আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর অর্থনৈতিক সংকট চরম পর্যায়ে পৌছেছে। অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে প্রায় অচলাবস্থা দেশজুড়ে। এ অবস্থায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দ্রুত গতিতে বাড়ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশটির আরো লাখ লাখ মানুষ অনাহারের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ আশঙ্কা প্রকাশ করে সংস্থাটি।
জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে মিয়ানমারের ৩৪ লাখের বেশি মানুষকে খাবার সংগ্রহ করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে উৎপাদন, নির্মাণ ও সেবাখাতে চাকরি হারানো লোকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় পরিস্থিতি বেশি খারাপ হতে পারে। মিয়ানমারে ডব্লিউএফপি’র আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফেন অ্যানডারসন বলেন, চাকরি হারানো দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক আর তাদের খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। খাদ্য নিরাপত্তার উদ্বেগজনক অবনতি রোধ করতে ও দুর্ভোগের আশু উপশমে এখন একটি সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, দেশটিতে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে চালের মূল্য পাঁচ শতাংশ ও ভোজ্যতেলের মূল্য ১৮ শতাংশ বেড়েছে। দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে বসবাসকারী পরিবারগুলো খাবার কমিয়ে দিয়ে কম পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে ও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রমের বিস্তার তিনগুণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, ফলে ৩৩ লাখ মানুষ সহায়তার আওতায় আসবে এবং এ জন্য ১০ কোটি ৬০ লাখ ডলারের তহবিলের আবেদন জানানো হয়েছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার মুখপাত্রকে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকে সেখানে অভ্যুত্থানবিরোধী টানা বিক্ষোভের মধ্যে ৭৩৮ জনের বেশি মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে নিহত হয়েছেন বলে দেশটির একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী জানিয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির ব্যাংকিং খাতও অনেকটাই স্থবির হয়ে আছে। অনেক ব্যাংকের শাখা বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দেনা শোধ করতে পারছে না, গ্রাহকরা অর্থ তুলতে পারছেন না। বিশ্ব ব্যাংকের পূর্বাভাস বলছে, মিয়ানমারের জিডিপি ২০২১ সালে ১০ শতাংশ হারে সংকুচিত হতে পারে।
সূত্র: রয়টার্স।