ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সমুহ থেকে লোকবলের অভাবে প্রায় সাড়ে তিনলাখ জনগোষ্ঠি সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। আবার কোনো কোনো কেন্দ্র একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানান, পুরো উপজেলায় ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার তিন লাখ ৭৯ হাজার ৫৪জন লোকসংখ্যার জন্য পৌরসভা ও ইউনিয়ন সমুহে ৫৭টি ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে এবং ৫৭টি উপকেন্দ্র রয়েছে। যেখান থেকে তৃণমুলে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সংক্রান্ত সেবা নিশ্চিত করা হবে। এ ছাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের সেবা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকার বিধি থাকলেও লোকবলের অভাবে এ কর্মকান্ড বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
উপজেলার মধ্যে বায়েক ইউনিয়নের কোনাঘাটা গ্রামে মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র রয়েছে। যা আধুনিক ও ১০ শয্যা বিশিষ্ট অপারেশন থিয়েটারসহ একটি স্বয়ং সম্পুর্ন হাসপাতাল। এতেও কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। জানা যায়, একজন এমবিবিএস থাকলেও তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। সরকার প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার ওষধ, যন্ত্রপাতিসহ সার্বিক খরচ নির্বাহ করলেও শুন্যপদ পুরনে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সরকারের এ মহৎ ও বৃহৎ কার্যক্রম এ উপজেলায় একেবারেই ভন্ডুল হয়ে গেছে। মোট ১০টি কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার থাকার কথা ১০ জন অথচ আছে মাত্র তিনজন। নেই সাতজন মেডিকেল অফিসার । এফডব্লিউভি ১৩ জনের পদ থাকলেও মাত্র ৬ জন কর্মরত আছে । বাকী পদ শুন্য রয়েছে। অন্যদিকে এফডব্লিওএ ৫৭টি পদের মধ্যে আছে ৩৫ জন। সবগুলো কেন্দ্রে ১ জন করে আয়ার পদ থাকলেও আছে মাত্র ২ জন। বাকী পদগুলো শুন্য রয়েছে। নৈশ প্রহরী ১০টি পদের মধ্যে আছে মাত্র ২জন। বাকী পদগুলোতে কোনো লোকবল নেই। বায়েক ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত বায়েক ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি এক বছরের বেশী মেয়াদকাল সম্পুর্ণ বন্ধ থাকায় ইউনিয়নের প্রায় তিনভাগ জনগোষ্ঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা থেকে বঞ্চিত। এই কেন্দ্রে সপরিবারে বসবাস করছেন বায়েক ইউনিয়ন পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মো.আলাউদ্দিন। তিনি জানালেন প্রতিদিন অফিস করেন একই ইউনিয়নের শেষপ্রান্ত কোনাঘাটা মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে। বায়েক কেন্দ্রটি বন্ধ কেন এ প্রসংগে আলাউদ্দিন বলেন, এ কেন্দ্রের সবাই অবসরে চলে গেছেন। আপনি পরিদর্শক হয়ে এ কেন্দ্রটি খোলার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন এ প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবেননা। একই ইউনিয়নের ভুক্তভোগী হানিফ মিয়া নামে এক ব্যক্তি জানান, সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোতে কোনো কার্যক্রম নেই । সবাই যার যার মতো করে চলছে।
কুটি ও বাদৈর কেন্দ্র’র বিষয়ে রয়েছে গর্ভবতী মায়েদের কাছ থেকে প্রসব সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতি জনে পাঁচ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ। তবে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ডাঃ জিয়া বলেন তিনি কুটি কেন্দ্রে তিনদিন কাজ করেন। বাকী তিনদিন বায়েক কোনাঘাটা মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে কাজ করেন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ইমন দুরবস্তার কথা স্বীকার করে বলেন; আমি প্রেষনে এ দায়িত্বে এসেছি। সমস্যাগুলো উপপরিচালক মহোদয়কে জানিয়েছি। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের বেহাল অবস্থার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অরুপ পাল বলেন; এর প্রধানতম কারন লোকবলের অভাব। তিনি বলেন, এবিষয়ে সিভিল সার্জনকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। আমি নতুন এসেছি তাই সবকিছু এখনো বুজে উঠতে পারিনি। তবে আমি সাংবাদিকসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।