পৃৃথিবী আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে তা আন্দাজ করা যায় যখন কোন মানুষ হাসপাতালমুখী হয়। মানুষের বিবেক এবং মনুষত্বে এখন কালিমালিপ্ত হয়ে কড় পড়েছে বা বলা যায় অষাঢ় হয়ে অকেজোতে পরিণত হয়েছে। বিপদে বন্ধুর পরিচয় অথবা মানুষ মানুষের জন্য। আজ এই কথাগুলো যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। তবে এখনও পৃথিবীতে মানব সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাকলুকাত বেঁচে আছে। মানুষের মত মানুষ এখনও বেঁচে আছে তাই খোদা তায়ালা এই পৃথিবীকে ধ্বংস করেননি। সেই সাদুম ও গোমরা শহর ধ্বংসের পূর্বে এই যেই কথা বলেছিলেন সেই অনুযায়ী যদি একজনও ভাল মানুষ (যে উদ্দেশ্যে খোদা মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং খোদার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে দিনগুজার করছে) থাকে তাহলে শহর ধ্বংস করবেন না। তাই হয়ত আমরা বেঁচে আছি।
ডাক্তার দ্বারা মানুষের উপকার হয় আবার ডাক্তার দ্বারাই মানুষের ক্ষতি হয়। পার্থক্য শুধু ঈমান ও আমলের এবং খোদার প্রতি বিশ^স্ততার। তাই আমাদের ঈমান ও আমলের ব্যবহার জরুরী। প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রাত্যহিক জীবনে খোদার দেয়া জ্ঞান ও হুকুম এবং আহকাম ব্যবহার করে করণীয় ঠিক করা উচিত। যদি আমরা শয়তানের অধিনতা থেকে স্বাধীন হয়ে সৃষ্টিকর্তার অধিনতা মেনে নিয়ে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হই তাহলে আমাদের আগামী হবে সমুজ্জ্বল। পৃথিবী হয়ে উঠবে বেহেস্তের পরিপূরক এবং পৃথিবীতে এক নতুন স্বর্গ। আমরা এখন কি দেখছি আর কিইবা করছি তার হিসেব নিকেশ করা হুবই সহজ। এই অবসরে একটু ভাবুন এবং নিজের আমলনামা নিজে পরখ করুন; তারপর সিদ্ধান্ত নিন আগামীর করনীয়তে দুনিয়াবী কামিয়াবী (শয়তান পুজারী) না আখেরাতের কামিয়াবী (খোদার সান্নিধ্যে) বেঁছে নিবেন। তবে এখনই সময় আর এই সময় খোদা প্রদত্ত। শয়তান দুনিয়াকে দখলের নেশায় মত্ত আর খোদা তায়ালা শয়তানের কবল থেকে দুনিয়া এবং এর অধিনের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছেন এবং যাবেন। তবে কিয়ামত যখন আসবে তখন খোদা সবই ধ্বংস করে তিনি নিজেই সর্বেসর্বা হিসেবে অধিষ্ঠিত হবেন আর পৃথিবীর সকল কিছুর মধ্যে থেকে মানুষকে পুনরুজ্জ্বীবিত করে বিচারের সম্মুক্ষিন করাবেন। সেদিন থেকে কেউই রেহাই পাবেন না।
আসল কথা হলো করোনাকালীন রোগী ব্যবসা একটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যা মানুষের মৃত্যু যুকীর চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ লাভ করেছে। হাসপাতালগুলি প্রতিটি হাসপাতালের প্রবেশ দ্বারে দালাল নিয়োজিত করেছে; শুধু কি তাই করোনা টেষ্টের ক্ষেত্রেও এই একই চিত্র দৃশ্যমান। সরকার নির্ধারিত কিছু হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করা হয় কিন্তু সেই হাসপাতালগুলি আবার দালাল নিয়োজিত করেছে যেন ঐ হাসপাতালে মানুষ বেশী হয় আর এজন্য দালালদেরকে প্রতি রোগীতে ২০০/৩০০টাকা দিয়ে থাকে। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে কিভাবে মানুষ বিপদে রক্ষা পাবে। আল্লাহ তুমি হাসপাতাল ব্যবস্থায় এমনকি দালালীতে পরিবর্তন আনয়ন কর। দুভাগ্যক্রমে গত সপ্তাহে (১৮/০৪/২১) তারিখে ছোট ভাইয়ের করোনা বা পিসিআর পরীক্ষার জন্য ডিএনসিসি হাসপাতালে যাই কিন্তু গিয়ে জানলাম ঐ হাসপাতালে রিপোর্ট পেতে ২৪ঘন্টা সময় লাগে এবং আজকের পরীক্ষার সময়ও শেষ। তখন সদর দরজায় পাহারত সম্মানীয়দের কাছে তথ্য জানতে চাইলে তাহারা বলেন যে সদর দরজায় টাঙ্গানো ব্যানারে দেখুন কোন হাসপাতালে ১২ ঘন্টায় করা রিপোর্ট পাওয়া যায়। আমি আবার হেটে ঐ গেইটে গিয়ে ভালকরে পড়লাম সবগুলো হাসপাতালের নাম। ঠিক ঐ সময় কয়েকজন সাহায্যকারী (দালাল) বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত হামলে পড়ল। আমাকে একপ্রকার টানাটানি শুরু করে দিল যেন আমি তাদের আহার আর ঘোঘ্রাসে নি:শেষ করে দিবে। আমাকে তারা টানাটানি করে বলল যে, ১২ ঘন্টায় পরীক্ষা করিয়ে দিবে। আমার ভাই গাড়িতে বসা আর আমি তাদের বললাম আমি জানি এবং নিজেই করতে পারবো কিন্তু তারা মানতে নারাজ আর আমার গাড়িতে উঠে আমার সাথে হাসপাতালে যেতে প্রস্তুত। আমি বললাম আমি সবই পারব এবং আমার গাড়িতে আপনাদেরকে নিব না এমনকি দালালীর কোন সুযোগও দেব না। তারপর তারা বলল যে, আমার নামটা লিখে নিন অথবা ফরমটা এখান থেকে ফিলাপ করলে আমি কিছু টাকা পাই। আমি যাব না শুধু আমার নামটা আপনি ঐ ফরমে ব্যবহার করবেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতরা কোন হস্তক্ষেপ না করে তাদেরকে সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। পরিশেষে তারা আমার গাড়িতে যখন প্রেস লেখাটি দেখল তখন একটু দুরে গিয়ে তাচ্ছিল্লের দৃষ্টিতে তাকাল। এই লকডাউন সময়ে যদি আমার ভাই বিদেশ না যাইত তাহলে আমার হয়ত এই অভিজ্ঞতা হয়ত না। আল্লাহকে হাজার শুকরিয়া যে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তিনি জ্ঞানের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
আমাদের এখন কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় সেই বিষয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন। আর আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য তাঁর সান্নিধ্যে থেকে তাঁর হুকুম – আহকাম, ইচ্ছা ও অভিপ্রায় বুঝে কাজ করে যেতে হবে। তাহলেই সকল দুর্যোগ মোকাবেলা করে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তাই পৌঁছা যাবে।