সাংবাদিক নির্যাতনে নতুনত্ব

যুুগে যুগে সাংবাদিকগণ নির্যাতিত হয়েছেন এবং হবেন। তবে এবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকে নতুনত্ব এনেছেন বৈকি। এই নতুনত্বে একটি গানের কলি মনে পড়ে গেল “বুদ্ধিমান বাধিল পাষানে ঘর”। এই ঘরের নিচে বা ছায়াতলে বেশীদিন টিকা যায় না এমনকি যাবেও না। পুর্বে অনেক সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন; কারাবরন করেছেন এমনকি মামলায় জর্জরিত হয়েছেন যা নিরবে ছিল আর এখন প্রকাশ্যে এসেছে মাত্র। সরকার একটি যুগান্তকারী আইন করেছেন যার নাম তর্থপ্রযুক্তি আইন। কিন্তু সেই আইন যথোপযুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়নি এমনকি যেন তেনভাবে ঐ আইনে নিরপরাধ ও নিরীহ এমনকি দলীয় অন্ধভক্তদের জীবন বিষিয়ে দিয়েছে। কারা করেছে আর কাদের করার ক্ষমতা রয়েছে তা বলার অবকাশ থাকেনা। তবে পানি নিচের দিকে গড়াই এবং সেই নীচে পড়ে নিরিহ ও নিরাপরাধ মানুষেরই জীবন বিপন্ন হয়েছে এবং হবে। তবে ঐ সময় বর্তমানের মত সাংবাদিকদের ঐক্যমর্ত প্রকাশিত হয়নি তাই আজকের এই উদ্যত্ত্ব। তবে কোন কোন সময় নির্যাতিতরাও সরকার সমর্থক বলে সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চায়নি এমনকি নিস্পেষকদের মোকাবিলা করতে চায়নি তাই আজকের দিনটি প্রকাশীত হতে সহায়তা পেয়েছে।
তবে সাংবাদিক বলতে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক এমনকি ত্রৈমাসিক সহ সকলকেই বোঝায় কিন্তু বাস্তবতা হলো সাংবাদিক ফোরাম বা নেতারা দৈনিক ছাড়া আর কারোরই কোন খবর রাখেন বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না। তাই আমার অনুরোধ সকলের সমন্বয়ে একটি ফোরাম গঠিত হউক এবং সকলের সুখ-দু:খে পাশে থাকার অঙ্গিকারে আবদ্ধ হউক আমাদের আগামীর পথ চলা। আজকে রোজিনা ইসলামকে নিয়ে যে একট্টা সৃষ্টি হয়েছে তা জোয়ারে পরিণত করে সামনে এগুতে সাংবাদিক সমাজের দিক্ষা হউক। রোজিনা ইসলাম বলে কথা; কিন্তু পুর্বেওতো অনেক ইসলামই কারাবরন করেছেন এবং নির্যাতনের স্বিকার হয়েছেন তখনতো এই একট্টা ও জোরালো দাবী ছিল না। কেন ছিল না তার কারন অজানা। তবে আজকের এই জোয়ারে কিন্ত দল মত নির্বিশেষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে একট্টা হয়েছেন তাই এই একট্টা কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাই একে কোন রাজনৈতিক রঙ্গে রাঙ্গাবেন না। অন্যায় অন্যায়ই আর অন্যায়ের প্রশ্রয়দানকারী ও সমান অপরাধী।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারের নেয়া জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত এবং এই অন্যায় যেই-ই করুকনা কেন তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং শাস্তি অবধারিত। অতীতেও অনেক রাঘব বোয়াল এই শাস্তির অধীনে খাঁচাবন্দী রয়েছেন আর ভবিষ্যতেও থাকবেন এটাই বিধাতার বিধান। এই বিধানেই পুরোপুরি আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে আমার সরকার (শেখ হাসিনার সরকার) দন্ডায়মান। তাই কারো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে সরকারের উন্নয়ন ও দেশীয় ভাবমূর্তী বিনষ্ট করতে নারাজ। যারা এই অন্যায়ের সঙ্গে যুক্ত তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ আশু কাম্য। কোনকিছু হলেই উপর মহলের দোহাই দিয়ে অথবা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দোহায় দিয়ে পার পাওয়ার অভ্যাস বদলাতে হবে। লোকোচুরি খেলা বন্ধ করতে হবে। মামলা ও হামলা বন্ধ করে যথাযোগ্য সম্মান সর্ববস্থায় বিরাজমান রাখতে হবে। নতুন করে ভাবতে হবে আইন -কানুন নিয়ে। যে আইন কানুনগুলি সমস্যার ভেড়াজালে জর্জরিত সেইগুলি সংশোধন আশু কাম্য।
নতুন করে বলতে হচ্ছে যে, রিমান্ড, পুলিশী তদন্তে গতানুগতিক ধারা দূর করতে হবে এবং যে ধারায় মানুষের আস্থা শতভাগ বিনষ্ট হয়েছে সেগুলিকে পুনরুদ্ধারকল্পে নতুন পদক্ষেপ নিয়ে এগুতে হবে। ভোক্তভোগী ছাড়া এই সম্পর্কে কেউ বুঝতে ও বলতে পারবে না; শুধু ভোক্তভোগীরাই এই বিষয়ে পুরোপুরি অবগত। আরেকটি বিষয় হলো কারাবরন বা বন্দিজীবন। এই দুটি শব্দের ব্যাখ্যা ও সময়োপযোগী বিশ্লেষণ এবং সংযোজন ও বিয়োজন প্রয়োজন। যেমন একটি মামলা হলেই কারাগারে প্রেরণ করা বা বন্দী করে রাখা পুরোনো অভ্যাস। জামিন বা বেইল না হওয়া পর্যন্ত কারাবাস করা। এই অংশের পরিবর্তন সময়ের জোড় দাবী। সবকিছুই যুগোপযোগী এবং ডিজিটাল হয়েছে এখানেও এই ডিজিটাল পদ্ধতি দেখতে চাই। মামলা হবে এবং আইন অনুযায়ী বিচার কাজ সম্পন্ন হবে। নিরপেক্ষতার সকল দৃষ্টান্ত উন্মুক্ত রেখে বিচারের রায় ঘোষিত হবে আর সেই রায়ে দোষি সার্বস্ত্য হলেই কারাবাস বা কারবরন করাতে বা বন্দি হিসেবে বন্দি করতে হবে। নতুবা মামলা হলেই কারাগারে প্রেরন করা অন্যায়; এটা বন্ধ করতে হবে। অন্যায় কাজে প্রমানস্বরূপ অভিযুক্ত না হয়ে নিরপরাধ মানুষ কেন কারাবন করবে এই প্রশ্ন স্বাধীন জাতির বিবেকের। দেশ স্বাধীন করে কি এই উপনিবেশীক পরিণতি ভোগ করতে হবে। যদি দোষি স্বাব্যস্ত না হয় তাহলে ঐ হয়রানি বা নির্যাতন এমনকি কারা অভ্যন্তরের সকল কষ্ট লাগবে রাষ্ট্র বা আইন কি পদক্ষেপে নিবে? এই বিষয়েও স্বচ্চতার আলোকে ন্যায় ও নীতির দৃষ্টান্তনির্ভর ব্যাখ্যাসহ যুগোপযোগী আইন প্রয়োজন। ধরুন রোজিনা ইসলাম নি:র্দোশ এবং তিনি জামিনে বা নি:শর্তভাবে অথবা মামলা প্রত্যাহার হয়ে বের হয়ে আসবেন কিন্তু তিনদিন বিনা বিচারে বা নি:র্দোশ কারাবরন কেন করবেন বলতে পারেন কি?
একজন সম্মানীত সচিব মহোদয় আমাকে বললেন মামা আপনি যেদিন পত্রিকার সম্পাদক হলেন সেদিন থেকেই আপনার এক পা কারাগারে আর এক পা বাহিরে। সুতরাং কারাগার এবং বাসা দুটোই এখন আপনার প্রিয় বস্তুতে পরিণত হয়েছে। তাই দু:খ করবেন না কারাগারকে শ্বশুর বাড়ি মনে করে মাঝে মাঝে বেড়ায়ে আসবেন আর কি?। কথাটি শুনে হাস্যকর মনে হলেও একেবারে সঠিক। এই দেশটা আমাদের সকলের। সাংবাদিক, কৃষক, কুলি, মুজুর, ডাক্তার, শিক্ষক, কামার, উকিল, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী মোটকথা এই দেশের অভ্যন্তরে জন্মনেয়া প্রতিটি নাগরিকের। তাই সকলে মিলেই এই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগামীতাই শরীক হয়ে স্বাক্ষর রাখব এবং রেখেছে। কারো একক প্রচেষ্টায় উন্নয়ন অগ্রগতি কখনো সম্ভব হয়নি এবং হবেও না। দেশ স্বাধীন করার সময় যেমন সকলের অংশগ্রহনে সফলতা এসেছিল আর আগামীতেও আসবে ইনশাআল্লাহ। সাংবাদিকরা আপনাদের কারো শত্রু নন এবং দেশেরও শত্রু নন বরং তারা আপনাদের বন্ধু। সুখে দু:খে আপনাদের পাশে থেকে সংশোধনের রাস্তা প্রসস্থকরণে এমনকি সামনে এগিয়ে যাওয়ার গতিকে তরান্বিত করণে অথবা ভাল ও মন্দের মানদন্ডকে দন্ডায়মান রাখতে নিরলস কাজ করে যাওয়া দু:দিন ও সুদিনের বন্দু। হ্যা কখনো কখনো আপনার বিপক্ষে গেলেও তা জাতির; সরকারের বা রাষ্ট্রের কল্যাণের তরেই হয়। তবে সকলকে সুখি বা খুশি করা কোন সাংবাদিকের পক্ষে সম্ভব নয় যা সৃষ্টিকর্তাও তাঁর সৃষ্টিকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারে নি। আপনি একটু চিন্তা করুন এবং সেই চিন্তার ফল প্রকাশে আপনার জ্ঞান ব্যাবহার করে সামনে অগ্রসর হউন।
আমি শেষাংসে বলতে চাই রোজিনা ইসলামকে নি:শর্ত মুক্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত রাখুন এবং একইভাবে আরো যারা বিভিন্ন মামলায় ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন তাদেরকে মুক্ত করে নতুন দৃষ্টান্তের উচ্চতায় অবস্থান করে দেশ ও জাতিকে দিশা দেখিয়ে চলমান উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বেগবান রাখুন। মত প্রকাশের পুনাঙ্গ স্বাধীনতা বিরাজমান রাখুন এবং কল্যাণের তরে দোষত্রুটি প্রকাশ করার ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত রেখে সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে এই বাণি সত্যে পরিণত হতে সহায়তা করুন। সংবাদিক মানে খারাপ নয় তেমনি করে সাংবাদিক মানে ক্ষমতাধর কোন অবস্থানও নয় বরং উভয়ে উভয়ের পরিপুরক হয়ে কাজ করুন। কেউ কারো অধিনতা মেনে নিতে অপারগতা প্রকাশের অনিহায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে কাজ করুন। যদি আপনি সম্মান পেতে চান তাহলে আগে নিজে সম্মান প্রদর্শন করে দেখান। তাহলেই আপনি সম্মানিত হবেন একশতভাগ নিশ্চিত। আবারও বলছি দেশের সম্মান বিলিয়ে বা বিকিয়ে দেয়ার মত কোন কাজ কারো দ্বারাই কাম্য নয়। কাউকে ক্ষেয় বা ছোট করে নয় বরং বড় করে সম্মান সুপ্রতিষ্ঠিত করুন। ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে এসে জাতির সেবায় নিয়োজিত হউন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.