বাঘারপাড়া (যশোর) প্রতিনিধি ॥ যশোরের বাঘারপাড়া আর মাগুরার শালিখা উপজেলার দশ গ্রামের মানুষের নদী পারাপারের দুর্দশা এবার লাঘবের পথে। ঝুঁকি নিয়ে বাঁশের সাঁকো পার হওয়ার দিন শেষের পথে। এই অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় চিত্রা নদীর ওপরে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় নৌকা ও আশির দশক থেকে বাঁশের সাঁকোই ছিল এখানকার মানুষের নদী পারাপারে একমাত্র উপায়। একটি সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসেই কেটে গেছে বহু বছর। কিন্তু মেলেনি কিছুই, এমনকি সরকারি কোনো সহায়তাও। তাই এবার তাদের নিজেদের অর্থায়ন আর স্বেচ্ছাশ্রমে নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে একটি কংক্রিটের সেতু। যার দৈর্ঘ্য ১৩০ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট। সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে নদী পারের হাজারও মানুষের দীর্ঘ সময়ের আক্ষেপ ও প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে।
বিরল এই দৃষ্টান্তটি স্থাপন করেছেন যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা ও মাগুরার শালিখা উপজেলার প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঘারপাড়া উপজেলার খানপুর বাজার সংলগ্ন চিত্রা নদীতে একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে মাটি তুলে সেতুর দুই পারে নদীর পাড় বাঁধার কাজ চলছে। কংক্রিটের এই সেতু নির্মাণে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে। অনুদান হিসেবে খানপুর বাজার কমিটি প্রয়োজনীয় সিমেন্ট, খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় এক লাখ টাকা, প্রধান শিক্ষক পঞ্চাশ হাজার, খানপুর গ্রামের সেলিম রেজা ত্রিশ হাজার, দাখিল মাদরাসা এক লাখ টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া শালিখা উপজেলার হরিশপুর গ্রামবাসী এক লাখ টাকা দিয়েছে এবং আরো সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, খানপুর বাজারে সপ্তাহের প্রতি শুক্র ও সোমবার হাট বসে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে বাজারসংলগ্ন চিত্রার পাড়ে নির্মিত বাঁশের সাঁকোই ছিল নদীর দুই পারের বাসিন্দাদের পারাপারের একমাত্র ভরসা। প্রতিবছর তাদের শ্রম ও চাঁদার টাকায় বাঁশ-খুঁটি কিনে সাঁকো নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়। নদীর ওপারে শালিখা উপজেলার কয়েক গ্রামের কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসল এই হাটে বিক্রি করতে আসে। প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন হাজারও মানুষের যাতায়াত করতে হতো নড়বড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়েই। সেতু নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা খানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি সেতুর জন্য বহুবার গিয়েও লাভ হয়নি। এমনকি তারা সাঁকো নির্মাণেও এগিয়ে আসেননি। বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি দুই উপজেলার ১০ গ্রামের প্রতিনিধিদেরসঙ্গে আলোচনা করে তারা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এটি নির্মাণে ১০ লাখ টাকা ব্যয় হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।