বা আ॥ টানা তিনবার ‘গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায়’ দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নবনির্মিত ১২তলা ভবন বিজয়-৭১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, “জনগণ ন্যায়বিচার পাক এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হোক… একটা গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিল পর পর এই তিন বার, ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল। যে কারণে আমরা বাংলাদেশের অনেক উন্নতি করতে পেরেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে, আগামীতে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
“বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে ইনশাল্লাহ গড়ে তুলব। জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা বাস্তবায়ন করব…।
“আমাদের যেন কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়, আমরা যেন নিজেরাই নিজেদের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন ৯০ শতাংশ উন্নয়ন পরিকল্পনা নিজস্ব অর্থায়নে করার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
“তার সব থেকে বড় দৃষ্টান্ত হচ্ছে নিজেদের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতুর মত একটা বড় প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছি। এর মধ্যে দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।”
শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
“জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সরকার গঠন করেছিল, তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রক্ষায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছিল। যার মাধ্যমে খুনিদেরকে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেওয়া হয়েছিল, তাদের নির্বাচন করার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।
“যুদ্ধাপরাধী যারা, যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিয়ে যারা কারাগারে বন্দি বা সাজাপ্রাপ্ত এমনকি ৭ খুনের আসামি সাজাপ্রাপ্ত, তাদেরকেও মুক্তি দিয়ে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান এবং পরবর্তীতে তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই কাজ করেছিল।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময় বিদেশে থাকা তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তাদের দেশে ফেরার পথও রুদ্ধ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের রাস্তা বন্ধ করা হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর ওই অধ্যাদেশ বাতিল করে এবং খুনিদের বিচার শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ওই রাতে আরও যাদের হত্যা করা হয়, সেসব পরিবারেরও বিচার চাওয়ার সুযোগ ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই সময়ে দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু ছিল।”
যে চেতনা ও আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, জাতির পিতাকে হত্যার পর সেই চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি এই একটি রায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়েছে।”
জাতির পিতা দেশের মানুষের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মন্তব্য করে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদেরও সেটাই লক্ষ্য যে গণতান্ত্রকে সুরক্ষিত করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায় এবং মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি যেন হয়..। সেটাই আমাদের লক্ষ্য, আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই বিচার বিভাগের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের বিচার বিভাগ আরো শক্তিশালী হবে। … আমাদের যে ৭২ এর সংবিধান, যে সংবিধানে জাতির পিতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, সেটাও যেন কার্যকর হয়,সেজন্য আমাদের সরকার সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ কার্যকর করার পদক্ষেপ নেয়।”
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।