রোগী ভাগিয়ে নেওয়া হয় এমপির ক্লিনিকে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, একজন সংসদ সদস্যের স্বজনেরা এই সিন্ডিকেটের সদস্য। ঐ সংসদ সদস্যের ১১ জন স্বজন শিশু হাসপাতালে কর্মরত। এর মধ্যে এক জন ডাক্তার না হয়েও চিকিত্সকের পদ দখল করে আছেন। তারা বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
দীর্ঘদিন ধরে এই সংঘবদ্ধ চক্র হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীদের প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করাচ্ছে। সেখানে চিকিত্সার নামে এসব রোগীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে আইসিইউ ও সিসিইউ সাপোর্টের প্রয়োজন হলে সিট খালি নেই বলে তাদের বেসরকারি ঐ ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। বেসরকারি ক্লিনিকটির মালিক ঐ সংসদ সদস্যসহ আট জন চিকিত্সক।
এদিকে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনে ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। বছরের পর বছর এ রকম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। অবৈধভাবে ফুটপাত দখলে থাকায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগী ও তার স্বজনসহ পথচারীরা। ফুটপাত দখল করে দেওয়া হয়েছে খাবারের হোটেল, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, জুতার দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। সড়কে বসানো হয়েছে চিকিত্সা সরঞ্জামের দোকান।
এসব দোকানের মূল ক্রেতা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু), ঢাকা শিশু হাসপাতাল, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের রোগীরা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের সামনের যাত্রীছাউনির ভেতরে বসানো হয়েছে ওষুধের দোকান। এর পাশে রয়েছে খাবারের হোটেল। এসব অবৈধ দোকানপাট থেকে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজিও হচ্ছে। চাঁদার ভাগ পায় তিন গ্রুপ। তারা হলো—একশ্রেণীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, পুলিশের কর্মকর্তা এবং ঐ সংসদ সদস্যের আত্মীয়স্বজনসহ হাসপাতালে কর্মরত একশ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে অ্যাম্বুলেন্সের গাড়িও সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে।
এসব অ্যাম্বুলেন্সের মালিক একটি রাজনৈতিক দলের একশ্রেণির নেতাকর্মী ও হাসপাতালের কর্মচারী। ট্রাফিক পুলিশের একশ্রেণির কর্মকর্তা বখরা পান বলে কিছু বলেন না। এ ব্যাপারে পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’ ট্রাফিক পুলিশের তেজগাঁও জোনের ডিসি সায়েদ আল মাসুদ বলেন, উভয় পক্ষের সহযোগিতা লাগবে। উচ্ছেদ করলে তদবির আসে বিভিন্ন মহল থেকে। এদিকে কোভিড-১৯ পরীক্ষা কেলেঙ্কারির সঙ্গে শিশু হাসপাতালের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এই হাসপাতালের নাম ভাঙিয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের একটি
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অন্য জায়গা থেকে ৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করায়। বেসরকারি ঐ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিটি নমুনা পরীক্ষার জন্য রোগীদের কাছ থেকে নিয়েছে ৫ হাজার টাকা। তারা এগুলো পরীক্ষার জন্য শিশু হাসপাতালের নামে (রেফারেন্সসহ) পাঠাত ঐ বেসরকারি হাসপাতালে। শিশু হাসপাতালের ঐ গ্রুপ প্রতিটি কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষায় পেত ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল নিত দেড় হাজার টাকা। শিশু হাসপাতালের দুজন কর্মী এ কাজের জন্য টাকা লেনদেনসহ নমুনা সংগ্রহসংক্রান্ত সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যাদের এ-সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এই দুর্নীতির ঘটনা একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ধরা পড়ে। ঐ গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে প্রমাণও পায়, জড়িতরা স্বীকারও করেন। পরবর্তী সময়ে শিশু হাসপাতাল গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অধিকতর তদন্তের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সৈয়দ শফি আহমেদ বলেন, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়মমাফিক ঢাকা শিশু হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে। কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না। হাসপাতালের আর্থিক বিষয়টিও স্বচ্ছতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। ফান্ডের টাকায় কোনো ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published.