কসবায় মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর কর্মকর্তা ও সাবেক পৌর কমিশনারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবার সীমান্তবর্তী গ্রাম আকবপুরে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা দিয়ে স্থানীয় জনগণকে নানাভাবে হয়রানী করার অভিযোগ ওঠেছে সাবেক পৌর কাউন্সিলর আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। গ্রামের পাহাড় ও জমি কেটে পুকুর বানানোর ফলে সড়ক ও বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে পড়ার নমুনা ধরায় ভুক্তভোগী জনগণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এতে তাহের ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে মাদকের অভিযোগ এনে বিভিন্ন সংস্থা দিয়ে হয়রানী করছে বলে জানা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়; গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাত ২ টায় আকবপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রী জয়নাল আবেদিনের বাড়িতে হানা দিয়ে তার শ্যালক মুরছালিনকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন গ্রেপ্তার করে। মুরছালিন এ প্রতিবেদককে জানায় সে বার বার আকুতি করে জানায় যে সে তার বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছে। সে একজন প্রবাসী। সে পাসপোর্ট দেখিয়েছে। তবু তাকে ছাড় না দিয়ে একটি মাদকের ব্যাগ হাতে নিতে বলে। মুরছালিন ওই ব্যাগ হাতে না নিলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন মুরছালিনকে তীব্র ভাষায় গালমন্দ করে। পরে মুরছালিনকে নিয়ে পাশবর্তি প্রবাসী মোছলেম মিয়ার বড়িতে যায়।
মোছলেম মিয়া জানায়; ওই রাত আড়াইটা থেকে ভোর পর্যন্ত তার বাড়ির গেইট ভাঙ্গার তীব্র চেষ্ট্রা চালায় আবগারীর লোকেরা। এমতাবস্থায় মোছলেম মিয়া সকাল না হলে গেইট খুলবে না জানিয়ে ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে বিস্তারিত জানায়। ভোর রাতে কসবা থানা থেকে সাব ইন্সপেক্টর মাসুদ ও গনমাধ্যমের লোকজন পৌঁছলে মোছলেম মিয়া সকালে গেইট খোলে দেন। পরে তারা ঘরে তল্লাশী চালায়। তল্লাশী করে কিছু না পেয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকের মুরছালিন, মোছলেম ও তার পরিবার পরিজন থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এক পর্যায়ে মোসলেম ও মুরসালীনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাওয়ার চেষ্ট্রা করলে পুলিশের আপত্তির মুখে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা তাদের রেখে যেতে বাধ্য হন।
গ্রামের লোকজন জানায়; কিছুদিন পর পর নির্দিষ্ট কয়েকটি বাড়িতে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোকজন মাদক আছে বলে হানা দেয়। গ্রামের শাহজাহান মিয়া, ফারুক মিয়া, হেলেনা বেগম, নিয়ামত হোসেনসহ আরো অনেকেই বলেন সাবেক কমিশনার ইতোপূর্বে থানা পুলিশ দিয়ে হয়রানী করতো। পুলিশ বুঝতে পেরে তার কথামতো কাজ করেনা বিধায় এখন আবগারীর লোকজন দিয়ে হয়রানী করছে। অথচ গ্রামে যারা প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী তারা রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। গ্রামের লোকজন আরো জানায়; আকাবপুর গ্রামের পাহাড় ও ফসলী জমি কেটে মাটি বিক্রি করার দায়ে আবু তাহেরকে কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার একাধিকবার জরিমানা করেছেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিস সুত্রে জানা যায় পাহাড় কেটে পুকুর করার অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে তাকে জরিমানা করা হয়েছে।
আকাবপুর গ্রামের আবু তাহেরের বাড়ীর দক্ষিন পাশে জমি কেটে বিশাল পুকুর তৈরি করেছেন। বেশ কয়েক বছর যাবত সেখানে তিনি মাছ চাষ করেন। পুকুর ঘেঁষা পাহাড়ী টিলায় মোছলেম, জয়নাল, শাহজাহান মিয়ার বাড়ী। তাদের বাড়ী যাওয়ার রাস্তা ঘেঁষে কোনো প্রকার সরকারী অনুমতি ব্যতিত জমি ও টিলার অংশসহ পুকুর কাটায় প্রতিনিয়তই রাস্তা ভাংগছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, বর্তমানে তাদের বাড়িঘর ভাংগার উপক্রম হয়েছে। তাই তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌর মেয়র ও পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ পেশ করেছেন। এতেই সাবেক কমিশনার আবু তাহের তাদের উপর নাখোশ।
এ বিষয়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান মুঠোফোনে জানান; তার কাছে অভিযোগ ছিলো মোছলেম মিয়ার ঘরে ভারতীয় গাঁজা আছে। তাই তিনি সেখানে অপারেশনে গিয়েছিলেন। তিনি আরো বলেন মুরছালিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি সাবেক কমিশনার আবু তাহেরের পরামর্শে অভিযানে করেননি।
সাবেক কমিশনার আবু তাহের বলেন; এরা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে সত্য। তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে মাদক অধিদপ্তরের কাউকে প্রভাবিত করিনি।
কসবা থানা সাব ইন্সপেক্টর মাসুদ জানান ট্রিপল নাইন (৯৯৯) থেকে ম্যাসেজ পেয়ে অফিসার্স ইনচার্জের নির্দেশে আমি আকাবপুর গ্রামে গিয়ে দেখতে পাই এরা মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোকজন। জয়নাল ও মুরছালিনের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখাতে পারেননি তাই তাদেরকে ছেড়ে দিতে বলা হয়।
মোসলেম মিয়ার স্ত্রী হেলেনা বেগম জানান; মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের লোকজন আমাকে ও আমার কলেজে অধ্যয়নরত ছেলেকে হুমকি দিয়ে যায় যে কোনো মুল্যে তারা আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাবে। বিষয়টি আমরা আইনমন্ত্রী মহোদয়কেও জানিয়েছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.