স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কেউ আসেন খুলনা হতে। কেউ আসেন সাতক্ষীরা হতে। কেউ আসেন নীলফামারী, সিলেট, মানিকগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ হতে। ঘর থেকে টাকা নিয়ে ঢাকায় এসে মোহামেডান, আবাহনী, বসুন্ধরা কিংসের মতো দামি ক্লাবগুলোর খেলা পরিচালনা করেন রেফারিরা। নিজের টাকায় ঢাকায় এসে হোটেলে অবস্থান করেন। পকেটের টাকায় খাওয়া-দাওয়া করেন। অথচ খেলা শেষে অতৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফিরে যান ফুটবল দুনিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী রেফারিরা। কারণ ম্যাচ শেষে সঙ্গে সঙ্গে পারিশ্রমিক পান না। ঘরে ফিরে গেলে পরিবার জানতে চায় টাকা পেয়েছে কি না। মুখে সেই পুরনো জবাব ‘বিল হয়নি’। এভাবে রেফারিরা দিনের পর দিন ঘরের টাকা এনে খেলা চালিয়ে আবার ঘরে ফিরে যান। কিন্তু মাস গেলেও পারিশ্রমিকের দেখা না পাওয়া গেলে পরিবার থেকেই উৎসাহ পান না অনেক পরিশ্রমে গড়ে উঠা বাংলাদেশের ফুটবল রেফারিরা।
বছরের পর বছর বিল জমা পড়ে থাকে বাফুফে ভবনে, সাধারণ সম্পাদকের টেবিলে। তিনি চাইলে হবে, না চাইলে হবে না। তার আবেগ-অনুভূতির ওপর নির্ভর করতে হয় ফুটবল রেফারির পরিবারকে। তবে কিছু দিন একটি ভিডিও বার্তায় লিগ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী জানিয়েছিলেন, তারা রেফারিদের বিল দিচ্ছেন। আর হেড অব রেফারি আজাদ রহমান বললেন, ‘কিছু চেক ইস্যু হয়েছে।’ স্বস্তির এই খবরে অন্য রেফারিরাও খুশি। নারী রেফারিদের বকেয়া নেই।
পাইওনিয়র ফুটবল, ফেডারেশন কাপ, বাংলাদেশ গেমস, প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ তৃতীয় বিভাগ লিগের খেলা পরিচালনাকারী রেফারিদের পারিশ্রমিক বকেয়া ছিল ৬০ লাখ টাকা। বাফুফে হতে ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ফিফার কাছ থেকে এতো এতো টাকা আসছে অথচ রেফারিদের সামান্য পারিশ্রমিক বকেয়া পড়ে থাকাটাকে দৃষ্টিকটুই দেখছেন ফুটবল সংগঠকরা। ক্লাবগুলো বলছে, রেফারিদের পারিশ্রমিক দেওয়ার দায়িত্ব বাফুফের।
উপমহাদেশে বাংলাদেশে রেফারিদের মান অনেক ভালো। পারিশ্রমিক ভারতের মতো না হলেও যারা ঢাকার বাইরে হতে আসনে তারা ৮ হাজার ২০০ টাকা পান ম্যাচে। ঢাকার মধ্যে হলে ২ হাজার ৯০০ টাকা পান। প্রিমিয়ার লিগে ৩৫, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে ৩০ তৃতীয় বিভাগ লিগের জন্য ৪০ জন রেফারি রয়েছেন। নারী রেফারি আছেন ৩০ জন। ফিফা ব্যাজধারী রেফারি ১২ জন এবং দুই জন নারী। আছেন প্রথম শ্রেণির রেফারি, সাবেক ফিফা রেফারি, এক সময়ে খেলা পরিচালনার জন্য রেফারির সংখ্যাটা খুব কম ছিল। এখন সারা দেশে ৫ থেকে ৭ হাজার রেফারি।
এখন খেলা বেড়েছে, রেফারিও বেড়েছে।
দেশে এখন নিয়ম হচ্ছে খেলা শেষ সঙ্গে সঙ্গে রেফারি তার বিলটা হাতে পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা হয় না। খেলা শেষ করে এসে ড্রেসিং রুমে একটা রুটি, কলা, ড্রিংকস খেয়ে আবার পকেটের টাকায় বাসে টিকিট কিনে বাড়ি ফিরতে হয়। এই আধুনিক যুগে বাফুফের রেফারিজ কমিটি খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রেফারির পারিশ্রমিকটা দিতে পারে না। রেফারি ক্লান্ত পরিশ্রান্ত শরীরে বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে বাড়ি ফেরেন শূন্য হাতে। একাধিক রেফারি বললেন, ‘আমাদের অনেকেই সংসার নির্ভর করে ফুটবল খেলার ওপর। ছয়-নয় মাস পর বিল পেলে কষ্ট হয়। তার ওপর করোনায় সংসার চলছে না।’ খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিল দেওয়া হায় না কেন। সাবেক রেফারি আজাদ রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুঃখের কথা শোনার কেউ নেই। যাই হোক এই কোভিডকালে খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলটা পেলে খুব উপকার হয়।’