামে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুদনের নেতৃত্বে পান্ডুর গোষ্ঠী ও জামশেদের নেতৃত্বে কাবিলা গোষ্ঠীর মাঝে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে পান্ডুর গোষ্ঠীর লাবু মিয়ার পুত্র রহিজ উদ্দিনকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামশেদের সমর্থকগন গ্রামছাড়া ছিলো। ওই সময়ও তাদের বাড়ী-ঘরে লুট হয়। আদালত থেকে জামিন পেয়েও গত ৪ বছর গ্রামে ফিরতে পারেনি। ফলে গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রশাসন জামশেদের সমর্থকদের গ্রামে ফিরতে সহযোগিতা করে এবং উভয় পক্ষের সংগে বৈঠক করে শান্তিপুর্নভাবে সহবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নিহত ফায়েজের স্ত্রী রেখা বেগম ও রহিজের স্ত্রী নারগীছ বেগম জানায়; তারা উভয়েই কসবা থানা ওসিকে বলেছিলেন; তাদেরকে গ্রামে অবস্থান করতে দিলে এরা আবার কাউকে না কাউকে খুন করবে। কিনÍু পুলিশ আমাদের কথা পাত্তা দেয়নি বলে রেখা ও নারগীছ জানায়। “রহিজ ও ফায়েজের মা ফুলচাঁন বানু (৭০) বলেন; ভোরে ফায়েজ আমাকে ওযুর পানি দিয়ে দুধ নিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে খুন করেছে। এরা পর পর আমার দুই ছেলেকে খুন করেছে। মা হয়ে কিভাবে এ কষ্ট সহ্য করি।” জামশেদের সমর্থক নবীর হোসেনের স্ত্রী লুৎফা বেগম (২৫) জানায়; “ফায়েজ নিহত হওয়ার পর ওই দিন সন্ধ্যায়ই আমার সামনে আমার ঘরের সমস্ত মালামাল লুট করে। ঘরের আসবাব পত্র নিয়ে যায়। দুধের একটি গাভী, দুটি বলদও নিয়ে যায়। মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে কোলের শিশুকে জড়িয়ে বিলাপ করছিলেন লুৎফা।” গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী পারভীন আক্তার জানায়; তার স্বামী সৌদী আরবে থাকেন। ১ ছেলে ও ৪ মেয়ে। চোখের সামনে ওই রাতে ঘরের আসবাবপত্র, কাপড়-চোপর, ধান-চাউল, নগদ অর্থ, সোনা গয়না নিয়ে যায়। দালান ঘরের প্রতিটি কক্ষ একেবারে শুন্য। গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি হাজী মতি মিয়া বলেন; তার ছেলে আলমগীর মেম্বারের ৬টি গরু সহ ঘরের সমস্ত মালামাল নিয়ে যায় পান্ডুর গোষ্ঠীর লোকজন।
হাজী জামশেদের স্ত্রী জানান; ঘটনার দিন সকালে তার ছেলে মনির, ইয়াছিন ঘুমে ছিলো। তিনি বলেন; “আমি আমার স্বামীকে সকাল ৬টায় চা দেই। ফায়েজ নিহত হওয়ার পর রহিজ মিয়ার ছেলে আমার ৫টি গরু নিয়ে গিয়েছিলো। পরে গ্রামের সেলু মিয়ার অনুরোধে পান্ডু গোষ্ঠীর লোকেরা গরুগুলো ফেরত দেয়।” তিনি বলেন; গ্রামে প্রায় ৫ কোটি টাকার মালামাল গরু-বাছুর লুট হয়েছে বলে তিনি শুনতে পান। এতিম আলীর স্ত্রী জরিনা বেগম (৮০) জানান; আমাকে বাড়ি থেকে বের করে ঘরের সমস্ত মালামাল নিয়ে যায়। আবদুর রশিদের স্ত্রী শ্যামলী (২৫) জানান, আইনমন্ত্রীর নির্দেশে গ্রামে যাই। ২০১৭ সালে লুটে নিয়ে যাওয়া খালি বাড়িতে আমার ঘর নির্মান করি। এখন কোনো ঘর দরজা নাই। গ্রামের আবদুর রউফের স্ত্রী ফুলবানু (৭০) জানান; গ্রামের বাড়ি থেকে যারা ঘর দরজা ভেংগে নিয়েছে পুলিশ তাদের সবগুলোকেই চিনে। তারা বলেন; গ্রামের প্রায় ৫০/৬০ টি ঘরবাড়ী ভাংচুর ও লুটপাট করে নিয়ে যায়। তারা সর্বমোট ১১৩টি গরু লুট করে নিয়ে যায়। মুলগ্রাম ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি মো.শাহআলম বলেন; তিনি ঘটনার পরদিন নিমবাড়ী গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন; প্রায় ৪০/৫০টি বাড়ীতে লুটপাট হয়েছে। তিনি জেনেছেন বিভিন্ন বাড়ী থেকে সর্বমোট ১১৩টি গরু নিয়ে যায় পান্ডু গোষ্ঠির লোকজন। টহল পুলিশ থাকলেও গ্রামের কোনো কাজে আসেনি। সাংবাদিক দেখে পুলিশের লোকজন অন্যত্র সরে যায়। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়; বিভিন্ন বাড়িতে ঘরের দরজা, জানালাও খুলে নিয়ে গেছে। রহিজ মিয়ার স্ত্রী নারগীছ বেগম জানান ; আসামীরা নিজেদের মালামাল ও গরু বাছুর সরিয়ে নিয়ে লুট হয়েছে বলে প্রচার করছেন। কিন্তু তার বাড়ি উঠোনে বেশ কিছু দরজা জানালা ও স্টীলের আলমীরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। মূলগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো.মঈনুল ইসলাম জানান; ১৩ মার্চ সকালে ফায়েজ মিয়া খুন হওয়ার পর সন্ধ্যায় লুটপাট শুরু হয়। গত ১৯ মার্চ এরা নবী মিয়ার খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে গ্রামের লোকজন এসে আগুন নেভায়। কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলমগীর ভূইয়া জানান; নিমবাড়ীতে ফায়েজ হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী ইমন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। লুটপাটের বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। কসবা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাহিদ হাসান জানান; ক্ষতিগ্রস্থরা অভিযোগ দিতে পারেন। আমরা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।