প্রশান্তি ডেক্স: এবার প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে এনটিভির সাংবাদিক জাহিদুর রহমানকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ঢাকার সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব। এ সময় বাংলা ট্রিবিউনের নাদিম হোসেন ও দৈনিক যুগান্তরের মতিউর রহমানের নামও উল্লেখ করে তাদের প্রেস ক্লাব থেকে বহিষ্কার করতে নির্দেশ দেন তিনি। এর আগে অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় এক সাংবাদিককে হুমকি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এই উপজেলা চেয়ারম্যান।
এরই মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যানের এই হুমকির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে তিনি বলছেন, ‘সব জিনিসের তো প্রক্রিয়া লাগে না। প্রক্রিয়া আমিও বুঝি, আর কিছু জিনিস তো আমরা মাস্তানি কইরাই করি। তোমরা শুন, রেকর্ড করে নিয়ে যাও। জাহিদরে (সাংবাদিক) আমার ছেলেপেলে যেখানেই পাইবো, টান দিয়া ছিঁড়া ফালাইয়া দিবো। এইটা আমার প্রক্রিয়া।’ এ সময় রাজীব উপস্থিত সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে অশোভন ভাষায় বক্তব্য দেন।
গত মঙ্গলবার সাভার প্রেস ক্লাবের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কমপক্ষে ১০-১২ জন সাংবাদিকের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ কনফারেন্স রুমে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এদিকে, কয়েক মাস আগে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে সাভার প্রেস ক্লাবে পছন্দমাফিক নেতৃত্ব ঠিক করতে হামলা চালান উপজেলা চেয়ারম্যান। সে সময় সাভার মডেল কলেজ ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মীকে পাঠিয়ে অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে প্রেস ক্লাব দখল করে নেন তিনি। হামলাকারীরা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির ওনার বোর্ড ভেঙে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের পছন্দের কয়েকজন সদস্যের নামে একটি আহ্বায়ক কমিটির বোর্ড টাঙিয়ে দেন। একই সঙ্গে প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কার্যালয়ের ভবনের তালা ভেঙে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাবার নামে ‘ওয়াসিল উদ্দিন পাঠাগার’ সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তা দখল করে নেন। এ ছাড়াও নিজের প্রভাব খাটিয়ে স্থগিত করে রেখেছেন প্রেস ক্লাবের নির্বাচন।
এ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে প্রেস ক্লাবের সদস্যসহ উপজেলায় কর্মরত মূলধারার গণমাধ্যকর্মীদের মধ্যে। বিষয়টি সমাধানের জন্য গত মঙ্গলবার সাংবাদিকরা উপজেলা পরিষদে যান। আর তখনই এর সমাধানে কয়েকজন সাংবাদিককে বহিষ্কারের জন্য শর্ত দেওয়ার পাশাপাশি ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সময় উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক বলেন, ‘প্রকাশ্যে এভাবে সাংবাদিকদের হুমকি প্রদান করার ঘটনা দেশে বিরল। এতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এনটিভির বিশেষ প্রতিনিধি জাহিদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দৈনিক যুগান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক মতিউর রহমান ভান্ডারী বলেন, ‘নিন্দা জানানোর ভাষাটাও আসলে হারিয়ে ফেলছি। কীভাবে একজন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের এভাবে হুমকি দিতে পারেন? আমি পরিবার পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’