আন্তজার্তিক ডেক্স ॥ শহরাঞ্চলের মানুষদের করোনা মহামারির সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রায় ৪ কোটি নগরবাসীকে ৩০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এ ঋণের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। করোনা পরবর্তী ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলায় প্রস্তুতি জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে এ ঋণ সহায়তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ‘লোকাল গর্ভমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এলজিসিআরআরপি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী এ সংস্থাটি। গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মহামারি থেকে নগরবাসীকে পুনরুদ্ধার করতে শহুরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ঋণ সহায়তা করবে। দেশের ৩২৯টি পৌরসভা এবং ১০টি সিটি করপোরেশনের সুবিধা বাড়বে। এ ঋণ প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো, স্থানীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু প্রভাব, দুর্যোগ এবং ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রকল্পটি দরিদ্র এবং নিম্নআয়ের মানুষের জীবিকা পুনরুদ্ধারেও সহয়তা করবে।
এতে আরও জানানো হয়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেড় মিলিয়ন দিনের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি দেশের ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। প্রকল্পটি প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ভাল সমন্বয় ও তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করা হবে এ প্রকল্পের আওতায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও সময়মনসিংহ এ আট বিভাগে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি শহুরে এলাকার দরিদ্র জনগণকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। কোভিডে আয়ের ক্ষতি করেছে এবং মৌলিক পরিষেবা সরবরাহ ব্যাহত করেছে। তবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর দরিদ্রদের পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি শহরগুলোকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। প্রকল্পটি সব শহরকে আরও ভালভাবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে। শহর ভালোভাবে গড়তে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশের নগরাঞ্চল দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ নগরাঞ্চলে পরিচালিত হলেও কোভিড-১৯ এর প্রভাবে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিভিন্ন পরিষেবার ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং অর্থনৈতিক প্রভাব নিরসনে সরকার মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে এ দায়িত্বের একটি বড় অংশ নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউএলজিআই) ওপর বর্তায়, যারা মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
ইউএলজিআইগুলোর নাগরিক সেবা এবং অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকলেও তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল টেকনোলজি, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, ড্রেন নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপনসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে বরাদ্দ পায় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এ খাতগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। এছাড়াও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা গ্রহণে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধন, এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে- এক হাজার ৬১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকায় ৩২৯টি পৌরসভায় কোভিড রেসপন্স গ্রান্ট দেওয়া হবে। এছাড়া ৮২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় ১০টি সিটি করপোরেশনে কোভিড রেসপন্স গ্রান্ট, ৫৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার পরামর্শক সেবা, ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, ৩ কোটি টাকার বৈদেশিক প্রশিক্ষণ এবং ৬ কোটি টাকা অডিট অ্যান্ড রিভিউয়ে বরাদ্দ থাকবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কোভিড-১৯ মহামারি থেকে উত্তরণে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। একইসঙ্গে উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি ভবিষ্যতে অনুরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি জোরদার হবে। এছাড়াও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন পরিচালিত বাজার, কবরস্থান, শ্মশান এবং স্কুলে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী সরবরাহ, অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো সুবিধাবলি যেমন- ড্রেন নির্মাণ, পাবলিক পার্ক, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপন, নগর প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা এবং তথ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে মোবাইল অ্যাপস, আইটি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা, সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর নিজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য আইটিভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব হবে।