ব্যবসায় এখন যুক্ত হয়েছে রাজনীতি ও ধর্ম। ব্যবসা ছিল পবিত্র স্থানে আর সেই ব্যবসা আজ নেমে এসেছে অপবিত্রতার নিম্নস্তরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে। ব্যবসা এবং ধর্ম এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিন্তু তাতে আজ ছেদ ঘটেছে। রাজনীতিও একদিন ধর্মীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রয়োজনেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আজ সেই রাজনীতিতেও ছেদ ঘটেছে। কোথায় নেই এই অনৈতিকতার ছোবল। অনৈতিকতার বেড়াজালে এখন বন্ধি সকল কিছুই। এই অনৈতিকতাসকল দূর হউক আমাদের জীবন থেকে এমনকি বিশ্বব্রক্ষান্ড থেকে। আমরা এই বড়দিনের মহান তাৎপর্য অনুধাবন করি এবং সৃষ্টিকর্তার উপহার গ্রহণ করে বিশ্বব্রক্ষান্ডকে কলঙ্কমুক্ত করে বেহেস্তী আবেশে পরিপূর্ণ করি। বড়দিন সকলের এবং সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রনে এনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এমনকি সকল মানুষকে ঐক্যেবদ্ধ করে চিরস্থায়ীভাবে বেহেস্তবাসী করার নিমিত্ত্বেই এই সকল করেছিলেন।
রাজনীতীতে অনৈতিকতা এখন ঘ্রাস করে বসেছে। এই অন্ধকারের ঘ্রাসমুক্ত রাজনীতি চালূ করে সচল রাখতে হবে। যার হাতে যখনই কোন সুযোগ আসে তথনই অনৈতিকতার আবরণে ঐ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকে কলুষিত করে যাচ্ছে। সরকারী দলে এমনকি বিরোধী দলে একই লক্ষ্যে রাজনীতিকে পেট নীতিতে পরিণত করে যাচ্ছে। তবে যারা এখন রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে তাদের মতলব কিন্তু ঐ একই। বর্তমানের বাস্তবতা কিন্তু এই শিক্ষার প্রচলন ও প্রসার এবং চর্চার প্রতিফলনই ঘটে যাচ্ছে। দৃশ্যমান সকল কিছুকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ারও মানুষ রয়েছে কিন্তু ঐ মানুষগুলোকে সম্মুখ সারিতে এনে ইতিবাচক প্রশংসা করে উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। তবে ধর্মীয় মূল্যবোধেও এখর ঘুনে ধরে আছে যার দরুন মুল্যবোধ চর্চায় সৃষ্টিকর্তাবিমূখ হয়ে লোকদেখানো চর্চায় মনোনিবেশ করে শয়তানি চর্চায় বিরাজমান রয়েছে। রাজনীতিতে নতুনত্ব আনয়ন করতে হবে; ফিরে যেতে হবে নীতি ও আদর্শে আর পুনরায় চালূ করতে হবে সৃষ্টিকর্তার অভীপ্রায়ে ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনীতি। যে নীতি ও আদর্শের উপর সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ এবং অনুগ্রহ ও দয়া সর্বক্ষণ বিরাজমান। রাজনীতিকে এখন সাজাতে হবে ইতিবাচক নীতি ও আদর্শে; সততা ও ন্যায়পড়ায়নতায়; ক্ষমা ও ভালবাসায়; সর্বোপরি সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে। বর্তমানে যারা আদর্শীক মডেলে পরিণত হয়েছেন তাদের সঙ্গে সর্ম্পকউন্নয়ন করে আগামীর পথপ্রদর্শক হিসেবে চলমান প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
খৃষ্ট্রের অনুসারীরা আজ কোথায়? তারা কি খৃষ্টের শিক্ষা থেকে সড়ে গেছে? তারা কি লোকদেখানো এবাদতে মশগুল হয়ে আছে? তারা কি ঈমান ও আমলকে বিশ্বাসে পরিপূর্ণ করে ব্যাবসায় পরিণত করেছে? পাকরূহ এবং সৃষ্টিকর্তর সঙ্গে কোন যোগসাজন না রেখে ঈসাকে বিসর্জন দিতে ঝাকযমকের সহিত নানা আয়োজনে কাজ করে যাচ্ছে। দোয়া, মিলাদ, প্রচার এবং খাওয়া-দাওয়া এমনিক ব্যবসায়ীক পন্যে টাকা বা অর্থ উপার্জনের জন্য সকল অনৈতিক ফন্দি এটে আয়-উপার্জনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাচ্ছে? নারী; মদ বা নেশার আশক্তিতে মত্ত্ব হয়ে জাগতিকতায় পড়ে আছে? চার্চগুলি আজ বহুধাবিভক্তিতে পরিপূর্ণ হচ্ছে। কেউ কেউ খবর নিচ্ছে না বরং দেখা হলে লোকদেখানো কাজটুকু সেরে নিচ্ছেন। যে কোন বিপদে তারা পিছপা হচ্ছেন; ভয়-ডরহীনরা এখন ভয়ে কাতরাচ্ছেন; ঘরমুখো হয়ে লুকিয়ে এমনকি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যাদের শক্তি ও ক্ষমতা ছিল পৃথিবীকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এমনকি নিরাপত্তা দেয়ার তারাই কিনা আজ পলাতক। এর পিছনে কারন কি ভেবে দেখবেন? সৃষ্টিকর্তা বিমুখতা এবং সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য বহির্ভূত ইমান ও আমলই কি দায়ী? তবে সকল জাগতিকতার উর্দ্দে উঠে সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে সম্পর্কউন্নয়ন এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে চিন্তা এবং মোনাজাতই হউক আত্মশুদ্ধির এবং সকল কর্ম হউক সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে। অর্থ-বিত্ত্ব-বৈভব এবং ক্ষমতা ও পদ-পদবির নিছক বেড়াজাল থেকে বের হয়ে এসে ধর্মীয় জ্ঞান এবং ঈমান ও আমলকে আত্মায় প্রস্ফুটিত করে কাজে পরিণত করি তাহলে জীবন পথের সকল কাটা দুরীকরণে খোদায়ী জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা ফলপ্রসু হবে।
একই বাক্যের অবতারনাই করার সময় ও উপযুক্ত সুযোগ এখন। ইসলামের আবরণে মুসলিম বিশ্বাসীরাও ঐ একই কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন গ্রুপে বা দলে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের কল্যানে নয় বিনাশে মত্ত্ব হয়ে আছেন। নম্রতা শালিনতায় নয় বরং উগ্রতায় যেন জীবন বিলিয়ে যাচ্ছেন। নারী ও মদে বা নেশায় আশক্ত হচ্ছেন যা দৃশ্যমান। অবৈধ উপার্জনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। কমিটি, ইমাম ও মোয়াজ্জ্বিন এই তিনে মিলেই যেন অনৈতিক কর্মকান্ডের বৈধতা দিয়ে সমাজ সংসারের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ছেন। কোন স্থানেই যেন সৃষ্টিকর্তা নেই বরং বিপরীত কিছুর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবই সৃষ্টিকর্তার নাম ব্যবহার করেই করা হচ্ছে। এত দল, এত মত, এত বিভেদ-বি:ষাদ নিয়ে কেন এগুবে বিশ্ব? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্চে কোথাও যেন প্রকৃত শান্তি ও স্থিতিশীলতা এমনকি নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থার জন্য দায়ী কারা সেই দিকে দৃষ্টি দিয়ে ঐসকল হারানো ঐক্য, শান্তি, স্থিতিশীলতা, নিশ্চয়তা, নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে কাজ করুন। ধর্মকে সকল ধরনের ব্যবসা এবং ব্যবসায়ী উপকরণ থেকে মুক্ত করুন আর ফিরে আসুন সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে। এই বড়দিনে পবিত্র কোরআনের আলোকে ঈসার জন্ম এবং মৃত্যুর বর্ণনার আলোকে আর তাকে দেয়া শান্তি ও তাঁর মাধ্যমে বিশ্বকে দেয়া শিক্ষার আলোকে মননিবেশ করুন। ঈমান-আমল ও বিশ্বাসে বলীয়ান হউন।
পূজা মন্ডবে, মন্দীরে এখন ভগবান বা ঈশ্বর নেই আর সেই স্থানে এখন ভগবানরূপী শয়তানের আশ্রয় বা আশ্রম হিসেবে অদৃশ্য শক্তির আধারের বসবাস। তাই সময় থাকতে ফিরে আসুন এবং সকল ধর্মের সারমর্ম ও সার্বজনীন নীতি ও আদর্শের আঙ্গিকে সৃষ্টিকর্তার আরাধ্য সাধনে মত্ত হউন। বৌদ্দ বিহার, কিয়াং সহ সকল জায়গায়ই সেবা পাওয়ার ব্রতে ব্রতী হয়ে সেবা নিচ্ছেন। সেই সেবা পুজারীদের বলছি সেবা করুন এবং সেবা করার লিপ্সায় সেবা পাওয়ার আশা ত্যাগ করে জীবন-যৌবন উৎসর্গ করুন। আগামীর কল্যানে নিজেদেরকে সৃষ্টিকর্তার অনুসারী এমনকি সহকর্মী হিসেবে প্রস্তুত করুন। মনে রাখবেন “মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, পেগোডায় বা কোন উপাসনালয়ে সৃষ্টিকর্ত নেই; বরং সৃষ্টিকর্তার বসবাস আপনার এবং আমার অন্তরে।” এই অন্তরের সৃষ্টিকর্তাকে খোজ করুন এবং অন্তরে অবস্থানরত সৃষ্টিকর্তার এবাদতে মশগুল হউন। নিজের অন্তর বা দেহকে সৃষ্টিকর্তার বসবাসের উপযোগী করে তুলুন। ব্যবসায়ী মনোভাব এমনকি জাগতিক মনোভাব নিয়ে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য পাওয়ার আশা ত্যাগ করুন। বরং সকল জাগতিকতা, লোভ-লালসা ত্যাগ করে সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য তালাস করুন এবং সেই সৃষ্টিকর্তাকে নিয়েই সামনে এগিয়ে যান। সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে সীক্ত হউন এবং অন্যকে সীক্ত করে কাধে কাধ মিলিয়ে বিশ্বকে ক্ষমা ও ভালবাসার নি:শর্ত বন্ধনে যুক্ত করুন। আজ এই দিবসে সকলের প্রতি এই একই আহবান রেখে পবিত্র কোরআন এবং পবিত্র ইঞ্জিল শরীফ থেকে দুটি আয়াত উল্লেখ করে শেষ করছি। পবিত্র ইঞ্জিল থেকে বলছি-“আমার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং আমার প্রতি শান্তি ছিল যেদিন আমি মৃত্যুবরণ করেছি। আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিয়ে গেলাম এই শান্তিরাজের শান্তি সম্পর্কে একই কথা বলা আছে পবিত্র কোরআনেও। অশান্ত পৃথিবীকে এখন শান্তিতে ভরিয়ে তুলুন। ঈসার দেয়া শান্তি নিয়ে আপনি ও আমি একত্রিত হয় এবং পৃথিবীর সকল ফেতনা ফ্যাসাদ দূর করে সামনে এগিয়ে যায় আর শেষাংসে ৫ সূরা আল মায়েদা আয়াত ৬৮-৬৯ পাঠ করে পরবর্তী কর্ম ঠিক করে নিয়োজিত হই বিশ্ব শান্তির রক্ষক হিসেবে “বল, ‘হে কিতাবধারীগণ! তওরাত, ইঞ্জিল ও যা তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তি নেই।’ তোমার প্রতিপালকের নিকট থেকে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বৃদ্ধি করবে। সুতরাং তুমি অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য দু:খ করো না। নিশ্চয়; যারা বিশ্বাসী, ইহুদী, সাবেয়ী ও খৃষ্টান তাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করবে এবং সৎকাজ করবে তার কোন ভয় নেই এবং সে দু:খিতও হবে না।”