শিমুলিয়া-বাংলাবাজারে জনসমুদ্র, বাড়ানো হয়েছে ফেরি

প্রশান্তি ডেক্স ॥ ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনন্দ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে সারা দেশজুড়ে। কিন্তু, আনন্দ ফিকে হয়ে গেছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে। ভাইরাসটি দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ শঙ্কা মাথায় রেখেই এবারের ঈদ উদযাপন করা হবে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবারই নাড়ির টানে বাড়ি ফেরে মানুষ। বাস, ট্রেন, লঞ্চ, মিনি বাস, ট্রাক বিভিন্নভাবে যাত্রা করলেও এবার সেই সুবিধা তেমনভাবে পাচ্ছে না জনগণ। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ।
২১ জেলার মানুষ বাসে করে যাতায়াত করতেন। মাঝে নদী থাকায় বাসগুলো পারাপার হতো ফেরির মাধ্যমে। এ বছর সেই ফেরিকেই যাতায়াতের মূল মাধ্যম বানিয়েছে ঈদে বাড়ি যেতে মরিয়া মানুষগুলো। দূর পাল্লার বাস বন্ধ, তাই তাদের মূল ভরসা ফেরি। গত বৃহস্পতিবার শেষ দিনের যাত্রায় মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে জনস্রোত অব্যাহত রয়েছে। লকডাউনে বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সকাল থেকে হাজার হাজার যাত্রী জড়ো হচ্ছেন ঘাটে। গত কয়েকদিনের মতো শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ। বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত সদস্য। পাশাপাশি কাজ করছে বিজিবি।
ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের সুবিধায় প্রথমে ১৬টি ফেরি চালু করে বিআইডব্লিউটিসি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় এই নৌপথে বাড়ানো হয়েছে ফেরির সংখ্যা। এখন ১৭টি ফেরি চলাচল করছে এই রুটে। বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় পেরি বাড়িয়ে ১৭টি চালানো হচ্ছে। শিমুলিয়ায় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় যানবাহন আনলোড করা সম্ভব হচ্ছে না, তাই আমরা বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে কোনো যানবাহন লোড দিচ্ছি না।
সালাউদ্দিন আরও বলেন, গতকাল একটি লোড ফেরি শিমুলিয়া থেকে আবার বাংলাবাজার ঘাটে ফিরে আসে। দুই ঘাটেই যানবাহনের চাপ আছে। তবে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রীদের চাপ বেশি। বাংলাবাজার ঘাটে আসা যানবাহনগুলোকে বিকল্প নৌপথ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবহন পারাপারের ঘোষণায় বেড়েছে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা। যাত্রী আর যানবাহন পারাপারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বর্তমানে ১৭টি ফেরি সচল রয়েছে। বিআইডব্লিউটিসির সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) ফয়সাল আহমেদ জানান, তিনটি ঘাটেই ডাম্প, রোরো ও মাঝারি আকৃতির ফেরিগুলো চলাচল করছে।
ভোর থেকেই ঘাটে প্রবেশের সবগুলো পথ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যাত্রীরা ঘাটে আসছেন। যাত্রী সংখ্যা ব্যাপক হলেও ফেরিতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ওঠানো হচ্ছে তাদের। যানবাহনও তোলা হচ্ছে নিয়ম মেনেই।
বাংলাবাজার ঘাটে ভেড়া ফেরিগুলোয় কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও লাশবাহী গাড়ি ছাড়া ছিলেন হাজার হাজার যাত্রী। ফেরিতে গাদাগাদি করে পার হচ্ছেন তারা। বাংলাবাজার ঘাটে নেমে যাত্রীরা সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাহেন্দ্র, ইজিবাইকে করে ভেঙে ভেঙে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় যাচ্ছেন। এতে যাত্রীদের দ্বিগুণের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক হিলাল আহমেদ জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। ঘাট এলাকায় বর্তমানে দুই শতাধিক ব্যক্তিগত ছোটগাড়ি ও ১৫০টি ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। যাত্রী চলাচল ও ঘাট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। পাশাপাশি কাজ করছে বিজিবি। বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান জানান, শিমুলিয়ায় আসা যানবাহনগুলো বিকল্প নৌপথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ব্যবহার করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.