সুুবুদ্ধির উদয় হউক

সুবুদ্ধির ডাক কথাটি আল্লাহর আর তিনি এই ডাক দিয়েছিলেন আজ থেকে বহু বছর পূর্বে (খ্রীষ্টপূর্ব ৯০০-৭০০) হযরত সোলায়মান আ: এর মাধ্যমে) (যাকে আমরা বাদশা সোলায়মান হিসেবেও চিনি এবং জানি ও মানি। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি শিক্ষা দিয়েছেন: এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি এমনকি মানুষের ও মানবতার কল্যাণে সৃষ্টির প্রয়োজনে ব্যবহার করি। যেমন ধরুন সুবুদ্ধি, নিবুদ্ধিতা সম্পর্কে, প্রতিদিনকার জীবনের নৈতিকতা সম্বন্ধে, জ্ঞানী লোকের দেয়া উপদেশ সম্বন্ধে, বিভিন্ন লেখকদের দ্বারা বা লোকদের দ্বারা দেওয়া উপদেশ সম্বন্ধে, মা-বাবার দেয়া শিক্ষা দান সম্বন্ধে, আদর্শ স্ত্রী ও মা সম্বন্ধে। কি নেই ঐ শিক্ষাগুলোই। কোন অভাবইতো নেই ঐ শিক্ষাগুলোই; কিন্তু অভাব আমাদের চেতনার এবং মননের ও মনোভাবের এমনকি বিশ্বাস ও চর্চার। যুবকদের প্রতি উপদেশ, সুবুদ্ধির ডাক, সুবুদ্ধির দান, জ্ঞানীদের পথ, জেনা সম্বন্ধে সতর্কবানী, নিজের স্ত্রীতে আনন্দ, বোকামী সম্বন্ধে সাবধানবানী, জেনা সম্বন্ধে সাবধানবানী, জেনাকারনীর দাওয়াত, সুবুদ্ধির দাওয়াত, সুবুদ্ধি আর নিবুর্দ্ধিতার দাওয়াত, বাদশাহ সোলাইমান আ: এর সৎ উপদেশ, জ্ঞানী লোকদের উপদেশ, গুনবর্তী স্ত্রী সম্বন্ধেও বলা আছে। কিন্তু আমাদের জীবনে এই শিক্ষাগুলোই কি আমাদেরকে সঠিক এবং সরল পথে সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে পরিচালিত করতে পারে: হ্যা পারে এবং পারবে ও পেরেছে।
আজকের লিখার বিষয় শুরু করার পূর্বে কিছু কথা যা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন তা উল্লেখ করে মূল লেখায় যেতে চাই। যেমন হযরত সোলাইমান আ: বলেছেন: “আল্লাহকে যে সন্তুষ্ট করে তাকে তিনি জ্ঞান, বুদ্ধি ও আনন্দ দান করেন, কিন্তু গুনাহগারকে তিনি ধন, সম্পদ যোগার করবার ও তা জমাবার কাজ দেন, যাতে সে তা সেই লোককে দিয়ে যায় যে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। এটাও অসার বাতাসের পিছনে দৌড়ানো ছাড়া আর কিছু নয়।” তবে সবকিছুরই একটা সময় আছে; এই বিষয়েও আল্লাহর কালাম থেকেই বলতে চাই;“ সব কিছুর জন্য একটা সময় আছে; আসমানের নিচে প্রত্যেকটি কাজেরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে- জন্মের সময় ও মরণের সময়, বুনবার সময় ও উপড়ে ফেলবার সময়, মেরে ফেলবার সময় ও সুস্থ্য করবার সময়, ভেংগে ফেলবার সময় ও গড়বার সময়, কাঁদবার সময় ও হাসবার সময়, শোক করবার সময় ও নাচবার সময়, পাথর ছুৃঁড়বার সময় ও সেগুলো জড়ো করবার সময়, ভালবেসে জড়িয়ে ধরবার সময় ও না ধরবার সময়, খুঁজে পাওয়ার সময় ও হারাবার সময়, রাখবার সময় ও ফেলে দেবার সময়, ছিঁড়ে ফেলবার সময় ও সেলাই করবার সময়, চুপ করে থাকবার সময় ও কথা বলবার সময়, ভালবাসার সময় ও ভাল না বাসার সময়, যুদ্ধের সময় ও শান্তির সময়।” যে কাজ করে সে তার পরিশ্রমের কি ফল পায়? আল্লাহ্ মানুষের উপর যে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন তা আমি দেখেছি। তিনি সব কিছুর জন্য উপযুক্ত সময় ঠিক করে রেখেছেন। তিনি মানুষের দিলে অনন্তকাল সম্বন্ধে বুঝবার ইচ্ছা দিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কি করেন তা মানুষ বুঝতে পারে না। আমি জানি, মানুষের জীবনকালে আনন্দ ও ভাল কাজ করা ছাড়া তার জন্য আর ভাল কিছু নেই। এটা আল্লাহর দান যে, সব মানুষ খাওয়া-দাওয়া করবে ও তার সব কাজে সন্তুষ্ট হবে। আমি জানি আল্লাহ যা কিছু করেন তা চিরকাল থাকে; কিছুই তার সংগে যোগ করা যায় না এবং কিছুই তা থেকে বাদ দেওয়াও যায় না। আল্লাহ তা করেন যেন মানুষ তাঁকে ভয় করে।
হ্যা ভয় এখন দুনিয়াকে ঘ্রাস করে আছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে ভয় করা থেকে দুনিয়া এবং তার অধিনে সকল কিছুই দুরে সরে গেছে এবং দ্রুত যাচ্ছে। কিভাবে ফিরে আসা যায় সেই কথাই বলতে গিয়ে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হলাম এবং তাঁর দেয়া শিক্ষা সুবুদ্ধির ডাক থেকে সুবুদ্ধির উদয় হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই বুঝলাম। তাই বর্তমান সময়ের দাবি এবং একমাত্র চাহিদা হলো সুবিদ্ধির উদয় হওয়া এবং সেই অনুযায়ী চর্চার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা এবং সাম্যের বিধান চর্চার মাধ্যমে বিরাজমান রাখা। পৃথিবীকে পুর্বের গতিতে এবং স্থিতিতে ফিরিয়ে আনতে গেলে এখন থেকেই কাজ করতে হবে আর তা করতে সুবুদ্ধির উদয় ঘটাতে হবে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সুবুদ্ধির মাধ্যমে পালন করতে হবে; ঠিক তেমনি করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এই সুবুদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে চর্চায় আনয়ন করতে হবে। নেতিবাচকতাকে পরিহার করে ইতিবাচকভাবে সুবুদ্ধিকে গ্রহন করার মানুষিকতা নিয়ে চর্চায় আনয়ন করতে হবে। আসুন আমরা এই চর্চার কাজে স্ব স্ব অবস্থানে যাত্রা নিশ্চিন্তমনে শুরু করি।
বর্তমানে স্বস্তি ফিরে আসুক সুবুদ্ধির ডাকে। আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থায়, প্রসাশনের সর্বস্তরে সুবুদ্ধির ব্যবহার অব্যাহত থাকুক, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবুদ্ধির ব্যবহার চলমান থাকুক, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল ধর্মীয় শিক্ষালয়ে সুবুদ্ধি জাগ্রত থাকুক। করোনার থাবা খেকে সুবুদ্ধির দ্বারা ব্যবসার ন্যায় শিক্ষাকেও রক্ষা করা হউক। তবে ইতিমধ্যে সরকার প্রধান আমাদের চাপা কান্না ও ক্ষোভ বুঝেছেন এবং অনেকের লিখিত আকুতি পড়েছেন ও শিক্ষাব্যবস্থাকে সচল করতে দৃঢ়মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই আদেশ বুঝতে সক্ষম হননি আমাদের শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্মানীতরা। তবে দেরিতে হলেও তারা বুঝতে পেরেছেন এবং তড়িঘরি করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা ব্যবস্থা সচল করণার্থে পদক্ষেপ নিয়ে এগুচ্ছেন। তবে নতুন কোন অশনিসংকেত আর বাধা হয়ে না দাঁড়াক এই কামনা করি। এই ক্ষেত্রে দেরিতে হলেও সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে। করোনা নিয়ে শংকিত না হয়ে বরং সাহস নিয়ে করোনাকে বিতারিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে জনমনের অসন্তুষ্টি ও ভীতি দূরভূত হয়। দুইবারের করোনা ঢেউ যেভাবে বাংলার মানুষ সামলিয়েছে এবং সরকারের পদক্ষেপ যেভাবে মেনে নিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে তা খুবই স্পর্ষ্ট এবং আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত। টিকা নিয়ে বাংলার মানুষের মনোভাবের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং টিকায় বিশ্বাস স্থাপন করে আগ্রহ চিত্ত্বে টিকা নিচ্ছে। তবে টিকার পর্যাপ্ততায় এখনও ঘাটতি রয়েছে কিন্তু সরকারের আন্তরিকতা এবং অব্যাহত প্রচেষ্টা বাংলার মানুষকে আশার আলো দেখতে সাহায্য করছে।
মানুষ মানুষের জন্য এবং জীবন জীবনের জন্য এই কথাটির পরিপূর্ণতা পাবে যদি আমরা সুবুদ্ধির উপর নির্ভর এবং বিশ্বাস ও চর্চা করি। এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবুদ্ধির ঘাটতি রয়েছে কিন্তু বিপরীতে নিবুদ্ধিতার ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সুবুদ্ধির ব্যবহার করা হউক। মানুষের মৌলিক চাহিদার যোগানেও সুবুদ্ধির ব্যবহার করা চর্চায় অব্যাহত রাখা হউক। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে সর্বস্তরে সুবুদ্ধির ব্যবহার সুনিশ্চিত করা হউক। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের দায়িত্ব পালনে সুবুদ্ধিকে প্রধান্য দিয়ে অগ্রসর হওয়ার অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা হউক। শুধু সরকারের একার দায়িত্ব নয় বরং সকলের সার্বজনীন দায়ীত্ব এবং এর পালনে সার্বজনীন ব্যবহার এর প্রচলন অব্যাহত রাখা হউক। আইন আছে এবং এর প্রয়োগও আছে কিন্তু এই ক্ষেত্রে সুবুদ্ধির ব্যবহার অগ্রজ রেখে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হউক। আইন এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে দোষারোপ নয় বরং ইতিবাচক মনোভাবের প্রচলন অব্যাহত রাখা হউক। সকলকে নিরাপত্তা দেয়ার মালিক সৃষ্টিকর্তা এবং সেই মালিককে কাজ করার সুযোগ দিয়ে সুবুদ্ধির পরিচয় বহন করা হউক। পরিশেষে বলতে চাই ধৈয্য ও সুবুদ্ধির প্রচলনে বাংলাদেশের ক্রিকেট বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করে আগামীর জন্য প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হউক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.