আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ আদালতের নির্দেশে নির্বাহী আদেশ আটকে যাবার পর ভিন্ন কৌশলে ভিসা-যাচাইয়ের কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এ নির্দেশের কবলে রয়েছে মুসলিম প্রধান সকল দেশ। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে জঙ্গির আস্তানা আবিষ্কৃত হবার সংবাদে মার্কিন প্রশাসন উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে বলেও ঐ সূত্রগুলো উল্লেখ করেছে। ভিসা প্রদানের পূর্বশর্ত হিসেবে আগে থেকেই অনেক প্রক্রিয়া অনুসরণের বিধি থাকলেও বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশিরা খুব সহজেই নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা পেয়েছে। ইতিপূর্বে ভিসা পাবার পর যারা সে ভিসার অপব্যবহার করেনি, তাদের ব্যাপারে একেবারেই সরল দৃষ্টি ছিল কন্স্যুলেটের। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে ধরনের বিবেচনার অবকাশ থাকবে না। অর্থাৎ কঠিন সব শর্ত পালনের নিশ্চয়তা পাবার পরই নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা ইস্যু করা হবে। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ ছাড়াও বেশ কিছু অ-মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি মার্কিন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসার পর এবং আইসিসের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বিস্তৃতি ঘটায় ট্রাম্প প্রশাসন কঠোর এ নীতিমালা অনুসরণের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও এ ধরনের মনোভাবের বিরূপ প্রভাব পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতে-এমন হুশিয়ারিও উচ্চারিত হচ্ছে অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকে। এই সমস্যা মার্কিন পর্যটন শিল্পে বড় রকম ধাক্কা দিতে পারে বলেও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল, নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টে মন্তব্য করা হয়েছে।
অধিকাংশ অ-মার্কিন নাগরিকের জন্য মার্কিন ভিসা পাওয়া ইতিমধ্যেই এক ব্যাপক প্রক্রিয়ায় রূপ নিয়েছে যা পেতে মাসের পর মাস বা বছর পেরিয়ে যায়। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক নিষেধাজ্ঞা ও কঠোরতর ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াসহ ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নির্দেশাবলি থেকে কঠোর বাছাই ব্যবস্থার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যা অ-মার্কিন নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে সমস্যা বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্রের ভার্সিটিতে ভর্তি হতে আগ্রহীদের স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত মাসে ভিসা আবেদনকারীদের পরীক্ষা কঠোর করার জন্য মার্কিন দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেন। অভিবাসন ও ভ্রমণ বিষয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় নির্বাহী আদেশের সাথে সমন্বয় করে এ আদেশ জারি করা হয়, যা ফেডারেল আদালতগুলো স্থগিত করেছে। এ পদক্ষেপ ইতিমধ্যে আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়া ভিসা প্রক্রিয়াকে জটিল করতে পারে এবং কিছু বিশেষজ্ঞের মতে দেশের পর্যটন শিল্পের কোটি কোটি ডলার ক্ষতি করতে পারে। কারণ অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভিসা অনুমোদনকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিলম্বিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করতে পারে।
নতুন আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী ভ্রমণকারীদের ব্যাকগ্রাউন্ড বিশদভাবে পরীক্ষা করা হবে, সেই সাথে সামাজিক মাধ্যমের ইতিহাসও পর্যালোচনা করে দেখা হবে যে তারা স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ন্ত্রিত কোনো ভূখন্ডে ছিল কি না।
দূতাবাস কর্মকর্তারা হোয়াইট হাউজ ব্যবস্থাপনা ও বাজেট অফিসের কাছে আবেদনকারীদের ১৫ বছরের বসবাস, কাজ ও ভ্রমণের ইতিহাস জানার অনুমোদন চাইছেন। এছাড়া, আবেদনকারীরা যদি চাহিদাকৃত সকল তথ্য দিতে ব্যর্থ হন তাহলে দূতাবাস কর্মকর্তারা তাদের সাক্ষাৎকার প্রক্রিয়া বিলম্বিত বা সময় পুনঃনির্ধারণ করতে পারবেন। যেখানে পর্যটকদের ভিসা না দেয়ার বৈধ কারণ আছে, কোনো কোনো আইনজীবী উদ্বিগ্ন যে লোকজন তাদের নাম বা জাতীয়তার কারণে অতিরিক্ত পরীক্ষার শিকার হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন নতুন ভিসা পরীক্ষা ব্যবস্থার কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেনি, যা ১৫ থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে দূতাবাসগুলোতে পাঠানো হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন স্বীকার করেন যে, কঠোর পরীক্ষার কারণে কাজ জমে যেতে পারে। তিনি কর্মকর্তাদের দিনে ১২০ জনের বেশি আবেদনকারীর সাক্ষাৎ গ্রহণ না করার সুপারিশ করেন। আমেরিকান অভিবাসন আইনজীবী সমিতির পরিচালক গ্রেগ চেন বলেন, নয়া আইনসমূহ আবেদনকারীদের জন্য বড় ধরনের ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
ইউএস ট্রাভেল এসোসিয়েশনের পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথান গ্রেলা বলেন, যন্ত্রণাদায়ক কাস্টমস প্রক্রিয়া ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে পছন্দ করতে পর্যটকদের বিরত করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত নিরাপত্তামুখী। তার সংস্থা আশা করে, ট্রাম্প বিশ্বের কাছে এ বার্তা পাঠাবেন যে, বৈধ পর্যটকরা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আন্তরিকতার সাথেই বসবাস করে আসছে।