প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশে সাধারণত বৃষ্টি, কালবৈশাখী ঝড় এমনকি শিলাবৃষ্টির আগমনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় নতুন বছরের। কিন্তু এরই মধ্যে বাংলা নববর্ষ-১৪২৮ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ চললেও দেশের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টিপাত খুব কমই হয়েছে। এমনকি অনেক জায়গায় এখন পযন্ত বৃষ্টির দেখাই মেলেনি। যা অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, পানির ঘাটতি ও খাবার পানির অভাব দেখা দিচ্ছে এবং বিশেষত উপকূল অঞ্চলের জেলাগুলোর পানিতে বেড়ে যাচ্ছে লবণাক্ততার হার।
সাতক্ষীরা ও বরগুনার মতো দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জেলাগুলো মারাত্মক পানির সংকটে পড়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মতো মিঠা পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে এবং টিউবওয়েলে পানিও দিন দিন কমে আসছে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে বাড়ছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, ইউরিন্যাল ইনফেকশান, চর্মরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গোপনাঙ্গে চুলকানি, ঘা’র মতো রোগ। নারীদের মধ্যে এই সকল রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিচ্ছে যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন: টিউমার এবং জরায়ু ক্যান্সারে রূপান্তরিত হচ্ছে। মার্চ-এপ্রিল মাসে পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ২টি ইউনিয়ন- ভাড়াশিমলা ও মথুরেশপুর এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দিকে তাকালে দেখা যায় কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার পুকুরের পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে। ফলে পুকুরের সাথে সংযুক্ত পন্ড স্যান্ড ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের বিভিন্ন পুকুরে দেখা দিয়েছে ব্যাঙাচির আধিক্য। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই অঞ্চলের দশটির বেশি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবারের মানুষ এই উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। এ ব্যাপারে নারায়নপুর গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, পানির আর কোন উৎস না থাকায় তারা এই পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন।
পানি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব প্রধানত নারীদের উপর বর্তায়। যখন পানির অভাব দেখা দেয় তখন তারা এই দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। ফলে নারীদের ভোগান্তি বাড়ছে যা পানির ঘাটতি ও সংকটের ‘নারীবাদিতা’ এর দিকে ধাবিত করছে। অপরিষ্কার ও দূষিত পানির ব্যবহারের কারণে অনেক নারী বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার মাহাতাব হোসেন জানান, ‘ইদানিং অনেক নারী ইউরিন্যাল ইনফেকশান, গোপনাঙ্গে চুলকানি এবং লিউকোরিয়ার মতো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন।’ পানির ঘাটতি নারী, কিশোরী এবং পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, কারণ আমরা জানি পানি জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি উপাদান। এর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে এবং করোনা মহামারী সময় এই সমস্যা দ্বিগুণ আকারে দেখা দিয়েছে। পানির সংকট এবং অভাবের কারণে গ্রামীণ সহিষ্ণুতা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরার এক মহিলা পানির ব্যবহারকারী জানান, বাজারে পানির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অধিকন্তু করোনা মহামারীর কারণে তাদের আয় কমে যাওয়ায় বাজার থেকে পানি কিনে আনার সক্ষমতা নেই। তাই তারা দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং এটি মহিলাদের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সমস্যার উদ্রেক করেছে।
একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘এই সংকট মোকাবেলায় একশনএইড বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে পানি সরবরাহ করছে। মাঝারি পর্যায়ে আমরা ভবিষ্যত জলবাযুর গতিবিধি বিবেচনা করে পানি সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন টেকসই সমাধানগুলো খুঁজে পেতে স্থানীয় জনগণের সাথে কাজ করছি। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার এবং এই জলবাযু সংকট মোকাবেলায় সরকার ও সকল উন্নয়ন সংস্থার একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রপতি বাইডেনের আমন্ত্রণে বিশ্ব নেতারা ২২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জলবাযু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের দক্ষণাঞ্চলের মানুষ যারা তীব্র পানি সংকটে রয়েছেন। তাদের সাথে ঐকমত পোষণ করে বলতে চাই -জলবাযু রক্ষার পদক্ষেপ যেন কেবল গ্রীণ হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নয; এর জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিয়ে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পায়।