বা আ ॥ জীবনের অর্ধেকটা সময় পার করেছেন ফুটপাতে। এমনও অনেক দিন কেটেছে অনাহারে। যখন যা জুটেছে তা খেয়েই দিন কেটেছে। সমাজের উচ্চবিত্তরা যখন খাবার নষ্ট করা আধুনিকতা বলে মনে করেন, সেখানে অসহায় মানুষগুলোর বেঁচে থাকাই যেন দায়। সমাজের অবহেলা যখন তাদের নিত্যসঙ্গী, সেখানে সরকারের এমন সুনজর তাদের কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো। তাই টিকা নিয়ে সরকারের এমন কার্যক্রমে উচ্ছ্বসিত তারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেওয়া করোনার টিকা গ্রহণ করতে এসে এমন অভিব্যক্তি ছিল তাদের চোখে-মুখে। দুর্ঘটনায় দুই পা হারানো নুরুল হক তাদের একজন। থাকেন নগরের পুরাতন রেলওয়ে এলাকার ফুটপাতে। এদিন তিনিও এসেছিলেন টিকা নিতে। টিকা নেওয়ার পর প্রকাশ করেন অনুভূতি। তিনি বলেন, করোনার টিকা যে আমরা পাবো তা কখনও কল্পনা করতে পারিনি। সরকার আমাদের নিয়ে চিন্তা করেছে, এটাই অনেক বেশি পাওয়া। এখন অন্তত রোগ থেকে সুস্থ থাকা যাবে। সরকারকে ধন্যবাদ আমাদের টিকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
নুরুল হকের মতো ভাসমান ছিন্নমূল অনেকে এসেছিলেন জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুরু হওয়া করোনার টিকাদান কার্যক্রমে। টিকা নিতে আসা রাজিয়া খাতুন বলেন, এই টিকা দিতে কোনও কাগজপত্রের প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছে তারা। তাই টিকা নিতে এসেছি। এতদিন আমাদের কেউ টিকা নিতেও বলেনি। লাল কাপড় পরা মানুষগুলো (রেডক্রিসেন্টের কর্মীরা) আমাদের টিকা দিতে ডেকে এনেছে। আমরা শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নগরের ৫টি স্থানে ভাসমান মানুষের মাঝে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ১ লাখ মানুষকে টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে। টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। আমরা চাই প্রত্যেকে টিকার আওতায় আসুক। সে লক্ষ্যেই আমাদের এ টিকাদান কর্মসূচি। জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে এ কর্মসূচির মাধ্যমে। পাশাপাশি টিকা না নেওয়াদের টিকা নিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ছিন্নমূল মানুষদের টিকাদান কার্যক্রমে জেলা সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, যেহেতু তারা ভ্রাম্যমাণ লোকজন তাদের দ্বিতীয়বার খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হবে। তাই তাদের জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজ টিকার আওতায় এনে স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। প্রায় এক লাখ মানুষকে এ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি টিকার প্রয়োজন হয় তাও আমরা সরবরাহ করতে পারবো। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা তৈরির জন্য আমাদের নিজস্ব টিমসহ রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য এনজিও সহায়তা করছে।