পৃথিবীর সকল স্তরেই রয়েছে অস্থিতিশীল অবস্থার ছাপ। এই অস্থিতিশীলতার নৈরাজ্য এখন পুর্ণীমার চাঁদ, আমাবশ্যার চাঁদ’র ন্যায় গ্রাস করে বসে আছে পৃথিবীর সৌন্দয্যের উপর, মানবতার, ন্যায়-পরায়নতার উপর। শান্তি -শৃঙ্কলা, নিশ্চয়তা এবং নিরাপত্তা আজ ভু-লুন্ঠিত; আর এই কাজটুকুতে যারা মনযোগী সেই তারাওতো মানুষ। সৃষ্টির সেরাজীব আশরাফুল মাখলুকাতেরই একজন বা এক দল; যাদেরকে আমরা এলিট শ্রেণী বা ধনীক শ্রেণী হিসেবে চিনি অথবা শোষণ ও বঞ্চনাকারী হিসেবে চিনি। কিন্তু এই শ্রেণীদের দোষ একটাই আর তারা সেই শয়তানের প্রলোভনে সারা দিয়ে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে পৃথিবীকে বিষিয়ে তুলেছে। এইক্ষেত্রে শয়তানের প্ররোচনা এইরকম যে, যা হযরত ঈসাকে শয়তান করেছিল- “তখন ইবলিশ আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গেল এবং দুনিয়ার সমস্ত রাজ্য ও তাঁদের জাঁকজমক দেখিয়ে বলল, “তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে সেজদা কর তবে এই সবই আমি তোমাকে দেব”। হ্যাঁ দুনিয়াতে ঐ ধনিক/ এলিট শ্রেণীরা তাই করে যাচ্ছে। আর শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করে খোদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
ধন-সম্পদ এবং ক্ষমতারমোহে পৃথিবীর সকল মানুষ আজ অন্ধ। কিন্তু এই অন্ধত্বের ফসল হলো বিস্ফোরণ এবং অনাকাংখিত অশনি সংকেত। ধ্বংস, অশান্তি, দু:খ কষ্ট, অনিশ্চয়তা এবং ভয়। শ্রীলংকা, ইউক্রেইন এখন জলন্ত প্রমান কিন্তু এর বাইরেও এই দহন পিড়ীন অব্যাহত। ন্যাটো জোটে, ইউরোপিয়ান জোটে, এশিয়ান টাইগারদেরও জোট গঠনে সমস্যা হচ্ছে। চীন কেন্দ্রীক জটিলতায় এখন পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া এক সমস্যার নাম আর সেই নামের সাথে যুক্ত হচ্ছে দুই কোরীয়া। এই মেরুকরণের মাধ্যমেই অস্থিতিশীল এশিয়ার অশান্ত ঢেউ প্রবাহমান রয়েছে। তবে শৃলংকা -কে দেখে এখন সতর্ক হওয়ার সময়। নতুবা উত্তাল ঢেউ যে কোন মজবুত ভিত্তিকেও তছনছ করে দিতে পারে। বর্তমানের এশিয়ান ঢেউকে সামাল দিতে সকলকেই একযোগে কাজ করতে হবে তবে চীন এবং ইন্ডিয়াকেই ভুমিকা রাখতে হবে। তবে যদি হিসেবে ও দূরদর্শী চিন্তায় কোন প্রকার ভূল হয় তাহলে খেসারত দিতে হবে পুরো এশিয়ার।
পৃথিবীর এই যুদ্ধ ও অস্থিতিশীল পরিস্থীতির জন্য দৃশ্যমান দায়ী কারা? তা খুজে বের করা জরুরী। তবে এই ক্ষেত্রে আমরা বার বার দেখেছি আমেরীকার প্রেসিডেন্ট একটি ভুমিকা পালনকারী হিসেবে ইতিহাসে স্বীকৃত। ইরাক, ইরান, আফগান যুদ্ধ আর বর্তমান ইউক্রেইন যুদ্ধ এই একমাত্র আমেরীকার দ্বারাই সৃষ্ট তবে এর সঙ্গে যুক্ত আছে অন্যরাও। সেই থেকে নেটোভুক্ত দেশগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে অন্যায়ের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দাতা এমনকি তারা নিজেরাও অন্যায়কে ন্যায়ে রূপদান করতে বদ্ধ পরিকর। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এই আমেরীকার একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি তাঁর মেয়াদে বিশ্বকে যুদ্ধমুক্ত রেখেছিলেন এবং কারো বিষয়ে নাক না গলিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য, স্থিতিশীলতার জন্য, শান্তির জন্য নিরলস কাজ করেছেন। আর ঐ আমলে বিশ্ব ছিল শন্তিপূর্ণ সহবস্থানের আবরণে আবৃত। যদিও ঐ প্রেসিডেন্টকে অনেকেই অপছন্দ করেন। আর তিনি হলেন জনাব ট্রাম্প। তাঁর শালস আমল বিশ্লেষণ করুন। আসুন আমরা কি ঐ চিহ্নিত শয়তানদেরকে প্রতিহত করতে পারিনা এবং তাদেরকে সেজদা না করে বা বশ্যতা স্বীকার না করে বরং সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস ও আস্থা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারিনা? হ্যাঁ পারি আর ঐ পারাতেই অগ্রসর হতে হবে।
এই ক্ষেত্রে পারার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আল্লাহর জ্ঞানে জ্ঞানী হতে হবে। সৃষ্টিকর্তার কালামের আলোকে জীবন পরিচালিত হতে হবে। হযরত ঈসা আল মহিসের একটি শিক্ষা রয়েছে যাতে ইবলিশ পরাজিত হয়েছিল তা আজ আমাদের জিবনে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজে লাগতে পারে। “ইবলিশ ঈসাকে লোভ দেখিয়ে বলল, তুমি যদি ইবনুল্লাহ হও তবে এই পাথরগুলোকে রুটি হয়ে যেতে বলো। জবাবে হযরত ঈসা বললেন, পাক কিতাবে লেখা আছে, মানুষ কেবল রুটিতেই বাঁচে না, কিন্তু আল্লাহর মুখের প্রত্যেকটি কালামেই বাঁচে। তখন ইবলিশ ঈসাকে পবিত্র শহর জেরুজালেমে নিয়ে গেল এবং বায়তুল মোকাদ্দেসের চূড়ার উপর তাঁকে দাঁড় করিয়ে বলল, তুমি যদি ইবনুল্লাহ হও তবে লাফ দিয়ে নীচে পড়, কারন পাক কিতাবে লেখা আছে , আল্লাহ তাঁর ফেরেস্তাদের তোমার বিষয়ে হুকুম দেবেন, তাঁরা তোমাকে হাত দিয়ে ধরে ফেলবেন যাতে তোমার পায়ে পাথরের আঘাত না লাগে। ঈসা ইবলিসকে এই কথা বলল, আবার এই কথাও লিখা আছে তোমার মাবুদ আল্লাহকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না। তখন ইবলিশ আবার তাঁকে খুব উঁচু একটা পাহাড়ে নিয়ে গেল এবং দুনিয়ার সমস্ত রাজ্য ও তাঁদের জাঁকজমক দেখিয়ে বলল, তুমি যদি মাটিতে পড়ে আমাকে সেজদা কর তবে এই সবই আমি তোমাকে দেব। তখন ঈসা তাকে বললেন, দুর হও শয়তান। পাক কিতাবে লেখা আছে, তুমি তোমার মাবুদ আল্লাহকে ভয় করবে, কেবল তাঁরই এবাদত করবে। তখন ইবলিশ তাকে ছেড়ে চলে গেল আর ফেরেশতারা এসে তাঁর সেবা করতে লাগলেন।
আমাদের জীবনে এমন হাজারো, লাখো পরীক্ষা আসে এবং ঈমান ও আমল নিয়ে সামনে এগুতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় তখন এই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগিয়ে আমরা কি সামনে এগুতে পারিনা? বৈশি^ক এই অন্যায়ের, লোভের এবং ক্ষমতা ও ধন-সম্পদের মহামারীতে আমরা খোদায়ী মূল্যবোধ এবং খোদায়ী শিক্ষায় সকল কিছুকে মোকাবেলা করতে পারি না? হ্যাঁ পারি কারন অনেকেই পেরেছেন আর আমরাও পারব। যদি আমরা আখেরাতের ধন সম্পদ সঞ্চয়ের দিকে মনোযোগী হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তার কালামে এও বলেছেন তোমার ধন যেখানে থাকবে তোমার মনও সেখানেই থাকবে। আসুন আমরা বেহেস্তের ধন-সম্পদ সঞ্চয় করি এবং দুনিয়ার ধন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে বিলিয়ে দিই। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু সঞ্চয় না করি। লোভের বশে কিছু না করি। ক্ষমতার মোহে কিছু না করি। যখন যেই অবস্থায়ই থাকি না কেন আমরা যেন আল্লাহর বা সৃষ্টিকর্তার অভিপ্রায়ে এবং তাঁর কালামের আলোকে পথ চলি। দুনিয়ার এই সম্পদ ও ক্ষমতা কোনটাই আর শেষকালে সঙ্গে থাকে না বা কাজে লাগে না। শেষকালে শুধু কাফন কাপড় আর কবরের আঞ্জামগুলোই আপন হয়। তবে এই আঞ্জাম ধনী-গরীব সকলেরই সমান। আর গরীব বলে কেউ এই আঞ্জামের বাইরেও থাকেনা। তাই কেন নিজের ক্ষতি আমরা নিজেরাই করছি। জানি এই ক্ষতি শয়তান বা ইবলিশের প্ররোচনায় পড়েই করছি। যাতে খোদার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শাস্তির অধিনে থাকতে পারি। আসুন এখন সকল ছোট বড় ইবলিশকে দুর করি।
দেশের মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝখান থেকে সকল প্রকার ইবলিশীয় চক্রান্ত দূরীকরণে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য এবং সহযোগীতা আর কালামের ব্যবহার অত্যাবর্শকীয়। তাই আসুন আমরা ক্ষমতা ও ধন-সম্পদ কেন্দ্রীক চিন্তা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসি এবং নিজেদের আখেরাতের যোগানে মনযোগী হই। দুনিয়ার লোভ-লালসা, সম্পদ ও ক্ষমতা এবং জাঁকজমক দুনিয়াতেই থাকে এবং দুনিয়াতেই শেষ করে দিই। এই সকল থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করি। সকল নৈরাজ্যের মূলেই রয়েছে এইসকল তাই নৈরাজ্য থেকে বের হয়ে এসে শান্তির ছায়াতলে এবং ফেরেস্তাদের সেবা গ্রহণে মনযোগী হই। পৃথিবীতে যে কয়দিন বেঁচে থাকব সেই কয়দিন যেন ফেরেস্তাদের সেবা গ্রহণ করে যেতে পারি আর ইবলিশকে পরাভুত করে বা দুর করে শান্তি ও আনন্দ উপভোগ করে এবং করায়ে যেতে পারি সেই দিকে মনযোগী হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। বাংলাদেশকে রক্ষা করুন এবং এই দেশের মানুষকে হেফাজত করুন আর বিশ্বকে শান্তির ছায়াতলে আনয়নে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর সমাপ্তী টানতে উপকরণে পরিণত করুন। সকল অস্থিতিশীলতায়ও আশার আলো আছে। হতাশ হওয়ার কারণ নেই। তাই নিরাশ না হয়ে বরং আশা ও আকাঙ্খা নিয়ে সামনে এগিয়ে যান সৃষ্টিকর্তা আমাদের প্রত্যেককেই সফলতায় পৌঁছাবেন। শুধু তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হওয়া আমাদের দরকার। আমাদের মাবুদ মেহেরবান, কষ্টের সময়ের আশ্রয়স্থান। যারা তাঁর মধ্যে আশ্রয় নেয় তিনি তাদের দেখাশোনা করেন। এই নৈরাজ্যে সফল হওয়ার জন্য মাবুদের কালামই আমাদের পথ দেখাবেন। মনে রাখবেন তোমাদের জন্য আমার পরিকল্পনার কথা আমিই জানি, সেই পরিকল্পনা তোমাদের মঙ্গলের জন্য, ক্ষতির জন্য নয়, সেই পরিকল্পনার মধ্যেদিয়েই তোমাদের ভবিষ্যতের আশা পূর্ণ হবে। হ্যা আমরা সেই পরিকল্পনার মাধ্যমেই পৃথিবীর সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে সফলতায় পৌঁছাব… ইনশাআল্লাহ॥