শ্রদ্ধাভাজনদের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার অনুভুতি

হৃদয়ের গভীর থেকে উৎসরিত অনুভুতির বহিপ্রকাশে আজ প্রকম্পিত এবং উদ্ভেলিত হয়ে আগামীর কল্যাণের এবং বেহেস্তের নিশ্চিত নিশ্চয়তার বিধানে অনুঘটকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আজ জীবন সায়ান্নে। গত ১৭ই এপ্রিল রোজ রবিবার কসবা আখাউড়ার সাবেক সংসদ সদস্য; এশিয়া মহাদেশের প্রখ্যাত আইনজীবি; মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম একজন, বঙ্গুবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মরহুম এডভোকেট সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেবের সহধর্মীনি; যিনি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক এবং রত্নগর্ভা মা; কসবা আখাউড়ার অবিসংবাদিত নেতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব এডভোকেট আনিসুল হক এমপি মহোদয় এর মাতা মরহুম জাহানারা হক এর ২য় মৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত দোয়া মাহফিল লক্ষ ভক্ত ও শোভাকাঙ্খি এবং আত্মীয়স্বজন উপস্থিত হন এবং কায়মনোবাক্যে দোয়া করেন আর বরকতম পুন্যের ও ক্ষমার মাসে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দোয়া মোনাজাত শেষে ইফতার পর্বের মাধ্যমে ফজিলতপূণ স্বর্গীয় সভা শেষ করেন। উক্ত মহতি সভায় জনাব আনিছুল সাহেবও উপস্থিত ছিলেন।


আল্লাহ তাবারুকতালা সন্তানের দোয়া সর্বাঘ্যে কবুল করেন। মরহুম ও মরহুমার একমাত্র জীবিত সন্তান জনাব আনিছুল হক এবং তাঁর আত্মীয়স্বজন ও গুনগ্রাহী আর শুভাকাংখীদের ফরিয়াদ শুনেছেন এবং কবুল করেছেন। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের বাগানে আনন্দে ও উৎফুল্লে রেখেছেন। আমি আজ শুধু আমার অভিজ্ঞতা এবং তাঁদের সঙ্গে সম্পর্কের স্মৃতিচারন করব আর তাদের বিশাল মনের ভালবাসা এবং কল্যাণকামী কার্যকর চিন্তা-ভাবনা ও পদক্ষেপগুলির সামান্য কিছু স্মৃতিরোমন্থন করব। জনাব মরহুম সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব আমার অত্যান্ত কাছের প্রীয় এবং শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন। আমাকে তিনি খুবই আদর ও ¯স্নেহ করতেন। আমার নানার বাড়ি পানিয়ারূপ হওয়ায় এবং ঐ পরিবারের সঙ্গে আমার নানার ঘনিষ্ট সম্পর্ক থাকায় এই সুযোগ হয়েছে। তিনি ও মরহুম জাহানারা হক আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন তুই অনেক বড় হবি এবং তোর জন্য আমাদের অন্তর থেকে দোয়া থাকল। তিনি গ্রামের সকল মানুষকেই ¯স্নেহ ও সম্মান করতেন এবং প্রত্যেকের প্রয়োজনে যোগানও দিতেন। সবাই ওনাকে ভাইসাব বলে সম্বোধনও করতেন। তবে সম্পর্কগুলো এমনই সরল হয়। জনাব মরহুম সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেবের নির্বাচন চলছে আর আমরা যার যা ছিল তাই নিয়েই ঝাপিয়ে পড়েছিলাম। একদিন সৈয়দাবাদ মোড়ে এক মাতাল জনাব বাচ্চু মিয়া সাহেবের গাড়ি (প্রাইভেট কার) আটক করে। ঐ সময় গাড়ির ভিতর মরহুম জনাব জাহানারা হক ছিলেন এবং সম্ভবত বর্তমান আইনমন্ত্রী মহোদয় অথবা অন্য কেউ তবে উনার বড় মেয়েও ঐ গাড়িতে ছিলেন। আমি তখন যদিও ছোট তথাপি নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত থেকেছি। আমি সংবাদ পেয়ে দৌঁড়ায়ে আসি গাড়ির সামনে এবং ঐ মদ্যপকে ধাক্কা মেরে দুরে সরিয়ে দেয় এবং গাড়িকে চলে যেতে বলি এবং চলেও যায়। তবে তখন মরহুমা আমাকে বলেছিল হি ইজ মেড (সে পাগল); আমিও বললাম জি। তখন তিনি চলে গেলেন। পরদিন আমি জনাব মরহুম বাচ্চু মিয়া সাহেব ও জাহানারা হক সাহেবের সঙ্গে ওনার বাসায় দেখা করি এবং কিছু গোপন কথা বলি আর পরামর্শও নেই। তখন জনাব জাহানারা হক ঐ পাগলের কথা তুলে বলে তুই সব সময়ই আমার নয়নে থাকবি। নির্বাচনে জয়ের পরেই তোকে ঢাকায় নিয়ে অনেক আনন্দ করব। আমি সেই আশায় ছিলাম। নির্বাচনে রাত -দিন অঘুমা থেকে সংবাদ সংগ্রহ এমনকি ভোটার কেনা-বেচা বন্ধে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিসহ নিজস্ব অর্থ দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করি। কিন্তু দু:খের বিষয় সেই নির্বাচনে আমরা ফেল করি বা জয়লাভ করতে ব্যর্থ হই। তবে নির্বাচনের পূর্বে আমি নিশ্চিত ছিলাম আমরা পাস করব। তবে এই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু মোনাফেক মানুষ বেঈমানী করে সর্বনাশ করেছিল। যা দু:খে ও ক্ষোভে আমি আমার আত্মার আত্মীয় পরম নেতাকে বলেছিলাম এবং তিনিও বুঝেছিলেন। তারপর দীর্ঘদিন যোগাযোগবিহীন থাকার পর একদিন আমাদের মসজিদের মুয়াজ্জ্বিন তার বোনজামাইয়ের মামলা ও যাবজ্জ্বীবন কারাবাসের রায় নিয়ে ক্ষোভ ও দু:খ প্রকাশ করে বলল যে আমাদের সবই শেষ; সবই শেষ হয়ে গেছে। তাদের বাড়ি ছিল বগুড়া এবং সেই মোয়াজ্জেনের বোন জামাইর নাম এনামুল হক। সে এখনও বেঁচে আছে এবং বর্তমানে সে ডেসাতে চাকুরী করে যাচ্ছে। সেই মোয়াজ্জ্বীনের কথা শুনে আমি বললাম; আমি আপনাকে একজনের কাছে পাঠাচ্ছি; আপনি যান এবং আমার চিঠিটা দিয়ে কথা বলবেন। উনি আমার খুবই প্রীয় এবং পছন্দের পরমাত্মীয়। যাবৎজীবন সাজা পাওয়াদের মামলা নিয়ে মোয়াজ্জ্বীন সাহেব ঢাকায় গেলেন এবং আমার চিঠি দিয়ে কথা বলা শুরু করলেন তারপর ঐসময় মোয়াজ্জ্বীনকে তিনি নিরাশ করেননি বরং বলেছিলেন যে, আমাকে খরচ বাবত পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবেন এবং আমি বাকিটা দেখছি। তখন একজন বলেছিলেন (বর্তমান মন্ত্রীমহোদয়) এত কম টাকায় এত বড় মামলা। ঠিক সেই সময় আমার আত্মার আত্মীয় জনাব সিরাজুল হক বাচ্চু মিয়া সাহেব বলেছিলেন সবজায়গায় টাকা নেয়া যায় না; আমার খুবইে স্নেহের একজন এই লোককে পাঠিয়েছে। আমি এই কথাটি শুনে আজও গর্ববোধ করি এবং তাঁর ও তাঁর পরিবারের কাছে মাথা নত করি। সেই পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচে সেই সময় ৭জন যাবতজীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে বেকসুর খালাস করে দিয়ে তাদেরকে নতুন জীবন দান করেন। সেই থেকে বগুড়ার এনামুলরা প্রতিবছরই এই মহতি মানুষটির জন্য দোয়া মোনাজাত করে যাচ্ছেন এমনকি মাঝে মাঝে আমার বাসায় এসেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে যাচ্ছেন।
জনাব মরহুমা জাহানারা হক ঠিক একই প্রকৃতির এবং নম্র ও পরোপকারী স্বভাবের ছিলেন। গ্রামের মানুষ ধনী-দরিদ্র সকলেরই খোজ খবর রাখতেন। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তাদেরকে রক্তের সম্পর্কের উদ্ধে নিয়ে সেবা শুশ্রুষা করতেন। অসহায়দের ভরন-পোষণ দিয়ে, তাদের সন্তানদের লেখা-পড়া করিয়ে, দেশ ও বিদেশ পাঠিয়ে এমনকি চাকুরী দিয়ে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ গড়ে দিতেন। ইদ্রিস মামাকে নিজ সন্তানের মত করে লালন-পালন করেন এবং তাদের পরিবারকে নিজ পরিবারের মধ্যে রেখে মর্যাদার সঙ্গে চালিয়ে এসেছেন। জনাব কাসেম মামা মারা যাওয়ার পর ঠিক একই কাজ করেছেন কাসেম মামার পরিবারের প্রতি। ওনার স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিজ দায়িত্বে মানুষ করেছেন এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছেন। এমনি করে হাজারো আত্মীয় ও অনাত্মিয়ের জীবনে উনার ভুমিকা অসীম। আমার মনে পড়ে কাসেম মামার মেজ ছেলের চাকুরীর জন্য ওনি আমার সঙ্গেও কথা বলেছেন এবং বলেছেন যে, ওদের যদি একটি ব্যবস্থা হয় তাহলে আমি শান্তি পাব এবং নিশ্চিত হবো। আমি ওনার মানবিকতা এবং মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার আকাঙ্খা দেখেছি এমনকি বিশাল হৃদয়ের ছোয়া পেয়েছি। ওনাকে আমি অনেক ভালবাসতান আর ওনার সঙ্গে সবচেয়ে বেশী সম্পর্কটা ছিল আত্মার; যেখানে কোন জাগতিকতা ছিল না, ছিলনা কোন লেনদেন বরং ছিল আত্মার উপলব্দি। যতবারই ওনার কাছে গিয়েছি ততবারই মুগ্ধ হয়েছি। আজ ওনি নেই কিন্তু আমার হৃদয়ে রয়েছে এবং থাকবে আমৃত্যু।
আমার লেখাপড়া এবং চাকুরীর বিষয়ে খবর নিয়ে খুবই খুশি ছিলেন এবং বলেছিলেন তুই আরো অনেক বড় হবি। আমি তোর জন্য দোয়া করি। দু:খ একটা মৃত্যু তাকে আমাদের কাছ থেকে অনেক দুরে নিয়ে গেছে। তবে এই দুরের একটিই পার্থক্য আর তা হলো ধরা ও ছোয়া যায় না। তবে হৃদয়ে অনুভব এবং স্মৃতিতে দৃশ্যমান রাখা যায়। আমি প্রতিনিয়তই এই কাজটুকু করি। আমাদের দৈনন্দিন মোনাজাতে আমি জনাব হক সাহেব ও ওনার কন্যা ও পুত্রকেসহ মোনাজাতে স্মরণ করি। আল্লাহ তায়ালা ওনাদেরকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থানে আসিন রাখেন। আমি আসলে একজন চাকুরীজিবী কিন্তু সরকারের গুণগ্রাহী এবং সমর্থক এমনকি শুভাকাংখী এক কথায় মঙ্গল কামনায়রত এক সৈনিক বটে। তবে এই সরকারের গুনগান গাইতে গিয়ে একটি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পাই এবং সেই সূত্রে সম্পাদক ও প্রকাশক। তবে সেই সম্পাদকের দায় দায়িত্বের বেড়াজালে আমি আমার অজান্তে দোষহীনভাবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৪৫দিন কারাবাস করি। কিন্তু সেই সময়ে কারাগারের ক্রিয়েটিভ কারাবন্ধিদের দ্বারা নির্মিত বা প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন সামগ্রী আমি আমার আত্মীয় ও প্রীয়জনদের উপহার দেয়। সেই সময় আমি শ্রদ্ধেয় জাহানারা হককেও একটি তাঁর নামে নামাঙ্কিত পার্স বা হাত ব্যাগ উপহার দেই। যা আমি ধন্য ও গর্বিত ঐ উপহারটি পৌঁছে দিতে পেরে। জনাব হক সাহেব এবং আমাদের মধ্যে রয়েছে আত্মার সম্পর্ক আর এই সম্পর্কে নেই কোন খোঁত ও চাওয়া পাওয়া। তবে দেয়ার আকাঙ্খা ও উদ্ধিপনায় আমি প্রতিনিয়ত নিয়োজিত। যেকোন সময় এবং যে কোন প্রয়োজনে আমি সবার আগে থাকার চেষ্টা করেছি এবং করে যাবো আমৃত্যূ। মহান রবের কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদের অবিসংবাদিত নেতা এবং অভিভাবকে সুস্থ্য রাখেন এবং দীর্ঘায়ূ দান করেন। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে জাতির সেবা করার সুযোগ শেষদিন পর্যন্ত চলমান রাখেন। বাংলাদেশের গর্ব ও আমাদের অহংকার চীরজীবি হউক এই কামনা করে আগামীতে আরো সময় নিয়ে বিশদ লিখার আশা রাখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.