ভজন শংকর আর্চায্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ কসবায় পল্লী ফাউন্ডেশন নামের একটি নামধারী এনজিও ঋণ দেওয়ার নামে পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় অর্ধ কোটি সঞ্চয়ের নামে অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে রাতারাতি উধাও হয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গ্রাহকদের চাপে নিরুপায় হয়ে বাড়ির মালিক জেসমিন আক্তার কসবা থানায় একটি সাধারন ডাইরি করেছেন। তবে পুলিশ বলছেন প্রতারকচক্রের নাম ঠিকানা সঠিক না হওয়ায় মোবাইল ফোন নাম্বারের সূত্র ধরে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
সাধারন ডাইরি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে; পল্লী ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গত ১৩ জুন কসবা পৌর সদরের ইমামপাড়ায় জেসমিন আক্তারের বাড়িতে অফিস ভাড়া নেয়। অফিসটি ভাড়া নিয়ে পল্লী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রকল্পের নামে ঋণ প্রদানের জন্য কেন্দ্র খোলেন। পল্লী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের প্রতি লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য সঞ্চয়ের নামে ১০ হাজার টাকা করে নেয়। গ্রাহকদের ওরা পাশ বইও দেয়। গত ২৬ জুন থেকে তাদের ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ঋণ নিতে এসে গ্রাহকরা দেখতে পায় অফিসটি তালাবদ্ধ রয়েছে। এসময় গ্রাহকরা বুঝতে পারে ওরা প্রতারণার শিকার হয়েছে। পরদিন গত ২৭ জুন বিকেল পর্যন্ত শত শত গ্রাহক কর্মকর্তাদের অপেক্ষায় থাকে এবং আহাজারি করে।
গত ২৭ জুন সন্ধায় সরেজমিনে কসবা পৌর সদরের ইমামপাড়ায় জেসমিন আক্তারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়; ওই পল্লী ফাউন্ডেশনের অফিসে তালা ঝুলছে। এসময় প্রতারণার শিকার শতাধিক নারী পুরুষ ওই অফিসের সামনে ভিড় করে আহাজারি করতে দেখা যায়।
প্রতারণার শিকার উপজেলার মজলিশপুর গ্রামের সিএনজি চালক আবদুল কাদের (৬০) জানান, তার বাড়িতে ঋণ দেওয়ার নামে কেন্দ্র করে পল্লী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা। ওই গ্রামের ১১ জন গ্রাহকের নিকট থেকে ঋণ দেওয়ার নামে লক্ষাধীক টাকা সঞ্চয় নেয়।
উপজেলার চারুয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন, মজলিশপুর গ্রামের নয়ন মনি, কোনাঘাটা গ্রামের আবুল কালাম ,শাহ আলম ও রোকসানা জানান পল্লী ফাউন্ডেশনের লোকজন তাদেরকে প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা করে সঞ্চয় নিয়ে ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ থেকে সঞ্চয় গ্রহন করে।
গত রবিবার থেকে তাদেরকে ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। ঋণ নিতে এসে তারা দেখেন অফিসে তালা ঝুলছে । তারা পল্লী ফাউন্ডেশনের প্রতারকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দাবি জানান এবং তাদের টাকা ফেরত চান।
বাড়ির মালিক জেসমিন আক্তার জানান; গত ১৩ জুন আমার বাড়িতে এসে তিনটি কক্ষ ভাড়া নেয় পল্লী ফাউন্ডেশন। ৫ জন পুরুষ ও ৩জন নারী পল্লী ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে মাসিক ৫ হাজার টাকা ভাড়ায় তার নীচ তলার পূর্ব পাশের ৩ কক্ষ বিশিষ্ট ইউনিটটি ভাড়া নেন। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা বললে বলেছেন,যে সকলের পরিচয়পত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দিয়ে দিবে। আমি বাবার বাড়ি আখাউড়ায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এসে দেখি ওদের অফিসে তালা।
গ্রাহকদের কাছ থেকে শুনে বুঝতে পারি আমিসহ গ্রাহকরা প্রতারনার শিকার । জেসমিন গত ২৬ জুন কসবা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান। গত সোমবার ২৭ জুন কসবা সমাজ সেবা অফিসার রাজু আহমেদ জানান, পল্লী ফাউন্ডেশন নামের কোন সংগঠন সমাজসেবার নিবন্ধন নেয়নি।
কসবা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর ভুইয়া বলেন,এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
কসবা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুদ উল আলম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তবে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হতভাগ্য গ্রাহকগনকে কেউ সান্তনাও দেননি। নির্বাহী অফিসারও ঘটনাস্থলে যাননি।