বসের সন্তষ্টি ‘একটি বিষয়ে’ এখন সকলেরই গুরুত্বারূপের প্রাধান্যে পরিণত হয়েছে। আর এই সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে সকল মানুষ এমনকি সৃষ্টিকুলও বটে। তবে এই সন্তুষ্টির মানদন্ড এখন বিভিন স্তরে বিন্যস্ত হচ্ছে। দুনিয়ার বসদের সন্তুষ্টির জন্য মানুষ তৈল মর্দন, মুখনিসৃত বাণীর ফুলঝুড়ি, তোষামোদি, বাংলা নেতিবাচক কথায় চামচামি করাসহ নানান ধরনের আচরণ ও কাজের দৃষ্টান্ত এখন দৃশ্যমান। তবে শৈশবে বা কৌশরে দেখিছি প্র্যাকটিক্যাল মার্কের জন্য বা স্যারকে খুশি রাখার জন্য সিগারেট, পান কিনে দেওয়া, দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো, বাজার করে দেয়া, ফলফ্র্টুসহ নানান উপঢৌকন দিয়ে খুশি করার ব্যবস্থা করা। গরু পরিচয্যাও করে দেয়া একটি ক্ষণিক রেওয়াজে পরিণত ছিল তবে বর্তমানে এর মাত্রা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধিপেয়ে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে দৃষ্টিকটুতে পরিণত হয়েছে। যা সমাজের জন্য, সংস্কৃতির জন্য, পরিবারের জন্য এমনকি আগামীর কল্যাণের জন্য একটি খুমকী হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
বস কয় প্রকার ও কি কি? এই ক্ষেত্রে শ্রেণীবিন্যাস করা খুবই জটিল তবে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে এর একটি সারসংক্ষেপ দেয়া যেতে পারে। পরিবারের বস, সমাজের বস, স্কুল কলেজের বস, ছাত্র/ছাত্রীদের বস, রাজনৈতিক বস, ধর্মীয় বস, অফিস/আদালতের বস, ডিপার্টমেন্টাল বস, রাষ্ট্র পরিচালনায় বস, বিরোধী দলীয় বস, নেতিবাচক শব্দে, চোরের বস, ডাকাতের বস, সন্ত্রসীচক্রের বসসহ নানাবিধ বসের রাজত্ব এখন। তবে এই বসদের খুশিকল্পে এখন দুনিয়া দিশেহারা। কে কত বেশী বসের সেবা করতে পারে সেইদিকেই এখন সকলের মন, কিন্তু বস খুশিতে ব্যস্ত থেকে মানুষ নিজের ফায়দা লুটার আশায় গতিশীল বেগে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। তবে মানুষ নিজের মেরুদন্ড, মান-সম্মান, বিভেক এবং ব্যক্তিত্ববোধ বিকিয়ে দিয়ে সর্বনাশের নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনে কাজ করে যাচ্ছে। বসদের কদর এত বেশী যে, বসদেরও যে বস আছে সেইদিকে আর খেয়াল করার কোন সুযোগ অবশিষ্ট থাকছে না। বর্তমান লাভে ও লোভে মানুষ বা সৃষ্টি এখন কাতর। বর্তমানের আশায় ভবিষ্যতকে ধুলিসাৎ করে মানুষ বিকলাঙ্গ হচ্ছে। বাক স্বাধীনতা হারাচ্ছে এমনকি বস তোষনে ব্যক্ত থেকে নিজের নিত নৈমত্তিক প্রয়োজনও বিসর্জন দিচ্ছে। আশা শুধু, অর্থ, পদোন্নতি, সামাজিক মর্যদা, নতুন কোন কাজ পাওয়া, সুযোগ পাওয়া, ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতার কাছে থাকা, ক্ষমতার ব্যবহার করা, জাগতিক কল্যাণ সাধনে অন্যের ক্ষতি সাধিত করা, ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বৃহৎ স্বার্থ ত্যাগ করা বা ভুলে যাওয়া এমনকি অন্ধ্য সাজা। বিবেক ধ্বংস করা এবং সত্যকে বাইপাস করে মিথ্যাকে সত্যের আদলে রূপদান করা। জাগতিক এবাদত ও বন্ধেগীতে মনযোগী হওয়া। আখেরের চিন্তা ও স্থায়ীত্বকে মিথ্যাবোমায় উড়িয়ে দেয়া বা ধ্বংস করে দেয়া। মিথ্যার রাজ্য কায়েমে ব্যতিব্যস্ত থাকা আর অন্যায় ও অপবাধ দিয়ে সত্যকে সমাজ, সংস্কৃতিক,পরিবার, কর্মক্ষেত্র ও রাষ্ট থেকে বিতারিত করা এখন সময়ের উপযুক্ত চাহিদা।
অল্প এই কয়দিনের ক্ষণস্থায়ী জীবনে আর কি কি পেতে চায়! কতদিনইবা এই পৃথিবীতে চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিয়ে অধিষ্ঠিত থাকতে চাই! পৃথিবীকি আমাদেরকে এই পৃথিবীতে বেশীদিন বা কমদিন রাখার ক্ষমতা রাখে? তবে নির্দিষ্ট দিনে আর নির্ধারিত সময়ে আমাদের সবাইকে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে কিন্তু কোন সুযোগই আমাদের হাতে নেই যে, আমরা পৃথিবীতে মায়া জড়িয়ে থাকব; না পৃথিবী আমাদেরকে আর রাখবে না বরং সমস্ত প্রাপ্যটুকু দিয়েই বিদায় করবে। বিদায় বেলায় আমরা কি কিছু নিয়ে যেতে পারি; নাকি পারব? তবে কোনটিই না যা ইতিহাসে প্রমানিত সত্য। তবে শুন্য হাতে আগমন আর শুন্য হাতে প্রস্থান এর বিকল্প কিছুই নেই। পৃথিবীর পরাক্রমশালী রাজা-বাদশা, ধনী, উচ্চ শিক্ষিত, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, গরীব, ফকির সব শ্রেণী পেশার মানুষেরই একই গতি। একই ভাবে পৃথিবীতে আগমন এবং একই ভাবে পৃথিবী থেকে প্রস্থান। তাই কেন এই অল্প কয়টি দিনের জন্য এত না পাওয়ার হাহাকার। কেন এত অতৃপ্ত বেদনা। কিসের জন্য এত উম্মাদনা? গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এমনকি মৃত্যুর মিছিলে শরীক হওয়া লোকদের জীবনের শুরু এবং শেষ পরিণতির দিকে একটু দৃষ্টি দিবেন কি? ভাবুন এবং খুজে বের করুন সকল রহস্য তবেই আপনি আপনার সঠিক ও হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে সৃষ্টি করে কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন… হ্যা অতি উত্তম বা চমৎকার। এই উত্তম ও চমৎকারিত্ব আজ কোথায়? ফিরে পাওয়ার বাসনায় দৃষ্টি দেবেন কি?
হ্যা পরিশেষে বসের সন্তুষ্টি বা প্রীয়ভাজন হওয়ার উপায়ে চির ধরাতে বসদের বসের স্মরণাপন্ন হওয়ার জন্য বিনিত বিনম্র অনুরোধ রাখছি। ক্ষণস্থায়ী জীবনে চাওয়া-পাওয়ার কামনা ও বাসনার উদ্ধে উঠার আহ্বান জানাচ্ছি। সুন্দর এই পৃথিবীকে আরো সুন্দরে পরিণত করার সংগ্রামে নিয়োজিত হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। এইখানে হযরত মিকা আ: এর কথা উল্লেখ করতে চাই “আমি কি নিয়ে মাবুদেও সামনে যাব এবং বেহেশতের আল্লাহর এবাদত করব? আমি কি পোড়ানো – কোরবানীর জন্য এক বছর বয়সের কতগুলো বাছুর নিয়ে তাঁর সামনে যাব? মাবুদ কি হাজার হাজার ভেড়া কিংবা দশ হাজার নদী-ভরা জলপাই তেলে খুশী হবেন? আমার অন্যায়ের জন্য কি আমি আমার প্রথম সন্তান, আমার গুনাহের জন্য আমার শরীরের ফল কোরবানী দেব? ওহে মানুষ, যা ভাল তা তো তিনি তোমাকে দেখিয়েছেন। ন্যায় কাজ করা, আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে ভালবাসা আর তোমার আল্লাহর সংগে নম্রভাবে যোগাযোগ সম্বন্ধ রক্ষা করা ছাড়া মাবুদ তোমার কাছে আর কিছু চান না।” সত্যিই চমৎকার; দুনিয়ার বসদের খুশি করার চেয়ে আখেরের বা বসদের বসকে খুশি করা খুবই সহজ। এই সহজ কাজকে গ্রহন করে কায্যে পরিণত করার জন্য উদাত্ত্ব আহবান জানাচ্ছি। অল্প কয়েকদিনের জন্য এই দুনিয়ার বসদেরকে খুশি করতে কতই না কাঠ-খড় পুড়াতে হয় যা কখনো কখনো মুত্যুমুখে পতিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে অতি সহজে ঐ বসদেরও একজন বস আছেন; যার সঙ্গে অনন্তকাল স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে; আর তাকে খুবই সহজে বিনামূল্যে, বিনাপরিশ্রমে, বিনা উপঢৌকনে সন্তুষ্ট করা যায়। যার জন্য অর্থ ও বিত্ত্বের প্রয়োজন হয় না। আমি এর সঙ্গে আরেকটু যুক্ত করতে চাই কারণ আমাদের সমাজের ও রাষ্ট্রের এবং পরিবারের প্রয়োজন বর্তমানের পরিক্ষায় উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে…“ জীবনের জন্য সবচেয়ে দরকারী হুকুম হল- আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক। তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত দিল, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত মন এবং সমস্ত শক্তি দিয়ে তোমাদের মাবুদ আল্লাহকে মহব্বত করবে। তার পরের দরকারী হুকুম হল এই- তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করবে। এই দু’টা হুকুমের চেয়ে বড় হুকুম আর কিছুই নেই।” এই কথা শুনার পর উকিল নিশ্চুপ এবং পথচারী আলেম শুনে বললেন, “হুজুর খুব ভাল কথা। আপনি সত্যি কথাই বলেছেন যে, আল্লাহ এক এবং তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর সমস্ত দিল, সমস্ত বুদ্ধি ও সমস্ত শক্তি দিয়ে তাকে মহব্বত করা এবং প্রতিবেশীকে নিজের মত মহব্বত করা পশু ও অন্যসব কোরবানীর চেয়ে অনেক দরকারী।” হ্যা শুধু আলেম নয় আমিও বলি তাই। আসুন আমরা বসদের বসকে খুশী করার জন্য তাঁর দেয়া সহজ ও সাচ্ছন্দের পথ অবলম্বন করি। দুনিয়াবী কামীয়াবীর চেয়ে আখেরাতের কামিয়াবীতে মনোযোগী হই। তবে অল্প দিনের বসবাসের স্থানে বসদের বসের স্মরণাপন্ন হয়ে আগামীর সুনিশ্চিত কল্যাণের পদযাত্রা অব্যাহত রাখি।